ঝুঁকির-যাত্রা: অটোর মাথায় যাত্রী। পাশেও ঝুলছেন অনেকে। মেদিনীপুর সদর ব্লকের পাঁচখুরিতে। নিজস্ব চিত্র
চালকের দু’পাশে দুজন, পেছনের তিন দিকের আসনে বসে আটজন। আর পাশে ঝুলে আরও চারজন। মফস্সল থেকে গাঁ-গঞ্জ, অটোতে এমন অতিরিক্ত যাত্রী তোলার ছবি বড্ড চেনা। কিন্তু অটোর ছাদে চেপেও ৪-৫ জন যাত্রী যাচ্ছেন। প্রাণ হাতে যাতায়াতের এই ছবি মেদিনীপুর সদর ব্লকের পাঁচখুরি থেকে পাচরা ও পালজাগুল রুটে রোজই চোখে পড়ে। হাটবার বা উৎসবের দিনগুলিতে অটোতে বাড়তি যাত্রী পরিবহণের মাত্রা আরও বাড়ে।
মেদিনীপুর-খড়্গপুর দুই শহরেই অটো দৌরাত্ম্য রয়েছে। মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনাও ঘটে। দু’দিন আগে শালবনির ভাদুতলায় দশ চাকার লরির ধাক্কায় যে অটোটি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল, তাতেও সওয়ার ছিল বারোজন স্কুল পড়ুয়া। ওই দুর্ঘটনায় দু’জন স্কুল পড়ুয়ার মৃত্যু পর্যন্ত হয়। প্রশাসনের নজরদারির অভাবেই অটোর অনিয়ম বাড়ছে বলে অভিযোগ। সে কথা মানছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলা পরিবহণ আধিকারিক অমিত দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘কর্মী সংখ্যা কম থাকায় নজরদারির অভাব রয়েছে।’’ তবে পাঁচখুরিতে অটোর মাথায় যাত্রী তোলার কথা মানতে নারাজ এই পরিবহণ কর্তা। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের কাছে এ রকম কোনও খবর নেই।’’
পাঁচখুরি থেকে মাত্র ১০ মিনিট অন্তর পাচরা ও পালজাগুল রুটের আটো ছাড়ে। তাও কেন নিয়ম ভেঙে যাত্রী তোলা হচ্ছে?
এ ক্ষেত্রে অটো ইউনিয়ন এবং যাত্রীরা পরস্পরের ঘাড়ে দায় চাপাচ্ছে। পাঁচখুরি অটো ইউনিয়নের সভাপতি বিনন্দ সাউয়ের দাবি, মাস কয়েক আগে ইউনিয়ন থেকে অটো চালকদের বলা হয়েছিল, যতজনের আসন রয়েছে, তার বেশি যাত্রী তোলা যাবে না। তাও যাত্রীরাই জোর করে অটোতে উঠে পড়ছেন। বিনন্দবাবুর কথায়, ‘‘অটো চালকদের কথা অমান্য করেই যাত্রীরা ছাদে চড়ছেন, দু’পাশে ঝুলে যাচ্ছেন। বারণ করলে অশান্তি করছেন। বাধ্য হয়েই আমরা হাত গুটিয়ে নিয়েছি।’’
পাঁচখুরিতে আটোর ছাদে বসেছিলেন স্থানীয় উদয়পুরের বাসিন্দা সমর দোলই। বললেন, ‘‘ভেতরে জায়গা ছিল না, তাই ছাদে চড়ে যাচ্ছি।’’ কিন্তু ১০ মিনিট পরেই তো আবার অটো ছাড়বে। অপেক্ষা করলেন না কেন? এ বার সমরবাবুর জবাব, ‘‘বাড়ি অনেক দূরে। পরের অটো ধরলে পৌঁছতে দেরি হয়ে যাবে। তাই ছাদে চড়ে যাচ্ছি।’’ চালকের পাশে বসে থাকা বাজপাড়ার সাগের আলি আবার যোগ করলেন, ‘‘বাড়ির লোকেরা একসঙ্গে যাব বলে ড্রাইভারের পাশে বসি, কখনও ঝুলে যাই, না হলে ছাদে উঠে পড়ি।’’ যা শুনে অটো চালক বাবু ঘোষের মন্তব্য, ‘‘পাবলিক কথা না শুনলে কী করব বলুন তো!’’ পাচরা রুটের আর এক অটো মালিক শেখ আলফাউদ্দিনও বলেন, ‘‘রুটে সব দিন সব অটো থাকে না। তাই বিপদ জেনেও যাত্রীদের কথা মেনে নিতে হয়।’’
শুধু সদর ব্লকের পাঁচখুরি নয়, আমলতা থেকে হাতিহল্কা হয়ে পাথরা যাওয়ার রুটেও অটোতে বাদুড় ঝোলা ভিড় চোখে পড়ে। মেদিনীপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে নয়াগ্রাম হয়ে কলসিভাঙা যাওয়ার রুটেও এই ছবি। নিয়ম ভেঙে কী করে ১৪-১৫ জন যাত্রী তুলছে অটোগুলি? জেলার অতিরিক্ত পরিবহণ আধিকারিক অমিতবাবুর ব্যাখ্যা, অটোগুলি যখন পরীক্ষার জন্য আসে, তখন নিয়মমাফিক নির্দিষ্ট সংখ্যক আসনই থাকে। ফলে, অনিয়ম ধরা যায় না।
নিয়মের এই ফাঁক গলে আর প্রশাসনের নজরদারির অভাবেই ঝুঁকির যাত্রা চলছে অটোয়। ঘটছে বিপদ।