গ্রেফতার তিন জন। নিজস্ব চিত্র
ট্রেনের টিকিট কাটতে কাউন্টারে গিয়েছিলেন তিন জন। অভিযোগ, নিজেদের নামে নয়, অন্য ব্যক্তিদের নামে চলছিল টিকিট কাটার কাজ। তার ওপরে এক-দু’টি নয়, ৮টি ফর্মে কাটা হয়েছিল ২৮জনের টিকিট। তাতেই হয়ে গেল জালিয়াতির পর্দা ফাঁস!
শুক্রবার খড়্গপুর স্টেশনের কাউন্টার থেকে টিকিট জালিয়াতির অভিযোগে তিন যুবককে গ্রেফতার করল রেলের অপরাধদমন শাখা। পরে ধৃতদের খড়্গপুর আরপিএফ পোস্টের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এ দিন অভিজিৎ ঘড়াই, রথীন ঘড়াই ও সৌরভ মোনিকে গ্রেফতার করা হয়। অভিজিৎ ও রথীন খড়্গপুর গ্রামীণের মাদপুর সংলগ্ন গাদগাছি গ্রামের বাসিন্দা। সৌরভের বাড়ি কেশপুরের ধামসাই গ্রামে। অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে মাদপুরে তারা একটি ট্র্যাভেল এজেন্সি চালাচ্ছিল। কিন্তু এ দিন খড়্গপুর স্টেশনের সংরক্ষিত আসনের ৮ নম্বর টিকিট কাউন্টারে একাধিক টিকিট কাটায় অপরাধদমন শাখার নজরে পড়ে যায় তারা। গোটা অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন অপরাধদমন শাখার ইন্সপেক্টর সুরেশ কুমার ও সিজিং অফিসার গণেশচন্দ্র মল্লিক। ধৃতদের থেকে এ দিন ৮টি পিএনআর নম্বরের ২৮জনের নামে কাটা প্রায় ৩৩ হাজার টাকার টিকিট বাজেয়াপ্ত করা হয়। এ ছাড়াও নগদ প্রায় ২১হাজার টাকা, ২৪টি সংরক্ষিত টিকিট কাটার ফর্ম-সহ বেশ কিছু সামগ্রী বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
রেলের নিয়ম অনুযায়ী, রেলের অনুমোদিত সংস্থা আইআরসিটিসি-র এজেন্টরা শুধুমাত্র এজেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে অনলাইনে টিকিট কেটে বাণিজ্যিক কারবার চালাতে পারেন। কিন্তু রেলের কাউন্টার থেকে কাটা পেপার টিকিট অথবা ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে ই-টিকিটের বাণিজ্যিক কারবার করা যায় না। এ ক্ষেত্রে একমাত্র যাত্রী নিজে অথবা তার পরিজনের জন্য টিকিট কাটতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সংরক্ষিত টিকিটের ফর্ম পূরণ করে একসঙ্গে ৬জনের টিকিট কাটা যেতে পারে। তবে ৬জনের বেশি যাত্রীরা একসঙ্গে যাত্রা করতে চাইলে রেলের থেকে আগাম অনুমতি প্রয়োজন হয়। তাই কাউন্টার থেকে অধিক সংখ্যক ফর্ম পূরণ করে একসঙ্গে অনেক টিকিট মজুত করা এবং ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে একাধিক ই-টিকিট টিকিট কাটার ওপর নজরদারি চালায় রেল। তবে এ ভাবেই অধিক সংখ্যক টিকিট কেটে বহু ভ্রমণ সংস্থা রেল টিকিটের কালোবাজারি করছে বলে অভিযোগ।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন অভিযানের সময় দেখা যায় ওই তিন যুবক বাইকে স্টেশনে আসে। পরে পকেট থেকে সংরক্ষিত টিকিটের ফর্ম বের করে কাউন্টারে জমা দিয়ে টিকিট কাটতে থাকে। প্রায় ৮টি ফর্ম জমা দিয়ে ২৮টি টিকিট কাটা হয়ে যাওয়ায় সন্দেহ হওয়ায় অপরাধদমন শাখার আধিকারিকেরা ওই যুবকদের জেরা করেন। ওই যুবকেরা নিজেদের মাদপুরের ভ্রমণ সংস্থার লোক বলে দাবি করে। এর পরেই তাঁদের তল্লাশি করে আরও ২৪টি ফর্ম ও নগদ ২২ হাজার টাকা পাওয়ায় সন্দেহ হয় অপরাধদমন শাখার। দেখা যায়, প্রায় চার মাস আগে কাটা ওই টিকিটগুলিতে ওই যুবকদের নাম নেই। প্রায় সবক’টি গ্রামের বাসিন্দাদের নামে কাটা টিকিট। এর পরেই জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েন ওই যুবকেরা। প্রাথমিকভাবে ওই টিকিট বাণিজ্যিক কারবারে ব্যবহার কথা জানায় তারা। এর পরেই তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে রেল সূত্রে জানা গিয়েছে। এই ধরনের অভিযান চলবে বলে জানিয়েছে অপরাধদমন শাখা।