পুলিশ ভ্যানে বাড়ি ফিরছে খুদেরা। কৌশিক সাঁতরার তোলা ছবি।
দুপুর দে়ড়টা। ব্যস্ত ঘাটাল-চন্দ্রকোনা সড়ক ধরে দ্রুত গতিতে ছুটে যাচ্ছে গাড়ি। আর সেই রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে একটা পুলকার। ভিতরে গোটা দশেক খুদে গল্পে মশগুল। অনেকক্ষণ ধরেই বিষয়টা নজরে পড়েছিল স্থানীয়দের। ঘণ্টা খানেক পর ওই পুলকার থেকে খুদেদের কান্না শুনে ছুটে যান তাঁরা। খবর পৌছায় থানাতেও। তখনও পাত্তা মেলেনি গাড়ি চালকের। পুলিশই গাড়ি থেকে উদ্ধার করে পড়ুয়াদের।
চমকের এখানেই শেষ নয়। কিছুক্ষণ পর কার্তিক ভুঁইয়া নামে ওই গাড়ি চালকের সন্ধান মেলে রাস্তার পাশের একটা চোলাই ঠেক থেকে। পুলিশের দাবি, জেরায় কার্তিক নির্বিকার ভাবে জানিয়েছে, ‘‘ভয়ের কিছু ছিল না। আমি তো একটু মদ খেতে গিয়েছিলাম! ফিরে বাচ্চাদের বাড়ি পৌঁছে দিতাম।’’
বৃহস্পতিবার ভরদুপুরে এমন ঘটনারই সাক্ষী রইল ঘাটাল শহরের ময়রাপুকুর। জানা গিয়েছে, পুলকারে ছিল ঘাটালের কুশপাতার একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিশুশ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্ররা। পুলিশ ওই স্কুলগাড়ি-সহ চালককে আটক করেছে। পরে পুলিশ থানার গাড়ি চাপিয়েই খুদেদের বাড়ি পৌঁছে দেয়। স্কুলের অধ্যক্ষা রমা (দে) দত্ত বলেন, “ঘটনাটি নিন্দনীয়। ভবিষ্যতে যাতে না এমন ঘটনা না ঘটে-তার জন্য আমরা নজর রাখব। স্কুলের তরফে ওই চালকের নামে অভিযোগ জানানো হবে।’’
অভিযুক্ত চালক কার্তিক ভুঁইয়া ।
জানা গিয়েছে, অন্য দিনের মতোই এ দিনও ছুটির পর ছাত্রদের পুলকারে চাপিয়ে বাড়ি ছাড়তে গিয়েছিল কার্তিক। কিন্তু এ দিন স্কুল থেকে কিছুটা যাওয়ার পরই ময়রাপুকুরে রাস্তার ধারে গাড়িটিকে দাঁড় করিয়ে নেমে পড়ে সে। প্রথমে ওই খুদেরা গল্পে মশগুল ছিল। কিন্তু এক ঘণ্টা পরও গাড়ির চালক না ফেরায় ভয়ে কান্নাকাটি শুরু করে তারা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই খুদেদের উদ্ধার করে। শুরু হয় চালকের খোঁজ। আর এরপরই চক্ষু চ়়ড়কগাছ পুলিশের। দেখা যায়, কাছের একটা চোলাইয়ের ঠেকে তখন মদ খেতে ব্যস্ত কার্তিক। এরপর পুলিশ ওই খুদেদের বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসে। চালককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ।
কিন্তু এমন ঘটনায় স্কুলের দায়িত্ব এবং পুলকারে ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কোন্নগরের বাসিন্দা অমর শীল, প্রণব বাঙালের কথায়, ‘‘ব্যাঙের ছাতার মতো স্কুল গজিয়ে উঠছে। কোনও স্কুলেরই পরিকাঠামো নেই। স্কুল থেকে বেরিয়ে পড়ুয়ারা ঠিক করে বাড়ি পৌঁছল কি না সেটাও কেউ খোঁজ নেয় না।’’ ওই স্কুলের এক পড়ুয়া বলে, ‘‘কাকু তো প্রায়ই গাড়ি থেকে নেমে যায়। আমরা কিছু বললে কাকু বকে। কিন্তু এ দিনের মতো এত দেরি কোনওদিন হয়নি।’’