নেশার ঘোরেই পুলিশকে আঘাত, কবুল ধৃত যুবকের

নেশার ঘোরেই মদের বোতল দিয়ে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের মাথায় সে আঘাত করেছিল বলে জানিয়েছে খড়্গপুরে পুলিশ নিগ্রহের ঘটনায় ধৃত যুবক অভিষেক আচার্য। তবে নিজেকে নিরপরাধ বলে দাবি করেছে এই ঘটনায় ধৃত এলাকায় তৃণমূল সমর্থক বলে পরিচিত ধৃত উমাশঙ্কর নায়েক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৫ ০০:২৮
Share:

পুলিশ নিগ্রহের ঘটনায় ধৃতদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আদালতে। —নিজস্ব চিত্র।

নেশার ঘোরেই মদের বোতল দিয়ে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের মাথায় সে আঘাত করেছিল বলে জানিয়েছে খড়্গপুরে পুলিশ নিগ্রহের ঘটনায় ধৃত যুবক অভিষেক আচার্য। তবে নিজেকে নিরপরাধ বলে দাবি করেছে এই ঘটনায় ধৃত এলাকায় তৃণমূল সমর্থক বলে পরিচিত ধৃত উমাশঙ্কর নায়েক। উমাশঙ্কর সম্পর্কে অভিষেকের মামা। সোমবার দু’জনকেই মেদিনীপুর আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। বিচারক তাদের ১৪ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। ওই দু’জনকে জেরা করে এ দিন অমিত মহানন্দা এবং লালু চৌধুরী নামে আরও দুই যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, ‘‘পুলিশের উপর এ ভাবে হামলা মেনে নেওয়া হবে না। শহর জুড়ে নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। কেউ ট্রাফিক আইন ভাঙলেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

Advertisement

রবিবার সকালে খড়্গপুরের পুরাতনবাজারে যান নিয়ন্ত্রণ করছিলেন ট্রাফিক পুলিশকর্মী জ্যোতিন্দ্রনাথ মাহাতো। সেই সময় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করায় একটি মোটর সাইকেল দাঁড় করান তিনি। তাতে ছিল তিন যুবক। দু’পক্ষের বচসা চলাকালীন মদের বোতল দিয়ে এক যুবক জ্যোতিন্দ্রের মাথায় আঘাত করে বলে অভিযোগ। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ গাড্ডাবস্তির অভিমন্যু নায়েকের নাম পায়। অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী অভিমন্যুবাবুর ছেলে উমাশঙ্করই ওই মোটর সাইকেল চালায় বলে জানা যায়। রবিবারই উমাশঙ্কর ও তাঁর ভাগ্নে অভিষেককে পুলিশ গ্রেফতার করে। বাজেয়াপ্ত করা হয় মোটরসাইকেলটিও। ওই দু’জনকে জেরা করে জানা যায়, অভিষেক ছাড়াও মোটর সাইকেলে ছিল শহরের সিএমই গেটের বাসিন্দা লালু চৌধুরী ও গোলবাজারের অমিত মহানন্দা। পরে দু’জনকেই পুলিশ গ্রেফতার করে। আজ, মঙ্গলবার তাদের আদালতে হাজির করানো হবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, উমাশঙ্কররা তিন ভাই। দু’জন ঠিকাদারের অধীনে কাজ করলেও উমাশঙ্কর এই মুহূর্তে কর্মহীন। তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ে রয়েছে। বছর পাঁচেক ধরে এলাকার প্রাক্তন কাউন্সিলর লতা আচার্যের ওয়ার্ড তৃণমূল কার্যালয়ে যাতায়াত ছিল উমাশঙ্করের। এ দিন তাঁর বাবা অভিমন্যুবাবু বলেন, “মাঝেমধ্যেই নাতি অভিষেক এসে মোটরসাইকেল নিয়ে যেত। রবিবার আমাদের না জানিয়েই আমার নাতি চাবি নিয়ে যায়। তার পরে এই ঘটনা। তবে আমার ছেলে এতে জড়িত নয়।’’ স্থানীয় তৃণমূলনেত্রী লতাদেবীরও বক্তব্য, “সবাই বলছে উমাশঙ্কর নির্দোষ। ওঁর বাবা আমার কাছে এসেছিলেন। যে দোষ করেছে সে নিশ্চয়ই শাস্তি পাবে। কিন্তু নিরাপরাধ ব্যক্তিকে ধরে রাখা ঠিক নয়।’’

Advertisement

গাড্ডাবস্তি এলাকার বাসিন্দারা অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছেন। তবে অন্য পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে সম্প্রতি দেখা যাচ্ছিল অভিষেককে। স্থানীয়দের কথায়, ডেনডরাইট, মদ, গাঁজার নেশায় বুঁদ হয়ে থাকত চতুর্থ শ্রেণির পর স্কুলছুট অভিষেক। সম্প্রতি রূপনারায়ণপুরে একটি গাড়ির শো-রুমে রঙের কাজে ঢুকলেও কাজে মন ছিল না। ছুটি পেলেই মামাবাড়িতে এসে মোটরসাইকেল নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে শহর দাপিয়ে বেড়াত। অভিষেকের মা মেরি আচার্যর কথায়, “মাস ফুরোলে সংসারে টাকা দেয়। কিন্তু অমিত ও লালুর সঙ্গে মিশে ছেলেটা কিছু দিন হল নেশা করছিল। আসলে সংসারে অভাব থাকায় ওর মানসিক অবস্থা ঠিক নেই।’’ কিন্তু পুলিশকে মারধর কি সমর্থন করেন? অভিষেকের মায়ের এ বার জবাব, “অপরাধ করলে শাস্তি তো পেতেই হবে।’’ এ দিন ধৃত অমিতের পারিবারিক অবস্থাও ভাল নয় বলে জানা গিয়েছে। বাবা রিকশা চালান। অমিতও কোনও কাজ করে না। আর লালু তাসা পার্টিতে কাজ করে বলে জানা গিয়েছে। এই তিন যুবকই শহরের রাস্তায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বেপরোয়াভাবে ঘুরে বেড়াত বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। শহরবাসীর মতে, এর পরেও পুলিশ উদাসীন থাকলে এমন বেপরোয়া যুবকদের দৌরাত্ম্য আরও বাড়বে। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, কড়া নজরদারি চালানো হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন