জখম হায়নাটিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: বিশ্বসিন্ধু দে
ভোরে গ্রামে রক্তাক্ত হায়না ঢোকার খবর শুনে ঘুম ভেঙেছিল ডহরপুরের। জখম হায়নাটির জোরে দৌড়নোর ক্ষমতাও ছিল না। হঠাৎ বৃহদাকার হায়না দেখে বাঘের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শেষমেশ অবশ্য গ্রামবাসীর তৎপরতায় হায়নাটিকে উদ্ধার করেছে পেরেছে বন দফতর।
প্রায়ই যেখানে বন্যপ্রাণীকে মেরে ফেলার খবর সামনে আসে, সেখানে হায়নার মতো হিংস্র জন্তুকে না মেরে বন দফতরের হাতে তুলে দেওয়ায় নারায়ণগড়ের ডহরপুর গ্রামের বাসিন্দাদের উদ্যোগের প্রশংসা করছে দফতরের কর্তারা।
শনিবার সাত সকালে ট্রেন চলে যেতেই রেলকর্মী অশোক দাস দেখেন, লাইনের পাশের গ্রামের দিকে রক্তাক্ত একটি হায়না হেঁটে যাচ্ছে। তার মুখ থেকেও রক্ত পড়ছে। রেললাইন পেরোতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় জখম হয় হায়নাটি। রেললাইন পেরিয়ে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের দিকে নারায়ণগড়ের ডহরপুর গ্রামের দিকে ঢুকে যায় হায়নাটি। হঠাৎ বৃহদাকার হায়না দেখে বাঘের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গ্রামে। শুরু হয় হায়না তাড়ানোর কাজ। হায়নাটির মুখে, জিভে ও দাঁতেও জখম ছিল। গ্রামবাসীদের মধ্যে সাহসী কয়েকজন যুবক হায়নাটি ধরে বন দফতরে খবর দেন। বেলদা রেঞ্জের নারায়ণগড় বিট অফিসের কর্মী মিন্টু চক্রবর্তী ও অন্যান্যরা এসে হায়নাটি হিজলি রেসকিউ সেন্টারে পাঠান। সেখানেই তার চিকিৎসা চলছে।
সকালেই হায়না ধরতে বেরিয়েছিলেন অখিল সিংহ, দিলীপ সিংহ, সমরেশ সিংহ, বিমল সিংহ, সুজিত সিংহ, জগন্নাথ সিংহরা। পিছনে ধাওয়া করে চাঁদলা পুকুর পাড়ের কাছে হায়নাটি ধরে ফেলেন তাঁরা। ধান জমি থাকায় হায়নাটি বেশি জোরে ছুটতে পারেনি। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘প্রথমে ভয় হলেও হায়নাটির জখম আছে জানতে পেরে ধরার চেষ্টা করি। পরে পুলিশে খবর দিই। বন দফতর এসে হায়নাটি নিয়ে গিয়েছে।’’
এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য ইন্দ্রজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘আমরা হায়নাটি মারতে দিইনি। জীবন্ত হায়নাটি বন দফতরের হাতে তুলে দিয়েছি।’’
ডিএফও অরূপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শিকারের লোভেই হায়নাটি জঙ্গল থেকে বেরিয়েছে। হায়নাটি ট্রেনের ধাক্কায় জখম হয়েছে। সুস্থ হলে জঙ্গলে ছাড়া হবে। নতুবা ঝাড়গ্রাম বা আলিপুর জু তে পাঠানো হবে।’’ গ্রামবাসীরা যে পিটিয়ে না মেরে বন দফতরের হাতে হায়নাটি তুলে দিয়েছেন তার প্রশংসা করে অরূপবাবু বলেন, ‘‘সচরাচর এমনটা হয় না।’’