হোটেল ম্যানেজার হত্যায় ধৃত আরও এক

খুনের আগে বন্ধ করা হয় সিসি ক্যামেরা

কাঁথির ব্রজলালচক রানিবসান সেতুর কাছে সাতমাইল খাল থেকে বৃহস্পতিবার সকালে এক ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার হয়। গোড়ায় তাঁর পরিচয় জানা যায়নি। তবে মৃতের গলায় আঘাতের চিহ্ন দেখে সন্দেহ হয় তদন্তকারীদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাঁথি শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৪০
Share:

আদালতে তোলা হচ্ছে দুই ধৃতকে। নিজস্ব চিত্র

মন্দারমণিতে হোটেল ম্যানেজার খুনের ঘটনায় আরও একজনকে গ্রেফতার করল কাঁথি থানার পুলিশ। ধৃত শেখ নাসিম ওরফে টিঙ্কু কালিন্দীর বাসিন্দা। সে এই খুনের ঘটনায় ধৃত মূল অভিযুক্ত রেহানউল্লার গাড়ির চালক। শুক্রবার রাতে তার বাড়ি থেকেই নাসিমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। হোটেল ম্যানেজার দেবাশিস ঘোষ মজুমদারকে খুনের পরে গাড়িতে দেহ নিয়ে গিয়ে কাঁথির সাতমাইল খালে ফেলার কাজে রেহানউল্লাকে সহযোগিতা করার অভিযোগেই নাসিমকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ধৃত রেহানউল্লা ও নাসিমকে শনিবার কাঁথি আদালতে হাজির করা হয়েছিল। দু’জনকেই ৭ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। আর শুক্রবার রাতেই কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পরে দেবাশিসবাবুর দেহ তুলে দেওয়া হয়েছে তাঁর আত্মীয়দের হাতে।

Advertisement

কাঁথির ব্রজলালচক রানিবসান সেতুর কাছে সাতমাইল খাল থেকে বৃহস্পতিবার সকালে এক ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার হয়। গোড়ায় তাঁর পরিচয় জানা যায়নি। তবে মৃতের গলায় আঘাতের চিহ্ন দেখে সন্দেহ হয় তদন্তকারীদের। কাঁথি থানার পুলিশ সুয়োমোটো খুনের মামলা দায়ের করে তদন্তে নামে। মৃতের পরিচয় জানতে কাঁথি ও এগরা মহকুমার সব থানায় তার ছবি পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধেয় সেই ছবি দেখে চিনতে পারেন মন্দারমণি থানার ওসি রাজকুমার দেবনাথ। তিনিই কাঁথি থানাকে জানান, মৃতের নাম দেবাশিস ঘোষ মজুমদার। তিনি মন্দারমণির এক হোটেলের ম্যানেজার ছিলেন। বাড়ি উত্তর ২৪ গরগনার নৈহাটির মিত্রপাড়ায়।

এরপর তদন্তে নেমে রেহানউল্লাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, টাকার গরমিলের জন্যই দেবাশিসবাবুর সঙ্গে রেহানউল্লার বিবাদ বেধেছিল। টাকার গরমিলের কথা হোটেল মালিকদেরও জানিয়েলেন ম্যানেজার দেবাশিসবাবু। এ নিয়ে ৩০ নভেম্বর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে রেহানউল্লাকে জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তা নিয়েই দু’জনের গোলমাল বাধে। পুলিশ জানিয়েছে, খুনের রাতে ১১টা ৩ মিনিটে হোটেলের সিসিটিভি ক্যামেরায় শেষবার দেবাশিসবাবুকে দেখা গিয়েছে। তারপর ক্যামেরা বন্ধ ছিল। পুলিশের অনুমান, খুনের ঘটনার ছবি যাতে না ওঠে, সে জন্য রেহানউল্লাই সিসি ক্যামেরা বন্ধ করে দিয়েছিল।

Advertisement

তদন্তে পুলিশ জেনেছে, মাস ছয়েক আগে মন্দারমণির এই হোটেলের পানশালার ম্যানেজার হিসেবে কাজে যোগ দিয়েছিল রেহানউল্লা। তবে এ ক’মাসেই তার জীবনযাত্রা আমূল বদলে গিয়েছিল। মাস তিনেক আগে এককালীন তিন লক্ষ টাকা দিয়ে একটি দামি গাড়ি ‘বুক’ করে সে। বুধবার রাতে দেবাশিসবাবুকে খুনের পরে ওই গাড়িতেই দেহ নিয়ে গিয়ে খালে ফেলা হয়।

গাড়ির চালক নাসিমকে গ্রেফতারের আগে কাঁথি থানার পুলিশ শুক্রবার বিকেলে রেহানউল্লাকে নিয়ে মন্দারমণির হোটেল নিয়ে গোটা ঘটনার পুনর্নির্মাণও করেছে। জানা গিয়েছে, ঘটনার রাতে বারোটা নাগাদ নাসিমকে কালিন্দী থেকে মন্দারমণির হোটেলে গাড়ি আনতে বলে রেহানউল্লা। জানায়, ভাড়া নিয়ে যেতে হবে। সেই মতো গাড়ি নিয়ে হোটেলের সামনে অপেক্ষা করে নাসিম। রাত দুটো নাগাদ ১০৪ নম্বর ঘরে নাসিমকে ডেকে পাঠায় রেহানউল্লা। নাসিম গিয়ে দেখে, দেবাশিসবাবুর মৃতদেহ বিছানার চাদরে মুড়তে শুরু করেছে রেহানউল্লা। পুলিশকে নাসিম জানিয়েছে, তখন সে ভয় পেয়ে গেলে রেহানউল্লা ধমক দেয়। তারপর চাদরে মোড়া দেহ ধরতে বলে। তারপর দু’জনে গাড়িতে চাপিয়ে দেহ নিয়ে গিয়ে ফেলে প্রায় তিরিশ কিলোমিটার দূরে সাতমাইলের খালে। গোটা রাস্তা নাসিমই গাড়ি চালিয়েছিল।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, দেবাশিসবাবুর একটি ব্যাগ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাতে ওঁর মোবাইল, জুতো-সহ কিছু জিনিসপত্র রয়েছে। রেহানউল্লা পুলিশকে জানিয়েছে, মৃতদেহ খালে ফেলার সময় ওই ব্যাগও ফেলে দিয়েছিল তারা। তবে খালে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ কিছু পায়নি। পুলিশ আরও জানিয়েছে, রেহানউল্লাকে গ্রেফতারের সময় নগদ ১ লক্ষ ৯৭ হাজার টাকা উদ্ধার হয়েছে। সেই টাকা কোথা থেকে এল, তাও তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন