বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন আশি ছুঁইছুঁই কাননবালা দে। চিকিত্সকের পরামর্শ মতো মাস খানেক আগে তাঁকে ভর্তি করানো হয় বটতলাচকের এক নার্সিংহোমে। পরে বাড়িতেই মারা যান বৃদ্ধা। তবে ছ’দিনে নার্সিংহোমের বিল ছোঁয় ৪২ হাজার টাকা। টাকা মেটাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় বৃদ্ধার ছেলে পেশায় প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক সাধন দে-কে। তিনি বলছিলেন, “কত রকমের চার্জ। আইসিইউ-র ভাড়াই তো দিনে ৪ হাজার। সবই যেন ব্যবসা।’’
ভাঙা পা নিয়ে বিক্রমজিৎ ঠাকুর ভর্তি হয়েছিলেন মেদিনীপুরের কেরানিতলার নার্সিংহোমে। মেদিনীপুরের মহাতাবপুরের বাসিন্দা পেশায় দিনমজুর বিক্রমজিতের অভিজ্ঞতাও তিক্ত। স্বাস্থ্যবিমার কার্ড থেকে ১৮ হাজার টাকা তুলে নিয়েও বিক্রমজিতের অস্ত্রোপচারই করেনি ওই নার্সিংহোম। দিনে মেরেকেটে ১৫০ টাকা আয় করা এই দিনমজুরের কথায়, ‘‘ভর্তির চার দিন পরেও অস্ত্রোপচার করেনি। বিল বাড়ছিল। পরে অন্য নার্সিংহোমে যাই।” সেখানেই ওই ১৮ হাজার টাকা তুলে নেওয়ার কথা জানতে পারেন বিক্রমজিৎ। পরে অভিযোগ জানানোয় অবশ্য টাকা ফেরত পাওয়া গিয়েছে।
খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া বার্তার পরে মেদিনীপুর শহরের নার্সিংহোমগুলি পরিদর্শন শুরু করেছেন জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা। হাতেনাতে অনিয়মও ধরা পড়ছে। হচ্ছে শো-কজ, এমনকী লাইসেন্স বাতিলও। তারপরেও অবশ্য জেলার সদর শহরের নার্সিংহোমগুলিতে হয়রানির অভিযোগ উঠছেই। পালবাড়ির বাসিন্দা কাজল কর্মকার বলছিলেন, “ভর্তির পরই একের পর এক পরীক্ষা করাতে বলা হয়। চড়চড় করে বিল বাড়ে। চিকিত্সার জন্য ঘটি-বাটি বেচার অবস্থা হয়েছিল।’’ দিন গুজরানে কাজলদেবীর ভরসা মাসে ৬০০ টাকা বিধবা ভাতা।
বাড়তি ফি নেওয়ার অভিযোগ মানতে নারাজ নার্সিংহোম মালিকরা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা নার্সিংহোম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কালীপদ জানা বলেন, ‘‘বড় নার্সিংহোমের চার্জ একটু বেশি। ছোট নার্সিংহোমে কম। তবে কখনও রোগীর থেকে বাড়তি ফি নেওয়া হয় না।”
নিয়মমতো নার্সিংহোমে বছরে একবার স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধি দলের পরিদর্শন হওয়ার কথা। কিন্তু জেলার অধিকাংশ নার্সিংহোমে তা হয় না। নজরদারির অভাবেই দৌরাত্ম্য চলে বলে অভিযোগ। নার্সিংহোমগুলোয় যে নিয়মিত পরিদর্শন হয় না তা ঘুরিয়ে মানছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা। তাঁর কথায়, “খামতির অভিযোগ এলে খতিয়ে দেখা হয়। পরিদর্শন হয়।’’