পশ্চিম সিকিমের পাহাড়ে কোনও গোর্খা বা লেপচা পরিবারে দিন কয়েক কাটিয়ে এসেছেন অনেক বাঙালিই। একেবারে নিজস্ব স্বাদে তৈরি একবাটি থুপকা তুলে ধরেছেন নুয়ে পড়া পাহাড়ি কোনও বৃদ্ধা। আধুনিক পর্যটনে নতুন সংযোজন ‘হোম-স্টে’। এ বার সেই স্বাদ পাওয়া যাবে সাগরবেলাতেও।
পর্যটন দফতরের কর্তারা জানান, পর্যটকরা দিঘায় গিয়ে এমন একটা বাড়িতে থাকলেন, যে পরিবারের কোনও সদস্য ভোর বেলা সমুদ্রে জাল ফেলেন। টাটকা মাছের গন্ধ হোটেলে পাওয়া কি সম্ভব? সকাল-বিকেল আপনার পাতে সামুদ্রিক মাছের নানা পদ। রাজ্য পর্যটন দফতরের এক কর্মীর কথায়, ‘‘শুধু এইটুকু দিয়েই বাঙালিকে বেঁধে রাখা যায় দিঘা কি মন্দারমণিতে।’’ দার্জিলিং বা সিকিমের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে হোম-স্টে শুরু হয়েছে বেশ কয়েক বছর। বীরভূমের শান্তিনিকেতন বা অন্যত্র এ রকম ব্যবস্থা নিজেদের উদ্যোগে চালু করেছেন অনেকেই। এ বার তেমন সুবিধা সমুদ্র পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে চালু করার কথা ভাবছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। এ বিষয়ে রাজ্য পর্যটন দফতরের কাছে নির্দিষ্ট প্রস্তাব পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসন।
পর্যটন উন্নয়নে নতুন করে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রীও এ বিষয়ে আগ্রহী। এ ভাবে হোম-স্টে তৈরি করলে অনেক দিনের দেখা সমুদ্রকে হয়তো নতুন করে আবিষ্কার করবেন পর্যটকরা। সেই সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা আয়ের পথও তৈরি করা সম্ভব হবে।
রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘জেলা প্রশাসন প্রস্তাব পাঠিয়েছে। এই প্রকল্পে সরকার বাইরে থেকে সাহায্য করবে। প্রয়োজনে বাড়ির পরিকাঠামো উন্নয়নে সাহায্য করা হবে। তবে জমি অধিগ্রহণের কোনও প্রশ্ন নেই।’’
একদিকে পর্যটকদের জন্য গ্রামীণ প্রাকৃতিক পরিবেশকে বেছে নেওয়া, অন্যদিকে গ্রামবাসীদের আয়ের পথ তৈরি করাই এর উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরে পর্যটন দফতরের নোডাল অফিসার সুমন বিশ্বাস। প্রাথমিক ভাবে দিঘা, শঙ্করপুর, মন্দারমণি, তাজপুরের জন্য এই প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে। এ জন্য ২০০টি পরিবারকে বেছে নেওয়া হবে। আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারেরাই এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। প্রয়োজনে তাঁদের বাড়িতে অতিথি রাখার মতো পরিকাঠামো তৈরি করে দেবে সরকারই। সেই সঙ্গে ওই পরিবারের সদস্যদের বিনামূল্যে রান্নার প্রশিক্ষণও দেবে রাজ্য সরকার। অতিথি এলে তাঁর সঙ্গে কী ভাবে কথা বলতে হবে, কেমন পোশাক পরতে হবে— সব বিষয়েই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে হলদিয়া, মহিষাদল, তমলুকের জন্যও এই ভাবনা থাকছে বলে জানাচ্ছেন সুমনবাবু।