জেলার রাস্তা সারবে কবে, প্রশ্ন

২৫ মিনিটের রাস্তা পেরোতে এখন সময় লাগে ৫০ মিনিট। বছর দু’য়েক বেহাল দেউলিয়া থেকে মানুয়া হয়ে খন্যাডিহি পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার রাস্তা। ছ’বছর আগে এই মোরাম রাস্তা পাকা হয়। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় রাস্তার জীর্ণ দশা। কানাইচক গ্রামের চুয়ান্ন বছরের প্রৌঢ় তারাপদবাবু গাঁদা, রজনীগন্ধা ফুলের চাষ করেন। প্রতিদিন সকালে সাইকেল চালিয়ে দেউলিয়া বাজারে তিনি ফুল নিয়ে আসেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৬ ০০:৫১
Share:

পুলশিটা থেকে রামচন্দ্রপুর যাওয়ার বেহাল সড়ক। নিজস্ব চিত্র।

২৫ মিনিটের রাস্তা পেরোতে এখন সময় লাগে ৫০ মিনিট।

Advertisement

বছর দু’য়েক বেহাল দেউলিয়া থেকে মানুয়া হয়ে খন্যাডিহি পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার রাস্তা। ছ’বছর আগে এই মোরাম রাস্তা পাকা হয়। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় রাস্তার জীর্ণ দশা। কানাইচক গ্রামের চুয়ান্ন বছরের প্রৌঢ় তারাপদবাবু গাঁদা, রজনীগন্ধা ফুলের চাষ করেন। প্রতিদিন সকালে সাইকেল চালিয়ে দেউলিয়া বাজারে তিনি ফুল নিয়ে আসেন। রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় সমস্যার শিকার হচ্ছেন তারাপদবাবু-সহ অন্য নিত্যযাত্রীরা।

তারাপদবাবু বলছেন, ‘‘মোরাম রাস্তা পাকা হওয়ার ফুল নিয়ে সাইকেল চালিয়ে দেউলিয়া বাজারে যেতে ২৫ মিনিট লাগত। বছর দুই হল রাস্তা গর্তে ভরে গিয়েছে। ফলে এখন বাজারে আসতে ৫০ মিনিট সময় লাগে। খন্দপথে সাইকেল চালাতেও খুব কষ্ট হচ্ছে।’’ এই রাস্তা দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেন শুভজিৎ অধিকারী। শুভজিতবাবু বলেন, ‘‘বর্ষার আগে রাস্তা মেরামতের কাজ করা না হলে আরও সমস্যায় পড়তে হবে। আমরা চাই, দ্রুত রাস্তা মেরামতের কাজ হোক।’’

Advertisement

একইভাবে পাঁশকুড়া ব্লকের সদরঘাট থেকে ঘোষপুর বাজারগামী গ্রামীণ সড়কের অবস্থাও খারাপ। অনেকেই এই রাস্তা এড়িয়ে ঘুরপথে পাঁশকুড়া বাজারে যাতায়াত করছেন বলে অভিযোগ। মেদিনীপুর ক্যানাল বরাবর চলে গিয়েছে ওই গ্রামীণ সড়ক। স্থানীয় খাড়ুরাধানগর গ্রামের বাসিন্দা গৌতম জানা বলেন, ‘‘প্রায় সাত বছর আগে রাস্তা পাকা হয়েছিল। কিন্তু তারপর আর মেরামত হয়নি। রাস্তায় এখন সাইকেল নিয়ে যাতায়াত করাই মুশকিল হয়ে পড়েছে। তাই আমরা ঘুরপথে রাতুলিয়া হয়ে পাঁশকুড়া যাতায়াত করি।’’

শুধু কোলাঘাট বা পাঁশকুড়া নয়, সংস্কার না হওয়ায় খারাপ অবস্থা জেলার অনেক গ্রামীণ সড়কের। বাজারে ফুল, পান, সব্জি নিয়ে আসতে সমস্যায় পড়েন চাষিরা। রাস্তার বেহাল অবস্থার কথা স্বীকার করে জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সোমনাথ বেরা বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা-সহ বিভিন্ন প্রকল্পে তৈরি জেলার বিভিন্ন এলাকায় অনেক গ্রামীণ পাকা সড়কের অবস্থা খারাপ। ইতিমধ্যে জেলার মোট ২৬টি গ্রামীণ সড়ক মেরামতের জন্য প্রায় ১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। বেশ কিছু রাস্তা মেরামতের কাজ চলছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার বাইরেও জেলার বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু গ্রামীণ যোগাযোগের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে ওইসব পাকা রাস্তাগুলি সংস্কার করা যাচ্ছে না। তবে বেহাল রাস্তা মেরামতের জন্য অর্থ সংস্থানের চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

প্রশাসনিক সূত্রে খবর, চলতি বছরে কেন্দ্রীয় বাজেটে গ্রাম সড়ক যোজনা খাতে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ওই টাকা থেকে রাজ্যের গ্রামীণ রাস্তাগুলি মেরামত ও নতুন করে গ্রামীণ পাকা সড়ক তৈরির জন্য অর্থ পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০১ সাল নাগাদ প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় গ্রামীণ রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হয়। অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলায় রাস্তা পাকা করার কাজও শুরু হয়। এরমধ্যেই ২০০২ সালে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা গঠনের পর থেকে জেলায় গ্রামীণ পাকা রাস্তার কাজে গতি আসে।

প্রকল্পের নিয়মানুযায়ী রাস্তা তৈরির পর পাঁচ বছর সময় পর্যন্ত রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের দ্বায়িত্ব থাকে সংশ্লিষ্ট সড়ক নির্মাণকারী ঠিকাদার সংস্থার। ওই সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পর থেকেই বেহাল রাস্তা মেরামতের জন্য অর্থ বরাদ্দ না হলে সমস্যায় পড়তে হয় বলে অভিযোগ।

তমলুকের কাকগেছিয়া থেকে জয়কৃষ্ণপুর, নন্দকুমার ব্লকের সদলপুর থেকে সাওড়াবেড়িয়া, পাঁশকুড়া ব্লকের দক্ষিণগোপালপুর থেকে উত্তর চাচিয়াড়া, মহিষাদল ব্লকের অমৃতবেড়িয়া থেকে গেওখালি বাজার, কাঁথি-২ ব্লকের মুকুন্দপুর থেকে নামালডিহা, পটাশপুর-১ ব্লকের নৈপুর থেকে পদিমা, এগরা-২ ব্লকের মাধবপুর থেকে দক্ষিণ চৌমুখ গ্রামীণ রাস্তার অবস্থাও এখন খারাপ। জেলার জীর্ণ গ্রামীণ রাস্তাগুলির হাল কবে ফিরবে? জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সোমনাথবাবু বলেন, ‘‘জেলার গ্রামীণ পাকা রাস্তাগুলির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে সংস্কারের জন্য অর্থ বরাদ্দ করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলার বেশকিছু রাস্তা মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। বাকি রাস্তা মেরামতের জন্য অর্থ বরাদ্দ হলেই কাজ করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন