বন্‌ধ সফল, দাবি বণিক সভার

অধরা অভিযুক্ত, ক্ষোভে ফুঁসছে রেলশহর

দুষ্কৃতী তাণ্ডব বন্ধের দাবিতে জয়শঙ্কর সাউয়ের মৃতদেহ ঘিরে দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখাল ব্যবসায়ীরা। শুক্রবার খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে প্রথমে গোলবাজারে যায় জয়শঙ্করবাবুর মরদেহ। সেখানে জেলা পুলিশ সুপারের অপসারণের দাবিতে অবস্থানে বসেন ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা। পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট ছোড়ে ক্ষিপ্ত জনতা। বৃহস্পতিবারই ব্যবসায়ী খুনে অভিযুক্ত দুষ্কৃতীদের না ধরা পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের বন্‌ধের ডাক দেয় ব্যবসায়ী সমিতি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৫ ০০:২২
Share:

জয়শঙ্কর সাউয়ের মৃতদেহ নিয়ে খড়্গপুরে দফায় দফায় চলল বিক্ষোভ। গোলবাজারের ভাণ্ডারিচকে (বাঁ দিকে), ডিআইজি বাংলোর সামনে ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদ (মাঝে)। বন্‌ধে গোলবাজারে বন্ধ দোকানপাট (ডান দিকে)। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

দুষ্কৃতী তাণ্ডব বন্ধের দাবিতে জয়শঙ্কর সাউয়ের মৃতদেহ ঘিরে দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখাল ব্যবসায়ীরা। শুক্রবার খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে প্রথমে গোলবাজারে যায় জয়শঙ্করবাবুর মরদেহ। সেখানে জেলা পুলিশ সুপারের অপসারণের দাবিতে অবস্থানে বসেন ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা। পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট ছোড়ে ক্ষিপ্ত জনতা। বৃহস্পতিবারই ব্যবসায়ী খুনে অভিযুক্ত দুষ্কৃতীদের না ধরা পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের বন্‌ধের ডাক দেয় ব্যবসায়ী সমিতি। শাসক দল বাদে বন্‌ধকে সমর্থন জানায় বাম-বিজেপি-কংগ্রেস। এ দিন খড়্গপুরের সব দোকানপাটই বন্ধ ছিল। রাস্তায় অটো ও রিকশার সংখ্যাও ছিল নামমাত্র।
গোলবাজারের জনতা মার্কেটের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী জয়শঙ্করবাবু শহরের খরিদার বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার গোলবাজার বন্ধ থাকে। যদিও ব্যবসায়িক কাজে বৃহস্পতিবার দুপুরে বাজারে পেঁয়াজের গুদামে (গদি) যান তিনি। কাজ সেরে বাড়ি ফেরার পথে আততায়ীর গুলিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। জয়শঙ্করবাবুর গলায় গুলি লাগে। বাজার বন্ধ থাকায় এ দিন এলাকা সুনসানই ছিল। স্থানীয়রা জয়শঙ্করবাবুকে উদ্ধার করে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনার পরই ক্ষুব্ধ জনতা রাস্তা অবরোধ করে।

Advertisement

ঘটনার পর চব্বিশ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। বৃহস্পতিবারই মৃতের স্ত্রী দাবি করেন, স্বামীর সঙ্গে কারও শত্রুতা ছিল না। পুলিশ সূত্রে খবর, দুষ্কৃতীরা ছিনতাইয়ের উদ্দেশে নয়, জয়শঙ্করবাবুকে খুন করার পরিকল্পনা নিয়েই এসেছিল। শত্রুতার জেরেই এই খুনের ঘটনা বলে পুলিশ নিশ্চিত। মৃতের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা যায়, কয়েকদিন আগেই লক্ষাধিক টাকা চেয়ে জয়শঙ্করবাবুর কাছে হুমকি ফোন আসে। যদিও সেই টাকা দিতে রাজি হননি তিনি। বৃহস্পতিবার রাতেই ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দু’জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

পুলিশের অনুমান, গুলি করার আগে ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে দুষ্কৃতীদের কিছু কথা হয়। দুষ্কৃতীরা ব্যবসায়ীর পূর্ব পরিচিতও হতে পারে। স্থানীয়দের থেকেও এই প্রশ্নগুলির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছে পুলিশ। গোলবাজারের যে এলাকায় গুলি চলে, সেখানেই একটি মদের দোকান রয়েছে। সেটি ঘটনার সময় খোলা ছিল। তাই ওই দোকানের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছে পুলিশ। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্ত বলেন, “ঘটনার তদন্ত চলছে। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।”

Advertisement

যদিও পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে না পারায় সমালোচনায় সরব বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। বিরোধী দলগুলির দাবি, তৃণমূল পুরবোর্ড গঠনের সময় থেকেই শহরে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য লাগাম ছাড়িয়েছে। ব্যবসায়ীদের থেকে টাকা চেয়েও হুমকি দেওয়া চলেছে বলে দাবি শহরের একাধিক ব্যবসায়ীর। সিপিআই জেলা সহ-সম্পাদক বিপ্লব ভট্ট বলেন, “এখনও পুলিশের তেমন সক্রিয় নয়। ব্যবসায়ীদের থেকে টাকা চেয়ে হুমকি দেওয়া চলছেই। কারা এই ঘটনায় যুক্ত সে বিষয়ে পুলিশ জানে। তাই মানুষের এই ক্ষোভ আমরা সমর্থন করি।”

এ দিন ব্যবসায়ীদের ডাকা বন্‌ধে শহরের গোলবাজার, মালঞ্চ, খরিদা, ইন্দা, প্রেমবাজার এলাকার দোকানপাট বন্ধ ছিল। অটো ও রিকশার সংখ্যাও ছিল কম। জেলা বণিকসভার সম্পাদক রাজা রায় বলেন, “খড়্গপুরে যে ভাবে এক ব্যবসায়ীকে খুন হতে হয়েছে তার বিরুদ্ধেই আমরা বন্‌ধ ডেকেছিলাম। সেই বন্‌ধ সর্বাত্মক করতে অনেক রাজনৈতিক দলও সমর্থন করেছিল। বন্‌ধ সফল হয়েছে।” সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক বিপ্লব ভট্টও বলেন, ‘‘মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বন্‌ধ পালন করেছে। বন্‌ধের মাধ্যমে শহরবাসী বুঝিয়ে দিয়েছে পুলিশ-প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা তারা মেনে নিতে পারছে না।” একইভাবে, কংগ্রেসের শহর সভাপতি অমল দাসও বলেন, “ব্যবসায়ীরদের ডাকা বন্‌ধ আমরা সমর্থন করেছিলাম। বন্‌ধ সর্বাত্মক হয়েছে।”

এ দিন ময়না-তদন্তের পর খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে জয়শঙ্কবাবুর মরদেহ খরিদার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। মরদেহের সঙ্গে মিছিলে বণিক সভার একাধিক কর্তা ও রাজনৈতিক দলগুলির কর্মী-সমর্থকরাও ছিলেন। শোকমিছিলে যোগ দেয় মানবাধিকার কমিশনের খড়্গপুর শাখাও। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে ঝাপেটাপুর হয়ে গোলবাজার সেতু পেরিয়ে ভাণ্ডারি চকে আসে মরদেহ। সেই সময় স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী ও দোকানের কর্মচারীরা মরদেহ ঘিরে রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন খড়্গপুরের এসডিপিও সন্তোষ মণ্ডল। ব্যবসায়ী সঞ্জীব সাউ, অজিত কুমারেরা দাবি করেন, “খড়্গপুরে পুলিশের প্রশ্রয়ে মাফিয়ারাজ চলছে। পুলিশ আসল খুনিদের না ধরে নিরাপরাধদের ধরছে। তাই জেলা পুলিশ সুপারকে পদত্যাগ করতে হবে।”

পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট ছোড়ে ক্ষিপ্ত জনতা। এরপর জয়শঙ্করবাবুর মরদেহ পেয়াঁজ গদিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে মরদেহ নিয়ে খরিদার উদ্দেশে রওনা দেয় শোকমিছিল। শববাহী গাড়ি ডিআইজি বাংলোর সামনে আসতেই বাংলো লক্ষ্য করে ফের ইট ছোড়ে উত্তেজিত জনতা। পুলিশ গিয়ে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। যদিও এই ঘটনায় কোনও পুলিশ কর্মী জখম হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। যদিও এই ঘটনায় দায় এড়িয়ে বণিক সভার সম্পাদক রাজা রায় বলেন, “আমরা পুলিশের প্রতি এই ক্ষোভ সমর্থন করি না। কারা এই কাজ করেছে আমরা বুঝতে পারছি না।” এ বিষয়ে সিপিআই নেতা বিপ্লব ভট্টের কথায়, “পুলিশের বিরুদ্ধে মানুষের এই ক্ষোভ আমার রাজনৈতিক জীবনে দেখিনি। আমরা বামপন্থীরা এই ক্ষোভ সমর্থন করি। এরপরও এ রকম চললে সাধারণ মানুষ পুলিশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন