Duare Doctor

‘দুয়ারে ডাক্তার’ ঘিরে কি ভোট অঙ্কের খোঁজ

স্থানীয়দের অভিযোগ, কেশিয়াড়িতে এমন একটি কর্মসূচি হতে চলেছে এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত প্রচার করা হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কেশিয়াড়ি শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৮:২৫
Share:

রোগী দেখছেন চিকিৎসকেরা। ছবি: বিশ্বসিন্ধু দে

পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়ির রাজনৈতিক সমীকরণ কার্যত উস্কে দিয়েই শুরু হল ‘দুয়ারে ডাক্তার’ কর্মসূচি। প্রশাসনের দাবি, কেশিয়াড়ির মানুষকে ‘উন্নত’ চিকিৎসা পরিষেবা দিতেই এমন পদক্ষেপ। কিন্তু এমন কর্মসূচির পিছনে ভোট-ব্যাঙ্কের জটিল অঙ্ক খুঁজছেন বিরোধীরা।

Advertisement

কেশিয়াড়ি থেকে কম-বেশি ৩৫ থেকে ৬০ কিলোমিটারের মধ্যেই অবস্থিত পশ্চিম মেদিনীপুরে তিনটি নামী হাসপাতাল (মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, ডেবরা সুপার স্পেশালিটি এবং খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল)। সে ক্ষেত্রে ‘দুয়ারে ডাক্তার’এর পাইলট প্রজেক্ট শুরু করতে কেশিয়াড়িই কেন রাজ্যের প্রথম পছন্দ— প্রশ্নটা বিরোধীদের। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘চিকিৎসকদেরও ভোটের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।’’ যদিও জেলাশাসক আয়েষা রানি বলছেন, ‘‘রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল হল কলকাতার এসএসকেএম। সেখানকার পরিষেবা এলাকার মানুষকে দিতেই এমন উদ্যোগ।’’

স্থানীয়দের অভিযোগ, কেশিয়াড়িতে এমন একটি কর্মসূচি হতে চলেছে এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত প্রচার করা হয়নি। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছিল, ‘ক্রনিক ডিজ়িজ়’ যাঁদের রয়েছে, প্রাথমিক ভাবে তাঁরাই এই শিবিরে আসার সুবিধা পাবেন। তবে বুধবার কর্মসূচি শুরুর পর দেখা গেল, চিকিৎসকেরা ওষুধ লিখে প্রেসক্রিপশন দিলেও, ভবিষ্যৎ চিকিৎসার (ফলোআপ ট্রিটমেন্ট) কোনও রূপরেখা তাঁরা দেননি। শিবিরের চিকিৎসককে দেখিয়ে বেরিয়ে এসে প্রবীর দাসের অভিযোগ, ‘‘কেশিয়াড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে যা পরিষেবা পাওয়া যায়, দুয়ারে ডাক্তারেও একই চিকিৎসা মেলে। ফলোআপ হবে কী করে, জানতেই পারলাম না।’’ যদিও জানা যাচ্ছে— শিবিরে‌ যাঁরা আসছেন তাঁদের নাম-ঠিকানা-ফোন নম্বর কম্পিউটারে নথিভুক্ত করা হয়েছে। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী বলেন, ‘‘যাঁদের চেকআপ কিংবা অপারেশন প্রয়োজন হবে, তাঁদের সরকারি ব্যবস্থাপনায় পিজি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে।’’

Advertisement

আদতে আদিবাসী অধ্যুষিত ব্লক কেশিয়াড়ি। প্রশাসন জানিয়েছিল, এলাকার প্রান্তিক মানুষদের কাছে এসএসকেএমের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরিষেবা পৌঁছে দিতেই এমন উদ্যোগ। কিন্তু শিবিরের মতি-গতি দেখে স্থানীয়দের একাংশই বলছেন ‘ফাঁপা কর্মসূচি’! বুধবার সকাল দশটা নাগাদ শুধু হয় শিবির। কেশিয়াড়ি রবীন্দ্র ভবনে হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। ছিলেন জেলাশাসক আয়েষা রানি, জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী, জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের আধিকারিক বরুণ মণ্ডল প্রমুখ। খাজরা সতীশচন্দ্র মেমোরিয়াল হাইস্কুলেও হয়েছে কর্মসূচি। দু’দিনে প্রায় ১৩০০ মানুষকে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হবে। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী বলেন, ‘‘চিকিৎসকের পরামর্শের পাশাপাশি ওষুধ, ইসিজি, রক্তপরীক্ষার মতো ব্যবস্থাও রয়েছে।’’ প্রায় ৪০ জনের একটি দল এসেছে এলাকায়। দু’টি কেন্দ্রে সিনিয়র চিকিৎসক, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, নার্স, টেকনিশিয়ান-সহ ১৮ জনের এক একটি দল কেন্দ্রের দায়িত্বে ছিল। কেশিয়াড়ির বাসিন্দা পবিত্র শীটের অভিযোগ, ‘‘শিবিরে বয়স্ক ডাক্তার কাউকে দেখতে পেলাম না। কেশিয়াড়ি হাসপাতালে ডাক্তার দেখিয়ে যা ওষুধ পাই, একই ওষুধ পেলাম।’’ আবার অনেক রোগীর প্রেসক্রিপশনে অমিল হাসপাতালের চিকিৎসকের স্ট্যাম্পও। বোঝা দুষ্কর চিকিৎসকের নামও।

গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে পদ্ম ফুটেছিল কেশিয়াড়িতে। সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করেছিল বিজেপি। মাঝে তৃণমূলের দ্বন্দ্বে পঞ্চায়েত সমিতি এখনও গঠন হয়নি। কেশিয়াড়িতে বিজেপির শক্ত ঘাঁটি ভাঙতেই এই পদক্ষেপ। বিজেপির পশ্চিম মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক গৌরীশঙ্কর অধিকারী বলেন, ‘‘ভোটটাই এদের কাছে মূল লক্ষ্য। এক-দু’দিনে মানুষের কোনও উপকার হবে না। ভোটের কথা ভেবে এই সব কর্মসূচি।’’ তবে বিরোধীদের এই অভিযোগের পাল্টা জবাবে কেশিয়াড়ির বিধায়ক পরেশ মুর্মু বলেন, ‘‘মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রেও বিরোধীদের এমন মন্তব্য মানা যায় না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন