পরিজনেরা দূরে, স্মৃতি আঁকড়েই পুজো বৃদ্ধাশ্রমে

বাতাসে ভাসছে পুজোর গন্ধ। চারিদিকে আগমনী সুর বলছেমা দুর্গা আসছেন। কিন্তু এখানে মায়ের আবাহন হয় না। বলতে পারেন বিসর্জন হয়। কাঁথির ফরিদপুরের একটি বৃদ্ধাশ্রমের উঠোনে বসে কথাগুলো বলছিলেন আশি বছরের উর্মিলা ডিঙ্গাল।

Advertisement

শান্তনু বেরা

কাঁথি শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৮ ০১:৫২
Share:

পুজোর আনন্দে সামিল হবেন এঁরাও। নিজস্ব চিত্র

বাতাসে ভাসছে পুজোর গন্ধ। চারিদিকে আগমনী সুর বলছেমা দুর্গা আসছেন। কিন্তু এখানে মায়ের আবাহন হয় না। বলতে পারেন বিসর্জন হয়। কাঁথির ফরিদপুরের একটি বৃদ্ধাশ্রমের উঠোনে বসে কথাগুলো বলছিলেন আশি বছরের উর্মিলা ডিঙ্গাল।

Advertisement

প্রতি বছর পুজো এলেই নস্টালজিক হয়ে পড়েন বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকরা। সোনালি অতীত নানা স্মৃতি ভিড় করে মনের কোণে। যা কারও মনকে ভারী করে তোলে। আবার কেউ বা সুখস্মৃতিতে ডুব দিয়ে কাটিয়ে দেন পুজোর কয়েকটা দিন।

বাবার বাড়িতে ধুমধাম করে দুর্গাপুজো হতো। তখন কত ব্যস্ততা। বাড়িঘর ঝাড়পোঁছ, অতিথিদের আসা-যাওয়া, পুজোর সাজগোজ, বান্ধবীদের সঙ্গে প্যান্ডেলে ঘোরা কত মজা। স্মৃতির ছবিগুলো পর পর ফুটে উঠছিল সুপ্রীতি করণের গলায়। আস্তে আস্তে ভারী হয়ে আসে গলা। মারিশদা থানার তেলিপুকুরের বাসিন্দা সুপ্রীতিদেবীর ঠিকানা বদলে এখন হয়েছে বৃদ্ধাশ্রম। বিয়ে করেননি। দাদা ও ভাইয়েরা আছেন। পুজোর দিনগুলিতে বাপের বাড়ির পুরনো সে সসব দিনের রোমন্থন করে কাটে তাঁর।

Advertisement

দুর্গাপুজোর কথা উঠলে মনটা ভারী হয়ে যায় নাচিন্দার ৬৮ বছরের মুক্তকেশী মান্না, কালিন্দীর উর্মিলা ডিঙ্গালের। এক অব্যক্ত যন্ত্রণায় বুজে আসে গলা, নাকি অভিমান! দুজনেই বলেন, ‘‘বাড়িতে ছেলে, বৌমারা আছে। তবে পুজোয় কেউ নিতে আসে না। এই বৃদ্ধাশ্রমে অনেকেরই বাড়ির লোক আসে। অনেকে ছেলেমেয়েদের কাছে চলে যায়। আমরাই কয়েকজন পড়ে থাকি এখানে।’’ কথা শেষ করতে পারেন না, ভিজে আসে গলা।

২৫ বছর আগে ছেলে ক্যানসারে মারা যায়। তারও আগে ছেলের হাত ধরে বগুড়ানের শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে ছিলেন সীতাঞ্জলি মাইতি। ঠাঁই নিয়েছিলেন কেশুরকুদায় বাপের বাড়িতে। স্বামী ছেড়ে গিয়েছিল অনেক আগেই। ছেলের মৃত্যুর পর এখানে চলে আসেন ৭০ বছরের সীতাঞ্জলিদেবী। বাড়ির লোকের আসা না আসা এখন তাঁকে ভাবায় না। জানালেন, ‘‘ও সব নিয়ে ভাবলে মনটাই খারাপ হয়। তাই আর ভাবি না।’’

তবে পুজো এলে মনটা ফুরফুরে হয়ে যায় ভারতী দাস, জাহ্নবী চক্রবর্তীদের। বাড়ি কাঁথিতে হলেও এবার পুজোয় দিল্লি যাবেন ভারতীদেবী। কারণ সেখানে তার মা থাকেন। আবার ব্রাহ্মণশাসনের ৭৪ বছরের জাহ্নবীদেবী পুজোয় ছেলে, বৌমা ও নাতিদের সঙ্গে দেখা করতে যান।

বৃদ্ধাশ্রমে আবাসিকের সংখ্যা ২৫। পুজোয় গাড়িতে করে আবাসিকদের পুজো প্যান্ডেল ঘুরিয়ে দেখার ব্যবস্থা করেন বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষ। আশ্রমের তরফে তাপস জানা বলেন, “যাঁদের পরিবারের কেউ আসেন না, তাঁদের গত বছর প্রতিমা দর্শনে নিয়ে গিয়েছিল কাঁথি মহকুমা পুলিশ প্রশাসন। এবারও পুজো পরিক্রমায়ও যাওয়া হবে।’’

প্রতি বছর মা দুর্গা আসেন, আবার চলেও যান। পুজোর কয়েকটা দিন সুখ-দুঃখ মিলিয়ে কেটে গেলেও ছেলে-মেয়ে, বৌমা, নাতি-নাতনিদের মঙ্গলের জন্য মা দুর্গার কাছে প্রার্থনা করতে ভোলেন না উর্মিলা, মুক্তকেশীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন