শ্রমিক মৃত্যুতে ফের প্রশ্ন আইআইটি-র সুরক্ষায়

এ দিন দুর্ঘটনাটি ঘটেছে আইআইটি-র অতিথি নিবাসে। অতিথি নিবাসের সম্প্রসারিত ভবনের নির্মাণ সরঞ্জাম রং করার সময় একাধিক ভারী লোহার পাত চাপা পড়ে মৃত্যু হয় উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরের বাসিন্দা মুন্না গুপ্ত (২৪)-এর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:৫৬
Share:

যন্ত্রণা: উদ্ধার করা হচ্ছে আহত শ্রমিক ওয়াই রাজাকে।—ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

নির্মাণকাজ চলাকালীন ফের বিপত্তি খড়্গপুর আইআইটিতে! রবিবার রং করার সময় দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে এক শ্রমিকের। জখম হয়েছেন দুই শ্রমিক।

Advertisement

এ দিন দুর্ঘটনাটি ঘটেছে আইআইটি-র অতিথি নিবাসে। অতিথি নিবাসের সম্প্রসারিত ভবনের নির্মাণ সরঞ্জাম রং করার সময় একাধিক ভারী লোহার পাত চাপা পড়ে মৃত্যু হয় উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরের বাসিন্দা মুন্না গুপ্ত (২৪)-এর। এ ছাড়াও জখম হয়েছেন শহরের পুরীগেট এলাকার ওয়াই রাজা ও উত্তরপ্রদেশেরই রামচন্দ্র বিশ্বকর্মা। প্রথমে জখম অবস্থায় তিনজনকে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা মুন্নাকে মৃত ঘোষণা করে। আর ওয়াই রাজাকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে।

এ দিনের ঘটনায় উস্কে গিয়েছে প্রায় দু’বছর আগের স্মৃতি। ২০১৭ সালের ১৬ অগস্ট আইআইটি-র ‘ডায়মন্ড জুবিলি কমপ্লেক্সে’ নির্মাণকাজ চলাকালীন লিফট থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছিল তিন শ্রমিকের। তখন সুরক্ষা ব্যবস্থায় নজর রাখার আশ্বাস দিয়েছিলেন আইআইটি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এ দিন ফের দুর্ঘটনায় শ্রমিকের মৃত্যুতে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সরব হয়েছে আইআইটি-র শ্রমিক সংগঠনগুলির যৌথ কমিটি। এ দিন যৌথ কমিটির আহ্বায়ক জহরলাল পাল বলেন, “বারবার শ্রমিকের মৃত্যু হচ্ছে। এর জন্য আইআইটি কর্তৃপক্ষ দায়ী। কোনও সুরক্ষা ব্যবস্থা নেই। রবিবার কাজ করানো হচ্ছিল শ্রমিকদের। আমরা এর বিরুদ্ধে ফের আন্দোলন শুরু করব।”

Advertisement

ঘটনাস্থল: অতিথি নিবাস সম্প্রসারণের কাজেই ঘটে দুর্ঘটনা।—নিজস্ব চিত্র।

গত কয়েক মাস ধরে আইআইটি-র প্রধান অতিথিনিবাস সম্প্রসারণের কাজ চলছে। ক’দিন ধরে ঢালাইয়ে ব্যবহৃত প্রায় সাড়ে চার ফুট উঁচু লোহার পাতে রং করা হচ্ছিল। সার দিয়ে রাখা সেই ভারী পাত মাটিতে বসে রং করার কাজ করছিলেন শ্রমিকেরা। আইআইটি সূত্রে খবর, একটি পাতে ঠোকা লেগে সব পাতগুলি একসঙ্গে মুন্না-সহ তিন শ্রমিকের গায়ে পড়ে যায়। সম্পর্কে মুন্নার ভাই রামচন্দ্র বিশ্বকর্মা বলেন, “গত মাসেই আমরা ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করতে এসেছি। ছুটির দিনে রঙের কাজ চলছিল। আমি কোনওমতে বেরিয়ে যাই। কিন্তু ও চাপা পড়ে যায়।” তাঁদের মাথায় হেলমেট ছিল না বলেই জানান রামচন্দ্র।

এ দিনের ঘটনায় আইআইটি কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদার সংস্থাকে কাঠগড়ায় তুলেছেন আইআইটি-তে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি দেবাশিস চৌধুরীও। তিনি বলেন, “বাইরে থেকে শ্রমিক নিয়ে এসে কাজ করাচ্ছে ঠিকাদার সংস্থা। প্রধান নিয়োগকর্তা হওয়া সত্ত্বেও আইআইটি সুরক্ষার বিষয়টা দেখে না।”

ঠিকাদার সংস্থা বা আইআইটি কর্তৃপক্ষ কারও কাছে শ্রমিক-সুরক্ষা নিয়ে নির্দিষ্ট জবাব মেলেনি। নির্মাণকাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থার প্রধান ইঞ্জিনিয়ার রাজকিশোর পাত্র বলেন, “ওড়িশায় রয়েছি। ছুটির দিনে তো কাজ হওয়ার কথা নয়। কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল খোঁজ নিচ্ছি।” আইআইটির রেজিষ্ট্রার ভৃগুনাথ সিংহেরও বক্তব্য, “অন্য রাজ্যে এসেছি। শুনেছি একটা দুর্ঘটনা হয়েছে। বিস্তারিত খোঁজ নেব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন