বছর ঘুরে বাঘ খুনের ভুল কবুল

২০১৮ সালের ১৩ এপ্রিল ‘শিকার উৎসব’ ছিল চাঁদড়ার বাগঘোরার জঙ্গলে। বছর ঘুরেছে। সে দিন বাঘ খুনের ঘটনায় এখন অনেকটাই অনুতপ্ত চাঁদড়ার এই তল্লাট।

Advertisement

বরুণ দে

চাঁদড়া শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৩০
Share:

মিলিয়ে যায়নি ক্ষত। বাগঘোরার জঙ্গলে বাদল হাঁসদা। শুক্রবার। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

শুনশান জঙ্গলের বুক চিরে চলে গিয়েছে মোরাম রাস্তাটা। শাল-মহুয়ার জঙ্গল। ঠিক এক বছর আগে, বাগঘোরার এই জঙ্গলেই ‘খুন’ হয়েছিল রয়্যাল বেঙ্গল। একদল শিকারির ছোড়া বল্লমে ক্ষতবিক্ষত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিল ‘ভিন্‌ দেশে’ আসা ডোরাকাটা।

Advertisement

২০১৮ সালের ১৩ এপ্রিল ‘শিকার উৎসব’ ছিল চাঁদড়ার বাগঘোরার জঙ্গলে। বছর ঘুরেছে। সে দিন বাঘ খুনের ঘটনায় এখন অনেকটাই অনুতপ্ত চাঁদড়ার এই তল্লাট। সে দিন গ্রামের যে সব যুবক গলা তুলে বলেছিলেন, ‘বাগঘোরাই পেরেছে বাঘটাকে মারতে’, আজ তাঁরাই ‘ভুল’ স্বীকার করছেন। বলছেন, ‘‘বাঘটা নিজে থেকে কারও ক্ষতি করেনি। ওকে ও ভাবে মারা ঠিক হয়নি!’’

সুর বদলেছে গোটা তল্লাটেই। জঙ্গল থেকে শালপাতা কুড়িয়ে ফিরছিলেন দুই গৃহবধূ। তিলোত্তমা মাহাতো, কাজলরানি মাহাতো। তিলোত্তমা বলছিলেন, ‘‘বাঘটা এখানে মারা গিয়েছে। হয়তো ভুল করেই কেউ মেরে ফেলেছে। একই ভুল আর হবে না।’’ কাজলরানির কথায়, ‘‘জঙ্গলে হাতি যেমন থাকে, বাঘও তেমন থাকবে ওই একবারই যা হওয়ার হয়েছে। আর কথায় কথায় বাঘ মারা যাবে না এখানে!’’

Advertisement

যে দিন ডোরাকাটা খুন হয়েছিল, সে দিনই তার নখের আঁচড়ে জখম হয়েছিলেন দু’জন। খুনের ঘটনার ঘন্টা খানেক আগে জখম বাবলু হাঁসদা এবং বাদল হাঁসদাকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি করাতে হয়েছিল। শুক্রবার দুপুরে বাবলুর দেখা মিলল না, কাজের জন্য বাইরে গিয়েছিলেন তিনি। বাড়িতে ছিলেন তাঁর স্ত্রী লক্ষ্মীমণি হাঁসদা। লক্ষ্মী বলছিলেন, ‘‘বাঘটা যখন জঙ্গলে ছিল, তখন একটা ভয় ছিল। সেই ভয়টা এখন আর নেই। তবে বাঘটা নিজে থেকে কাউকে মারতে যায়নি। ও মানুষখেকো ছিল না।’’ জঙ্গলে কাঠ কাটতে গিয়েছিলেন বাদল। বাদলের কথায়, ‘‘আমরা সে দিন খালের উপর দিয়ে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকছিলাম। তখনই বাঘটা হামলা করে। সামনে কয়েকটা কুকুর ছিল। বাঘটা মনে হয় কুকুরগুলোকেই তাড়া করছিল।’’

বাঘ ‘খুনে’ কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। অজ্ঞাতপরিচয় একদল লোকের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেই তদন্ত শুরু হয়েছিল। তবে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে মানুষকে বোঝানোর কাজ শুরু করেছিল বন দফতর। শিকার ঠেকাতে সেই আর্জি-অভিযান এখনও চলছে।

রাজ্যের মুখ্য বনপাল (পশ্চিমাঞ্চল) শক্তিশঙ্কর দে বলছেন, ‘‘এই সময়ের মধ্যে জঙ্গলমহলে বন্যপ্রাণ নিয়ে সচেতনতা অনেক বেড়েছে। নানা কর্মসূচি হয়েছে। কেন বন্যপ্রাণ বাঁচানো দরকার তা গ্রামের মানুষকে বোঝানো গিয়েছে।’’ আর বাঘ ‘খুনের’ বিভাগীয় তদন্তের কী হল? শক্তিশঙ্করবাবুর জবাব, ‘‘যেখানে যা রিপোর্ট পাঠানোর পাঠানো হয়েছে।’’ সেই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, যতদূর জানা গিয়েছে, বাঘটি সম্ভবত মধ্য ভারত থেকে এখানে এসেছিল। ছত্তীসগঢ় বা ভোপালের মতো কোনও এলাকা থেকে।

আজ, শনিবার ফের ‘শিকার উৎসব’ রয়েছে বাগঘোরার জঙ্গলে। আবার কি শিকারে যাওয়া হবে? এক বছর আগে বাঘের হামলায় জখম বাদল বলেন, ‘‘শনিবার জঙ্গলে কাঠ কাটার কাজ রয়েছে। এ বার মনে হয় আর শিকারে যাওয়া হবে না।’’ বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণক্ষেত্র বাগঘোরার জঙ্গলে এদিন শুধু ছাগল চরতে দেখা গিয়েছে। আর শোনা গিয়েছে পাখির ডাক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন