থানার যাত্রায় ওসি নায়ক, নায়িকা মহিলা কনস্টেবল

দিন কুড়ির মহড়ায় যাত্রাটি মঞ্চস্থ করলেন পুলিশকর্মীরা। কিন্তু পুলিশকর্মীদের ২৪ ঘণ্টাই ‘ডিউটি’। এ কথা প্রচলিত এবং প্রায়ই দাবি করে থাকেন পুলিশকর্মীরাও। তাহলে যাত্রা করার সময় মিলল কোথায়?

Advertisement

শান্তনু বেরা

খেজুরি শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৮ ০২:২১
Share:

শনিবার পুলিশের যাত্রাপালা। নিজস্ব চিত্র

হঠাৎই বিপর্যয় নেমে এসেছিল গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারে। মেয়ে রজনী হারিয়ে গেল। আর তাতেই আতান্তরে পড়লেন ভূপতিনগরের সার্কল ইনস্পেক্টর দেবাশিস রায়।— বাস্তবের বিপদ নয়। যাত্রার বিপদ। খেজুরি থানার পুলিশকর্মীরা যাত্রা ‘নামিয়েছেন’। নাম ‘আমি রাতের রজনীগন্ধা’। এক গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারকে কেন্দ্র করে গল্প। যে পরিবারের নানা সমস্যার মাধ্যমে সামাজিক বার্তা দিতে চেয়েছেন পুলিশকর্মীরা। শনিবার ঠিক রাত ৮টায় খেজুরি থানা চত্বরে শুরু হয় যাত্রা।

Advertisement

দিন কুড়ির মহড়ায় যাত্রাটি মঞ্চস্থ করলেন পুলিশকর্মীরা। কিন্তু পুলিশকর্মীদের ২৪ ঘণ্টাই ‘ডিউটি’। এ কথা প্রচলিত এবং প্রায়ই দাবি করে থাকেন পুলিশকর্মীরাও। তাহলে যাত্রা করার সময় মিলল কোথায়? খেজুরি থানার ওসি শীর্ষেন্দু দাস জানালেন, কাজের ফাঁকেই হয়েছে মহড়া। সম্প্রতি খেজুরি থানা এলাকায় খুন হন একজন। যা নিয়ে এলাকায় যথেষ্ট উত্তেজনা ছিল। তা ছাড়াও উৎসবের মরসুমের নানা ঝক্কিও পোহাতে হয়েছে। তার মধ্যেই মহড়া চলেছে। অনেক সময়ে আসতে পারেননি কেউ কেউ। যে ক’জন যোগ দিতে পেরেছেন তাঁদের নিয়েই হয়েছে মহড়া।

জনসংযোগ বাড়াতে পুলিশ ফুটবল খেলার আয়োজন করে, রক্তদান শিবির করে। কিন্তু যাত্রা কেন? ওসি শীর্ষেন্দু দাস বললেন, ‘‘এ-ও এক ধরনের জনসংযোগ। সেই সঙ্গে সামাজিক বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। গাঙ্গুলি পরিবারের সদস্যদের নানা সমস্যা তুলে ধরার মধ্যেই নারী পাচার, পণপ্রথার কুফল, বেকার যুবকের নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়া এবং কুপথে যাওয়ার বিপদ নিয়ে বার্তা দেওয়া হয়েছে।’’ যাত্রার নির্দেশনা ও প্রযোজনায় ওসি নিজেই। তিনি অভিনয়ও করছেন নায়কের ভূমিকায়। সহ-নির্দেশনায় সার্কল ইনস্পেক্টর, ভূপতিনগর দেবাশিস রায়। গাঙ্গুলি পরিবারের কর্তা সত্যব্রত গঙ্গোপাধ্যায়ের ভূমিকাভিনেতা। এ ছাড়াও হেঁড়িয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাব ইন্সপেক্টর অভিজিৎ পাত্র পুলিশের ভূমিকাতেই অভিনয় করছেন। খেজুরি থানার পুলিশকর্মী সোমনাথ শীট অবাঙালি চরিত্রে অভিনয় করছেন। যাত্রায় মোট চারটি মহিলা চরিত্র। সত্যব্রতের মেয়ে রজনীই যাত্রার নায়িকা। এই চরিত্রে অভিনয় করছেন খেজুরি থানার মহিলা কনস্টেবল সুপর্ণা রায়। সহ-নায়িকা মহিলা কনস্টেবল সঞ্চিতা নন্দ। আরেক কনস্টেবল সুনন্দা পণ্ডা সিবিআই অফিসারের ভূমিকায়। খলনায়িকা হন খেজুরি থানার মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ার দীপালি কান্ডার।

Advertisement

অভিনয়েই শুধু পুলিশকর্মীরা। বাকি আলো, মঞ্চ, বাজনাদার সবই বাইরে থেকে আনা হয়েছে। যাত্রা দেখতে এসেছেন ‘হেভিওয়েট’ দর্শকেরা। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু, কাঁথির এসডিপিও পার্থ ঘোষ, সার্কল ইন্সপেক্টর এগরা, তাপস পাল এবং কাঁথি মহিলা থানার ওসি মৌসুমি সর্দার। যাত্রা দেখতে এসেছিলেন খেজুরি আদর্শ বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক বিদ্যুৎকুমার দাস এবং নিজ কসবা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সমুদ্ভব দাস। তাঁরা আয়োজন এবং যাত্রার বার্তায় মুগ্ধ। বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে পুলিশেরা অভিনয় করে দেখালে লোকের মনে বেশি করে প্রভাব ফেলবে বলে মত তাঁদের।

দারোগা যাত্রায় মেতে।দুষ্কৃতীরা যদি ভেবে থাকে তাদের পোয়াবারো, তা হলে কপালে দুঃখ রয়েছে তাদের। যাত্রা না দেখে থানা সামলাচ্ছেন সাব ইনস্পেক্টর জয়গোপাল বারুই এবং সম্প্রদায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন