রাতের সড়কে চালকদের ঘুম তাড়াতে উদ্যোগী পুলিশ 

শুধু মোবাইল ব্যবহার নয়, রাতে দূরপাল্লার বাস-সহ বিভিন্ন গাড়ির চালকদের ঘুমিয়ে পড়ার কারণেও দুর্ঘটনার উদাহরণ রয়েছে।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

তমলুক শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৪১
Share:

নরঘাটের কাছে বাস থামিয়ে নজরদারি পুলিশের। —নিজস্ব চিত্র।

মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদে সেতুর রেলিং ভেঙে নদীতে বাস পড়ে ৪৫ জনের মৃত্যুর স্মৃতি এখনও দগদগে। ভোররাতে দুরন্ত গতিতে ছুটে চলা ওই বাসের চালক মোবাইলে কথা বলার জেরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলাতেই দুর্ঘটনা বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। এর জেরে ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের তরফে গাড়ি চালানোর সময় চালকদের মোবাইলে কথা বলা নিষিদ্ধ হয়েছে। চালকদের উপর নজরদারিও শুরু করেছে পুলিশ।

Advertisement

তবে শুধু মোবাইল ব্যবহার নয়, রাতে দূরপাল্লার বাস-সহ বিভিন্ন গাড়ির চালকদের ঘুমিয়ে পড়ার কারণেও দুর্ঘটনার উদাহরণ রয়েছে। তাই রাতে নজরদারির পাশাপাশি বিশেষ সতর্কতা হিসেবে এ বার চালকদের ঘুম তাড়াতে অভিনব পদক্ষেপ করল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ। জেলার অন্যতম ব্যস্ত দিঘা-কলকাতা সড়কে রাতে গাড়ি থামিয়ে চা-জলপানের পরামর্শ দিচ্ছে টহলরত পুলিশ। দিঘা–কলকাতা সড়কে যাতায়াতের পথে নরঘাটের কাছে হলদি নদীর উপর শহিদ মাতঙ্গিনী সেতু পেরোতে হয় সমস্ত যানবাহনকে। দিঘা থেকে জেলার বিভিন্ন জায়গা ছাড়াও অন্য জেলাতেও রাতের বাস সার্ভিস রয়েছে। তাই রাতে বাস-সহ অন্য যানচালকদের সতর্ক করতে নন্দকুমার থানার পুলিশ প্রতিদিন রাতভর বিভিন্ন গাড়ি থামিয়ে চালকদের বিশ্রামের জন্য চা-জলপানের পরামর্শ দিচ্ছে। এর ফলে দীর্ঘ ওই সেতুর কাছ গাড়িগুলির গতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি চালকেরা যাতে ঘুমিয়ে না পড়েন তাতেও নজরদারি করা যাচ্ছে বলে পুলিশের দাবি।

জেলা পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, দিঘায় বেড়াতে যাওয়ার জন্য অন্য জেলার পাশাপাশি ভিন রাজ্য থেকেও যাত্রী নিয়ে দূরপাল্লার বাস চলাচল করে। এ ছাড়া দিঘা-সহ পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি, এগরা, হলদিয়া থেকে বিভিন্ন দূরপাল্লার সরকারি-বেসরকারি বাস কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় চলাচল করে। নন্দকুমার ও হলদিয়া থেকে ওডিশার ভুবনেশ্বর, পুরী ও কটক প্রভৃতি জায়গায় বাস চলাচল করে এই সড়ক ধরেই। রাতভর এই সব রুটের অনেক বাসকে নরঘাটের কাছে হলদি নদীর উপর সেতু পার হতে হয়।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে খবর, কলকাতা–দিঘাগামী সড়কে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশের তরফে আগেই গাড়ির সর্বোচ্চ গতি নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এ ছাড়া রাতের বেলায় চালকেরা যাতে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি না চালায় সে জন্য ‘ব্রিদিং অ্যানালাইজার’ যন্ত্র দিয়ে চালকদের উপর নজরদারিরও ব্যবস্থা হচ্ছে। নিয়ম ভাঙলে চালকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।

যদিও পুলিশেরই একাংশের বক্তব্য, গাড়ি চালানোর এই সব বিষয় নিয়ে নিষেধাজ্ঞা আগেও ছিল। তবে তা নিয়ে খুব কড়াকড়ি ছিল না। কিন্তু দৌলতাবাদের বাস দুর্ঘটনার পরে আর কোনও ফাঁক রাখতে নারাজ প্রশাসন। নন্দকুমার থানার ওসি অমিয় ঘোষ জানান, গাড়ি চালানোর সময় চালকদের মোবাইল ব্যবহার বন্ধ করতে নজরদারি চলছে। দূরপাল্লার গাড়ি চালকরা পথের ক্লান্তির কারণে যাতে ঘুমিয়ে না পড়েন সে জন্য গাড়ি থামিয়ে চালকদের চা-জলপানের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

পুলিশের এমন পদক্ষেপ নিয়ে দিঘা-কলকাতা রুটের একটি বেসরকারি বাসেক চালক শেখ রাজীব বলেন, ‘‘দীর্ঘক্ষণ ধরে গাড়ি চালানোর ফলে অনেক সময় চালকের তন্দ্রা এসে যায়। এর জন্য মাঝে কিছুটা সময় গাড়ি থামিয়ে একটু বিশ্রাম প্রয়োজন। পুলিশের তরফে চালকদের এমন পরামর্শ বেশ কাজ লাগবে। চালকেরা সতর্ক হলে কমবে দুর্ঘটনাও।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন