কৃতী ছেলের ইচ্ছাপূরণ, চিন্তায় বাবা

ছোট চা দোকানের আয়ের টাকায় সংসার চলে কোনওমতে। এর মধ্যেই তিন মেয়ে, এত ছেলেকে বড় করে তুলেছেন সবংয়ের শ্রীরামপুরের সূর্যকান্ত মেইকাপ। দুই মেয়ের বিয়েও দিয়েছেন। ছোট মেয়ে কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৭ ০০:৫৬
Share:

সুপ্রভাত মেইকাপ।

ছোট চা দোকানের আয়ের টাকায় সংসার চলে কোনওমতে। এর মধ্যেই তিন মেয়ে, এত ছেলেকে বড় করে তুলেছেন সবংয়ের শ্রীরামপুরের সূর্যকান্ত মেইকাপ। দুই মেয়ের বিয়েও দিয়েছেন। ছোট মেয়ে কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। একমাত্র ছেলে সুপ্রভাত মেইকাপ মাধ্যমিকে ৬৫০ নম্বর পেয়ে পরিবারের সকলের মুখ উজ্জ্বল করেছে। একইসঙ্গে সূর্যকান্তবাবুর চিন্তা, এ বার কী ভাবে ছেলের পড়াশোনা চালাবেন।

Advertisement

মাধ্যমিকে ভাল ফল করবে বলে আশা করেছিল পিংলার ধনেশ্বরপুর গোপালচন্দ্র শিক্ষাসদনের ছাত্র সুপ্রভাত। তবে ৬৫০ পাবে বলে আশা করেনি সে। ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়া নয়, উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনো করে অঙ্ক নিয়ে গবেষণা করার ইচ্ছা রয়েছে সুপ্রভাতের। পরে শিক্ষক অথবা বিমানের পাইলট হতে চায় সে। সুপ্রভাত বলছিল, “ছোট থেকে ক্লাসে কোনও দিন প্রথম হতে পারিনি। দ্বিতীয়-তৃতীয় হয়েছি। টেস্ট পরীক্ষায় ৫৭৫ পেয়েছিলাম। মাধ্যমিকে ৬৫০ পেয়ে স্কুলে প্রথম হব আশা করিনি।’’ তার কথায়, ‘‘ভাল ফল করেছি বলেই সকলের মতো চিকিৎসক অথবা ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই না। আমি অঙ্কের শিক্ষক অথবা বিমানের পাইলট হয়ে দেশের জন্য কিছু করতে চাই।”

ছেলের স্বপ্ন কী ভাবে পূরণ করবেন তা নিয়ে চিন্তায় সূর্যকান্তবাবু। দুই মেয়ের পড়ার ইচ্ছে থাকলেও আর্থিক অসঙ্গতির কারণে বিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। কিন্তু ছোট মেয়ের পড়াশুনোর অদম্য ইচ্ছাতে বাধা হতে চাননি তিনি। সবং কলেজে প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করছে সে।

Advertisement

অভাবের দরুণ সুপ্রভাতকে ভাল গৃহশিক্ষক দিতে পারেননি সূর্যকান্তবাবু। স্থানীয় বাসিন্দা শিক্ষক মনোজ রায় বিনা পারিশ্রমিকে এতদিন সুপ্রভাতকে অঙ্ক করিয়েছেন। এ ছাড়া তার কোনও গৃহশিক্ষক ছিল না। তারপরেও মাধ্যমিকে বাংলায় ৯০, ইংরেজিতে ৯১, অঙ্কে ৯৪, পদার্থবিদ্যায় ৯৬, জীববিজ্ঞানে ৯৪, ইতিহাসে ৯১ ও ভূগোলে ৯৪ নম্বর পেয়েছে সুপ্রভাত। সূর্যকান্তবাবু বলেন, “ছেলের এমন সাফল্যে আমার গর্ব হচ্ছে। কিন্তু নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছে। ভবিষ্যতে ছেলের এত পড়াশুনোর খরচ চালাব কী করে বুঝতে পারছি না। জানি না জীবনে আলোর মুখ দেখব কি না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন