দুর্ভোগ: লিফ্ট অচল। তাই স্ট্রেচারে রোগী নিয়ে ভাঙতে হচ্ছে সিঁড়ি। রবিবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
রবিবার সকালে আচমকা মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলেন সঙ্গীতা মাইতি। সঙ্গীতাদেবীর বাড়ি মেদিনীপুর শহরে। পরিজনেরা তড়িঘড়ি তাঁকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। কিন্তু সেখানে আবার অন্য দুর্ভোগ। কারণ, লিফ্ট বিকল।
সঙ্গীতাদেবীর স্বামী গোপাল মাইতি বলছিলেন, “স্ত্রী নতুন ভবনের তিনতলার ওয়ার্ডে রয়েছে। স্ট্রেচারে করে সিঁড়ি ভেঙে ওকে সেখানে নিয়ে যেতে হয়েছে। পরে সিটি স্ক্যান করানোর জন্য একই ভাবে সিঁড়ি ভেঙে ওঠা-নামা করতে হচ্ছে।”
একই রকম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন বেনাশুলির মানিক চালক। মানিকবাবুর পরিচিত রাধা কোটাল গুরুতর অসুস্থ হয়ে এ দিন মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছেন। মানিকবাবুর কথায়, “ওকে তিনতলায় রেখেছে। বারবার এতগুলো সিঁড়ি ভেঙে ওঠা-নামা করাটা সম্ভব হচ্ছে না।।”
শনিবার সন্ধে থেকে কাজ করছে না মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবনের লিফ্ট। ফলে, দুর্ভোগে পড়েছেন রোগী এবং রোগীর পরিজনেরা। সকলকেই সিঁড়ি ভেঙে ওঠা-নামা করতে হচ্ছে। সমস্যার কথা মানছেন হাসপাতাল সুপার তন্ময়কান্তি পাঁজা। তিনি বলেন, “নতুন ভবনের লিফ্টি বিকল হয়ে অনেকের সমস্যা হচ্ছে। ওটি দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
মেডিক্যালের নতুন ভবনে দু’টি লিফ্ট রয়েছে। একটি বড়, অন্যটি ছোট। বড় লিফ্টে মূলত রোগীরাই ওঠা-নামা করেন। সেটিই বিকল হয়ে যাওয়ার চূড়ান্ত দুর্ভোগে পড়ছে রোগীরা। এ দিন বহু রোগীকে পাঁজাকোলা করে সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করতে দেখা যায় পরিজনেদের। স্ট্রেচারে শুইয়ে রোগীকে আনার ক্ষেত্রেও ভরসা ছিল সিঁড়িই।
এই প্রথম নয়, মাস কয়েক আগেও বড় লিফ্টি একবার বিকল হয়ে গিয়েছিল। তখনও ভোগান্তির অন্ত ছিল না। অঞ্জু পাত্র, বিমল নন্দের মতো রোগীর পরিজনরা বলছিলেন, “মাঝেমধ্যেই হাসপাতালের এই লিফ্ট খারাপ হয়ে যায়। সঠিক ভাবে দেখভাল না করার জন্যই হয়তো এই পরিস্থিতি।” হাসপাতাল কর্তাদের অবশ্য দাবি, লিফ্টের যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণই করা হয়। দিনে প্রচুর রোগী ওই লিফ্ট দিয়ে ওঠানামা করেন। তাই তা বিকল হতেই পারে। হাসপাতালের এক কর্তার কথায়, “সারা দিনই লিফ্ট চলে। হঠাৎ করে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে তো আর কারও কিছু করার থাকে না।”
মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি রোগীদের একটা বড় অংশই থাকেন নতুন ভবনে। চারতলা এই ভবনে সব মিলিয়ে ছটি ওয়ার্ড। একতলায় বহির্বিভাগ, প্যাথলজি সেন্টার। দোতলায় ব্লাড ব্যাঙ্ক, দু’টি মেডিসিন ওয়ার্ড। তিনতলায় আরও দু’টি মেডিসিন ওয়ার্ড। চারতলায় ইএনটি এবং আই ওয়ার্ড। এক-একটি ওয়ার্ডে ৫০-৬০ জন রোগী থাকেন। লিফ্ট বিকল হওয়ায় অনেকেই ভোগান্তিতে পড়েছেন। হাসপাতাল সুপার তন্ময়বাবু বলেন, “যে কর্মীরা লিফ্ট সারান, তাঁরা কলকাতার। তাই একটু সময় লাগছে।’’