flood: বাঁধ বেঁধেই পুজো কাটল বানভাসি নিশিকান্ত, শুকদেবের

এগরা ও বাজকুল সড়কে এখনও হাঁটুসমান জল। ট্রাক্টরে করে মানুষকে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

Advertisement

গোপাল পাত্র

পটাশপুর শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২১ ০৭:১১
Share:

তালছিটকিনির ভাঙা নদীবাঁধ মেরামতির কাজ চলছে। নিজস্ব চিত্র।

পুজোর দিনগুলিতে প্রিয়জনের সঙ্গে মণ্ডপে মণ্ডপে যখন ঠাকুর দেখার আনন্দে মশগুল শহরতলির মানুষ। তখন বসতভিটে আর অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে নদীর ভাঙা বাঁধ সারাতে একদল মানুষ ঝপাঝপ ফেলে চলেছেন মাটির বস্তা। ঘর্মাক্ত শরীরগুলো ক্লান্তিহীন ভাবে কাজ করে চলেছে ভাঙা বাঁধ সারাতে। বন্যায় সর্বস্বান্ত হয়েছে পরিবারগুলি। পরিবারের জন্য পুজোর নতুন জামাকাপড় দূরের কথা রোজকার অন্ন সংস্থানই কিঠন হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদীর ভাঙা বাঁধা সারানোর কাজ করে যেটুকু উপার্জন হচ্ছে তাতেই কোনওরকমে ভাতের জোগাড় করছেন নিশিকান্ত, শুকদেব মণ্ডলরা।

Advertisement

স্থানীয়দের অভিজ্ঞতায় বারো বছর আগে ২০০৮ সালের বন্যাতেও কেলেঘাই নদী এ ভাবে ভাসায়নি। সেই বন্যায় নিজেদের সঞ্চিত ফসলটুকু অন্তত বাঁচাতে পেরেছিল মানুষ। এবার সে সুযোগটুকুও দেয়নি। গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে তালছিটকিনিতে বাঁধ ভেঙে সর্বস্বান্ত হয়েছেন পটাশপুর ও ভগবানপুরের কয়েক লক্ষ বাসিন্দা। বাঁধ দিয়ে জল ঢোকা বন্ধ হলেও এক মাসেরও বেশি সময় কেটে গেলেও এখনও প্লাবিত পটাশপুর ও ভগবানপুরের কয়েকশো গ্রাম। এগরা ও বাজকুল সড়কে এখনও হাঁটুসমান জল। ট্রাক্টরে করে মানুষকে যাতায়াত করতে হচ্ছে। প্রথম দিকে জেলা প্রশাসন ও সেচ দফতরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে নদীর বাঁধ মেরামতিতে বিলম্ব হয়। গ্রাম বাঁচাতে স্থানীয়রা নদীবাঁধ মেরামতিতে হাত লাগায়। তালছিটকিনি ও আমগেছিয়া-সহ এই এলাকার মানুষ বছরভর এই নদীবাঁধ মেরামতির কাজে যুক্ত থাকে। প্রশাসনের উদাসীনতায় এ বার তারাই সরঞ্জাম নিয়ে বাঁধ মেরামতি কাজে নেমে পড়ে। জেলা প্রশাসনের নির্দেশ আসার পরে সেই কাজের তৎপরতা বাড়ে।

প্রবল স্রোতের মধ্যে শালকাঠের বল্লা পুঁতে বাঁধ মেরামতিতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় প্রশাসনকে। কোনওভাবেই জলের স্রোত আটকানো যাচ্ছিল না। শেষমেশ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির দুটি ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে কাঠের বল্লা পুঁতে ৮ সেপ্টেম্বর জল আসা বন্ধ করা হয়। একদিকে বন্যায় সর্বস্বান্ত হয়ে ভিটে মাটি ছেড়ে রাস্তায় ত্রিপলের তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছে মানুষ। রোজগার বলতে কিছুই নেই। বাঁধ মেরামতির কাজ তাদের উপার্জনের একটা পথ খুলে দিয়েছে। দৈনিক সাড়ে তিনশো টাকার মজুরিতে কাজের সুযোগ মিলেছে। রাতে অতিরিক্ত কাজ করলে রয়েছে উপরি পারিশ্রমিক। পুজোর আনন্দের চেয়েও বাঁচার তাগিদে এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়নি বানভাসি মানুষ। উৎসবের হুল্লোড়ের চেয়েও দু’বেলা পরিবারের মুখে খাবার তুলে দেওয়াটাই ছিল তাদের কাছে পরম প্রাপ্তি।

Advertisement

দু’শোরও বেশি মানুষ দিনরাত নদীবাঁধ মেরামতির কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। রাত জেগেও কাজ চলছে। একদল নৌকায় করে নদীর চরের মাটি বস্তা ভরে নিয়ে আসছেন। একদল সেই সব বস্তা নদীবাঁধের উপর জমা করছেন। আর এক দল সেই বস্তা মাথায় করে নিয়ে গিয়ে কাঠের বল্লার মাঝে ফেলছেন। পুজোর চারদিন নাগাড়ে চলেছে কাজ। দুর্গাপুজো দেখার মতো ইচ্ছা বা অবকাশ নেই মানুষগুলোর। দূরের মণ্ডপ থেকে ঢাকের শব্দ ও গান শুনতে শুনতেই বাঁধ মেরামতির কাজ করে যেতে হয়েছে। কাজের ফাঁকে ফুরসত মিললে পুজোর আনন্দের আমেজ পেতে মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে চোখ রেখেছেন তাঁরা। দুর্গাকে আর চাক্ষুষ দেখা হয়নি। বাঁধ মেরামতির কাজে থাকা নিশিকান্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘ঘরে যা ছিল সব বন্যার জলে ভেসে গিয়েছে। এই কাজ করে দু’বেলার খাবার জুটছে। ঠাকুর আর দেখা হয়নি। বাঁধরে কাজ করতে করতে দূরের পুজোমণ্ডপের গান আর ঢাকের শব্দ কানে এসেছে। তা শুনেই মাকে প্রণাম জানিয়েছি।’’ তবু বিসর্জনের বেদনায় ভারাক্রান্ত মানুষগুলো আসছে বছর আবার আসার অঙ্গীকারে উমাকে বিদায় জানানোর সাথে জমা জলের যন্ত্রণা থেকে মুক্তির প্রার্থনাও জানিয়েছে।

সব ঠিক থাকলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জল পুরোপুরি নেমে যাবে বলে আশাবাদী সেচ দফতর। কাঁথি সেচ দফতরের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার উত্তম কুমার হাজরা বলেন, ‘‘পুজোর মধ্যেও চব্বিশ ঘণ্টা বিরামহীন ভাবে বাঁধ মেরামতির কাজ চলেছে। বেশিরভাগ গ্রাম থেকে জল নেমে গিয়েছে। যেটুকু জল রয়েছে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই তা নেমে যাবে।’’

দীপাবলির আগে হয়তো এটাই স্বস্তি বানভাসিদের কাছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন