আশাকর্মীদের সক্রিয়তায় জোর, নজর সচেতনতাতেও

হাসপাতালে প্রসব, বার্তা পৌঁছচ্ছে গ্রামে

কী ভাবে এটা সম্ভব হল? জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, ‘‘কেন কিছু এলাকায় প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার কম ছিল, শুরুতে তার পর্যালোচনা করা হয়। কারণ খোঁজা হয়। পরবর্তী সময়ে কিছু পদক্ষেপ করা হয়। এরপরই ওই হার বাড়তে শুরু করে।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:১০
Share:

২০১১ সালে ছিল ৭৪ শতাংশ। ২০১৮ সালে তা-ই বেড়ে হয়েছে ৯৯ শতাংশ! প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার এমনই দ্রুত গতিতে বাড়ছে পশ্চিম মেদিনীপুরে।

Advertisement

কী ভাবে এটা সম্ভব হল? জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, ‘‘কেন কিছু এলাকায় প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার কম ছিল, শুরুতে তার পর্যালোচনা করা হয়। কারণ খোঁজা হয়। পরবর্তী সময়ে কিছু পদক্ষেপ করা হয়। এরপরই ওই হার বাড়তে শুরু করে।’’ তাঁর মতে, এখন মাতৃযানের সুবিধে রয়েছে। এর ফলেও হাসপাতালে এসে প্রসব করানোর প্রবণতা বেড়েছে।

হাসপাতালে এসে সন্তানের জন্ম দিন, রাজ্যের এই বার্তা আজকের নয়, অনেক আগের। রাজ্যে সরকার গঠনের শুরু থেকেই প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার বৃদ্ধিতে জোর দিয়ে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ক্ষমতায় আসার পর এই হার ধীরে ধীরে বাড়তেও শুরু করে। তবে জেলার সব এলাকা সমানভাবে এগিয়ে ছিল না। প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, ২০১১- ’১২ সালে জেলায় প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার ছিল ৭৪ শতাংশ। অর্থাৎ, ১০০ জন সদ্যোজাতের মধ্যে ৭৪ জনের জন্ম হত হাসপাতালে। বাকি ২৬ জনের জন্ম হত বাড়িতেই। ওই সূত্রে খবর, ২০১১- ’১২ সালে জেলায় ৭৩,১৩৩ জন শিশুর জন্ম হয়। এরমধ্যে হাসপাতালে জন্ম হয় ৫৪,৪১১ জনের। ২০১২- ’১৩ সালেও এই হার খুব একটা বাড়েনি। ৭৭ শতাংশ ছিল। ২০১৩- ’১৪ সালে ছিল ৮০ শতাংশ। কেন প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবে এত পিছিয়ে থাকছে পশ্চিম মেদিনীপুর, প্রশ্ন ওঠে। নড়েচড়ে বসেন জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা। এরপরই শুরু হয় কারণ খোঁজা। কিছু ‘গাফিলতিও’ সামনে আসে।

Advertisement

জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা দেখেন, এলাকার একাংশ স্বাস্থ্যকর্মী, বিশেষ করে আশাকর্মী প্রসূতিদের বাড়িতে যান না। অথচ, প্রসূতির স্বাস্থ্য পরীক্ষা থেকে শুরু করে সচেতনতার প্রসার-গ্রামাঞ্চলে এই কাজটা আশা কর্মীদেরই করার কথা। অন্তঃসত্ত্বা হওয়া থেকে শুরু করে সন্তানের জন্ম পর্যন্ত গ্রামের মায়েদের ভার কার্যত তাঁদের হাতেই থাকার কথা। কিন্তু বহু কর্মী নানা কারণে বাড়ি বাড়ি যাওয়া বন্ধ করে দেওয়ায় প্রসূতিদের হাসপাতালে আসতে উদ্বুদ্ধ করার কেউ থাকছেন না। জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘দেখা যায়, একাংশ গ্রামবাসীর এ সম্বন্ধে অজ্ঞতাও এর জন্য দায়ী। তাঁরা হাসপাতালে আসতে চান না।’’ একাংশ সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র বেহাল ছিল বলেও অভিযোগ। হাসপাতালের পরিবেশের অনেকের ভাল লাগত না। এরপর স্বাস্থ্যকর্মী, আশাকর্মীদের সতর্ক করা হয়। কাজে ‘গাফিলতি’ বরদাস্ত করা হবে না বলে জানানো হয়। প্রত্যন্ত গ্রামেও গ্রামবাসীদের সচেতন করা শুরু হয়। গ্রামীণ হাসপাতালগুলোর মানোন্নয়ন করার কাজও শুরু হয়। জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘একজন মা যদি হাসপাতালে এসে প্রসব করে নিশ্চিন্ত হন তাহলেই তিনি তাঁর চারপাশের অন্যদের হাসপাতালে গিয়ে প্রসবের কথা বলবেন।’’

প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, এই ৭ মাসে জেলায় ৩১,৭৪৮ জন শিশুর জন্ম হয়েছে। এর মধ্যে হাসপাতালে জন্ম হয়েছে ৩১,৪১৯ জনের। প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের দিক থেকে এখনও কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে সবং, পিংলা, খড়্গপুর গ্রামীণ। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের আশ্বাস, ‘‘ওই এলাকায় প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার বাড়ানোর সব রকম

চেষ্টা চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন