শুভেচ্ছা: আরোগ্য কামনা করে দিশার হাতে ফুল তুলে দিচ্ছে স্কুলের পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র
সকাল থেকেই স্কুলে ব্যস্ততা। আনা হয়েছে ফুল, লেখা হচ্ছে প্ল্যাকার্ড, চলছে নাচ-গানের তোড়জোর। স্কুলের জন্মদিন নয়, কোনও মনীষীর স্মরণানুষ্ঠানও নয়। গড়বেতার আমলাগোড়ার রেউদি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মঙ্গলবার সব আয়োজনই ছিল তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী দিশা দত্তের জন্য।
ছোট্ট দিশা জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। তার বাঁ পায়ের হাঁটু রয়েছে উল্টো দিকে। তাই ক্র্যাচ ছাড়া চলতে পারে না বছর আটেকের মেয়েটি। অস্ত্রোপচারের জন্য আজ, বুধবার দিশাকে নিয়ে যাওয়া হবে বেঙ্গালুরুতে। তার আগে স্কুলের শিক্ষক আর সহপাঠীরা দিশার দ্রুত আরোগ্য কামনা করল এ দিন। কাটা হল কেক, দিশার হাতে তুলে দেওয়া হল ফুলের তোড়া। পড়ুয়ারা নাচ-গান-আবৃত্তিও পরিবেশন করল।
সহপাঠীদের চোখের কোণে ছিল জল। মনখারাপ ছিল দিশারও। দিশার সহপাঠী অঙ্কিতা দত্ত, সুস্মিতা দত্ত, শ্রীরাধা দে-রা বলছিল, “দিশা তো ক’দিন স্কুলে আসতে পারবে না। তাই ভাল লাগছে না। আমরা চাই, ও দ্রুত সুস্থ হয়ে ফিরে আসুক।’’
এ দিন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষই। উদ্দেশ্য দিশা এবং তার সহপাঠীদের মনটা একটু ভাল করে দেওয়া। রেউদি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় বলছিলেন, “দিশা কবে ফিরবে ঠিক নেই। ওর মন খারাপ। আমাদের সকলেরই মন খারাপ। এ দিন স্কুলে অনুষ্ঠান করে ওকে একটু আনন্দ দিতে চেয়েছি। ছোট্ট মেয়েটা একটু হেসেছে, এটাই প্রাপ্তি।”
অস্ত্রোপচারের পরে দিশা কতটা সুস্থ হবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি চিকিত্সকেরা। তবে দিশা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে বলে আশা তার বন্ধুদের। দিশার বাবা দীনেশ দত্তের ছোটখাট ব্যবসা রয়েছে। কষ্ট করে টাকা জোগাড় করে মেয়ের চিকিৎসা করাচ্ছেন তিনি। এ দিন দিশার সঙ্গে স্কুলে এসেছিলেন তার মা রেশমি দত্ত। রেশমিদেবী বলছিলেন, “স্কুল এ ভাবে পাশে দাঁড়িয়েছে দেখে আমরাও মনে জোর পাচ্ছি। আশা করি, চিকিত্সার পরে মেয়েটা দ্রুত সেরে উঠবে।’’ প্রধান শিক্ষক অনির্বাণবাবুরও বক্তব্য, “আমরা নিশ্চিত, অস্ত্রোপচারের পরে ও দ্রুত সেরে উঠবে। বাড়ি ফিরে স্কুলেও আসবে।’’
বন্ধুদের নাচ-গান আনন্দ দিলেও দিনের শেষে ছোট্ট দিশার মুখ ছিল শুকনো। বাড়ির যাওয়ার আগে সে বলছিল, ‘‘খুব তাড়াতাড়ি স্কুলে বন্ধুদের কাছে ফিরে আসতে চাই।’’