টাকা পড়ে, মন্দির সংস্কার বন্ধ পাথরায়

পাঁচ বছর হল টাকা পড়ে রয়েছে। তবু থমকে পাথরার মন্দির সংরক্ষণ ও এলাকাটিকে ঐতিহাসিক পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার কাজ! কারণ, জমি জট। এমন নয় যে স্থানীয় মানুষ জমি দেবেন না। কিন্তু শরিকি জমির সমস্যা রয়েছে। তাঁদের কে, কোথায় থাকেন তা চিহ্নিত করে খুঁজে বের করতে ব্যর্থ প্রশাসন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পাথরা শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৬ ০১:১১
Share:

অযত্নে নষ্ট হচ্ছে প্রাচীন মন্দির।

পাঁচ বছর হল টাকা পড়ে রয়েছে। তবু থমকে পাথরার মন্দির সংরক্ষণ ও এলাকাটিকে ঐতিহাসিক পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার কাজ! কারণ, জমি জট। এমন নয় যে স্থানীয় মানুষ জমি দেবেন না। কিন্তু শরিকি জমির সমস্যা রয়েছে। তাঁদের কে, কোথায় থাকেন তা চিহ্নিত করে খুঁজে বের করতে ব্যর্থ প্রশাসন।

Advertisement

পাথরার মন্দির সংরক্ষণ নিয়ে আজীবন লড়াই চালিয়ে আসা ইয়াসিন পাঠানের আক্ষেপ, “এই লড়াইয়ের জন্য দেশ জুড়ে অনেক সম্মান পেয়েছি। কিন্তু এখনও পাথরা অবহেলার শিকার। এটা দেখতে পারছি না।” স্থানীয় বাসিন্দা অমিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “কেন জমি দেব না। বর্তমান মূল্য পেলেই জমি দিয়ে দেব বলে জানিয়েছি। কিন্তু আমরা তো শরিকি সমস্যা মেটাতে পারব না। সে ব্যাপারে প্রশাসনকেই সাহায্য করতে হবে।” এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলাশাসক সুশান্ত চক্রবর্তী (পঞ্চায়েত) বলেন, “আমাদের দিক থেকে সাহায্যের প্রয়োজন হলে নিশ্চয় করব। ওঁরা আমাদের জানাক।” আর পুরাতত্ত্ব সবের্ক্ষণ বিভাগের পশ্চিমবঙ্গ রেঞ্জের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারিন্টেনডেন্ট শান্তনু মাইতি বলেন, “জমি জটের কারণে উন্নয়নের কাজ আটকে রয়েছে। জট কাটাতে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা চলছে। কাজ অনেকটা এগিয়েছেও। আশা করি শীঘ্রই জট কাটিয়ে কাজ শুরু সম্ভব হবে।”

পাথরা গ্রামের চারদিকে ছড়িয়ে রয়েছে মন্দির। কাঁসাই নদী ঘেঁষা এই গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও মনোরম। সেই যুবক বয়স থেকে ইয়াসিন পাঠান জীর্ণপ্রায় এই মন্দিরগুলির সংস্কার-সংরক্ষণে লড়ছেন। তাঁর উদ্যোগেই ধীরে ধীরে মন্দিরের প্রাচীনত্ব প্রমাণিত হয়। ১৯৬১ সাল থেকে লড়ছেন ইয়াসিন পাঠান। তখন একটি পাথরের বিষ্ণু মূর্তি পাওয়া গিয়েছিল। মূর্তিটি বর্তমানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুতোষ মিউজিয়ামে রয়েছে। যে মন্দির সংস্কারের জন্য প্রথম অর্থ মিলেছিল যোজনা কমিশন থেকে। তত্‌কালীন যোজনা কমিশনের চেয়ারম্যান প্রণব মুখোপাধ্যায় ২০ টাকা দিয়েছিলেন। অনেক লড়াইয়ের পর ২০০৩ সালে পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ দফতর এই জায়গাটিকে ‘ঐতিহাসিক পর্যটন কেন্দ্র’ গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়। শুরু হয় মন্দিরের সংস্কারের কাজ। ১৯টি মন্দিরও সংস্কার করা হয়। পঞ্চরত্ন শিব মন্দির, মাকড়া পাথরের দুর্গামণ্ডপ, রাসমঞ্চ রয়েছে তেমনই রয়েছে নবরত্ন বা বুড়িমার থান-সহ ৩৪টি মন্দির রয়েছে গ্রামে। যার মধ্যে ১৯টি মন্দিরের সংস্কারও করা গিয়েছে। তারপর থেকেই কাজ বন্ধ।

Advertisement

অথচ মন্দির সংস্কারের পাশাপাশি গোটা পাথরার সৌন্দর্যায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। পর্যটকদের থাকার জন্য গেস্ট হাউস, বিনোদনের জন্য ফুলের বাগান, বোটিংয়ের ব্যবস্থা সবই হওয়ার কথা। এ জন্য মন্দির ও মন্দির সংলগ্ন ৯. ৯৭৫ ডেসিমেল জমি অধিগ্রহণেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০১০ সালে ৪ কোটি ৩৭ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা মঞ্জুর করা হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিচ্ছু হয়নি। কারণ, জমি অধিগ্রহণের কাজই সম্পূর্ণ করা যায়নি। পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “বছরের পর বছর কাজ পিছোলে, প্রকল্পের খরচ বাড়তে থাকলে সমস্যা তো বাড়বেই।”

আক্ষেপ করছেন ইয়াসিন পাঠানও। তাঁর কথায়, “এত লড়াইয়ের পরে স্বপ্ন অধরা থেকে গেলে মরেও শান্তি পাব না যে!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন