রঙের পোঁচ পড়ছে কালেক্টরেট মোড়ের ডিভাইডারে। নিজস্ব চিত্র।
কখনও সবুজ- সাদা, কখনও হলুদ-কালো, কখনও আবার কালো-সাদা। মাঝেমধ্যেই রং বদল হচ্ছে মেদিনীপুর শহরের ডিভাইডারগুলোর।
এই এখন যেমন শহরের কালেক্টরেট মোড়, এলআইসি মোড় প্রভৃতি এলাকার ডিভাইডারে রং করা হচ্ছে। এক সময় এখানে সবুজ সাদা, পরে নীল-সাদা রং করা হয়েছিল। পরে হলুদ-কালো রং করা হয়। এখন আবার কালো-সাদা রং করা হচ্ছে।
রঙের দামও নেহাত কম নয়। এক লিটারের দাম প্রায় ৩০০-৩৫০ টাকা। পাঁচ হাজার ফুট জায়গা রং করতে খরচ পড়ে ২০-২২ হাজার টাকা। এর উপরে রয়েছে মজুরি। অর্থাৎ, ডিভাইডারের একটা অংশ রং করতে কম করে হাজার তিরিশেক টাকা খরচ। তাই শহরবাসীর প্রশ্ন, ডিভাইডারের রং নষ্ট হওয়ার আগেই তা বদলানোর প্রয়োজন কী? যেখানে শহরের অনেক রাস্তা খানাখন্দে ভর্তি!
একই ডিভাইডার বারবার রং করা হচ্ছে কেন?
সদুত্তর এড়িয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শৈবাল গিরির জবাব, “আগে ঠিক কী হয়েছে জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখতে পারি!’’ তবে জেলার এক পূর্ত কর্তার সাফাই, ‘‘আগের রং ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল বলেই নতুন করে রং করা হচ্ছে।’’
মেদিনীপুর শহরের কিছু ডিভাইডার দেখভাল করে পূর্ত দফতর। কিছু ডিভাইডার দেখভাল করে পুরসভা। শহরের কালেক্টরেট মোড়ের কাছে যে ডিভাইডারে এখন রং হচ্ছে, গত এক বছরে এই নিয়ে তিনবার সেই ডিভাইডারে রং হল। অথচ, শহরেরই অনেক রাস্তায় এখন খানাখন্দ রয়ে গিয়েছে। শহরবাসীর একাংশের বক্তব্য, বারবার ডিভাইডারের রং না- বদলে ওই খানাখন্দগুলো সারানো যেত। শহরের গেটবাজার এলাকার রাস্তা বেশ খারাপ। সামান্য বৃষ্টি হলেই জল জমে যায়। স্টেশন রোডের অদূরের রাস্তার হালও একই রকম।
শহরবাসীর একাংশের ক্ষোভ, এই সব রাস্তা সারানো হচ্ছে। শুধু ডিভাইডারগুলোর হঠাৎ হঠাৎ করে রং বদলানো হচ্ছে। শহরের কংগ্রেস কাউন্সিলর সৌমেন খান বলেন, “সব কিছুরই একটা সুষ্ঠু নীতি থাকা প্রয়োজন। মাঝেমধ্যেই শহরের ডিভাইডারগুলোর রং বদল হচ্ছে। এক-এক সময় এক-একটা রং করা হচ্ছে। এটা কেন হবে?” একই মত শহরের সিপিএম কাউন্সিলর জয়ন্ত মজুমদারের। তাঁর কথায়, “একটা সুষ্ঠু নীতি নিয়ে চললে এটা হত না। এতো খেয়ালখুশি মতো কাজ হচ্ছে!”
প্রশাসনের এক সূত্রের দাবি, শহরের সব ডিভাইডার ঘনঘন রং করা হয় না। যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ এলাকার সামনে রয়েছে, সেইগুলোই মাঝেমধ্যে রং করা হয়। যেমন, সার্কিট হাউস মোড়ের সামনের ডিভাইডার, কালেক্টরেট মোড়ের সামনের ডিভাইডার। কালেক্টরেটে রয়েছে জেলাশাসক, অতিরিক্ত জেলাশাসকদের দফতর। এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিনই জেলার প্রশাসনিক কর্তারা যাতায়াত করেন। অন্য দিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ ভিআইপি-রা মেদিনীপুরে এলে সার্কিট হাউসে থাকেন। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুরকর্মীর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী মেদিনীপুরে এলে সার্কিট হাউসের সামনের ডিভাইডার রং হবেই! এটা ধরেই নেওয়া যায়! গত কয়েক বছর ধরে তাই হচ্ছে!”
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক পূর্ত দফতরের এক কর্তা জানাচ্ছেন, সাধারণত ডিভাইডারে তিনটি রং ব্যবহৃত হয়। সাদা, কালো এবং হলুদ। এই তিনটি রং ব্যবহৃত হয় কারণ এই তিনটি রহের দৃশ্যমানতা বেশি। সাদা-হলুদ রং-ও দূর থেকেও দেখা যায়। ওই কর্তার মতে, ‘ইন্টারন্যাশনাল হাইওয়ে কোড’ ডিভাইডারের ক্ষেত্রে এই তিনটি রং ব্যবহারে সায় দিয়েছে। মেদিনীপুর শহরে বেশ কয়েকটা রিং রোড রয়েছে। যেমন, কেরানিতলা-সার্কিট হাউস মোড়, কালেক্টরেট মোড়-এলআইসি মোড়, গাঁধীমূর্তির মোড়-জেলা পরিষদ মোড় প্রভৃতি। এই সব রাস্তা ছাড়াও শহরের আরও বেশ কিছু রাস্তায় ডিভাইডার রয়েছে। এক সময় এই সব ডিভাইডারে সাদা-কালো রং ছিল। কোথাও কোথাও ছিল হলুদ-কালো। রাজ্যে পালাবদলের পরে কিছু এলাকায় ডিভাইডারে নীল-সাদা রং করা হয়। কিছু এলাকায় আবার সবুজ- সাদা রং করা হয়।
কিন্তু শহরের এক-এক জায়গায় ডিভাইডারে এক-এক রকম রং থাকলে তো দেখতেও খারাপ লাগে?
মেদিনীপুরের উপপুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাস বলেন, “এখন শহরে ফুটপাথ তৈরি হচ্ছে। ফুটপাথের একদিকে নীল-সাদা রং করা হচ্ছে। বেশির ভাগ ডিভাইডারে কালো- সাদা রং- ই রয়েছে। শহরকে আরও ভাল ভাবে সাজানোর সব রকম চেষ্টা চলছে।”