বেলা বাড়তেই উধাও রিকশা-অটো

বেলা গড়াতেই সুনসান মেদিনীপুর শহরের ব্যস্ততম কালেক্টরেট মোড়। ছুটির দুপুরে শহরের মাঠগুলোয় ছেলেদের ভিড় থাকে। তা-ও উধাও। সকাল থেকেই রোদের প্রবল তেজ চোখ ধাঁধিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। আর সেই তেজে প্রাণান্তকর অবস্থা সাধারণ মানুষের। কবে মেঘ ভেঙে একটু বৃষ্টি নামে, আপাতত সে দিকে তাকিয়েই হা-পিত্যেশ করছেন সকলে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৫ ০০:৩৮
Share:

দুপুরের তীব্র গরমে সুনসান পথে একা ট্রাফিক পুলিশ। মেদিনীপুর শহরের রাঙামাটিতে।

বেলা গড়াতেই সুনসান মেদিনীপুর শহরের ব্যস্ততম কালেক্টরেট মোড়। ছুটির দুপুরে শহরের মাঠগুলোয় ছেলেদের ভিড় থাকে। তা-ও উধাও।

Advertisement

সকাল থেকেই রোদের প্রবল তেজ চোখ ধাঁধিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। আর সেই তেজে প্রাণান্তকর অবস্থা সাধারণ মানুষের। কবে মেঘ ভেঙে একটু বৃষ্টি নামে, আপাতত সে দিকে তাকিয়েই হা-পিত্যেশ করছেন সকলে। হাওয়া অফিস অবশ্য এতটুকু স্বস্তি দিচ্ছে না। মেদিনীপুরের তাপমাত্রা ঘোরাঘুরি করছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে। কোনও দিন ৩৮ ডিগ্রিতে নামছে। কোনও দিন ৪২ ডিগ্রিতে উঠছে। অস্বস্তিকর গরমে যেন ঘর থেকে বেরোনোই দায়। রোদের প্রবল তেজ সহ্য করতে না পেরে কেউ কেউ অসুস্থও হয়ে পড়ছেন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “আর্দ্রতা বেশি হওয়ার ফলেই আবহাওয়ার এই পরিস্থিতি। গরমে অসুস্থ হয়ে যাঁরা আসবেন, তাঁদের দিকে বাড়তি নজর রাখার কথা প্রতিটি হাসপাতালকে জানিয়ে
দেওয়া হয়েছে।’’

শনিবারই নিরঞ্জন নায়েক (৩৭) নামে এক রিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে মেদিনীপুর শহরে। বাড়ি পালবাড়ি এলাকায়। দুপুরে স্ট্যান্ডেই অসুস্থ হয়ে পড়েন নিরঞ্জন। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সন্ধ্যায় তাঁর মৃত্যু হয়। স্থানীয় কাউন্সিলর সৌমেন খান বলেন, “গরমে অসুস্থ হয়ে ওই রিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে।’’ এই পরিস্থিতিতে শহরের রিকশাচালকেরা দুপুরের পরে আর পথে বেরোচ্ছেন না। রিকশাচালক স্বপন বেহেরা, নিতাই পালদের কথায়, “বেলা গড়ালে পথঘাট সব ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। সকালের দিকে বেরোচ্ছি। দুপুরে একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার বিকেলের দিকে বেরোচ্ছি।’’ একই অবস্থা অটো চালকদের। অটো চালক কালু মিঁয়া, শঙ্কর পণ্ডিতরা বলেন, “দুপুরের দিকে যাত্রী থাকছে না। এই গরমে কে পথে বেরোবে?’’

Advertisement

বাস্তবিকই নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ি থেকে বেরোচ্ছেন না। বেরোলে টুপি-রোদ চশমা নিচ্ছেন। অনেকে আবার রোদের তেজ এড়াতে মুখে মাস্ক পরছেন। অনেকে রাস্তার পাশে একটু জিরিয়ে নিচ্ছেন। কেউ কেউ ঠান্ডা পানীয়তে চুমুক দিচ্ছেন। কলেজ ছাত্রী পারমিতা সাহার আক্ষেপ, “দুপুরের পর বাড়ি থেকে বেরোতেই ইচ্ছে করছে না। কবে যে একটু বৃষ্টি হবে!” মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা সৌরভ সাহু, প্রমিত গঙ্গোপাধ্যায়দের কথায়, “দুপুরের পর বাড়ি থেকে বেরোলেই চোখে-মুখে শুকনো গরমের তেজ এসে লাগছে। বিকেলেও ফুরফুরে বাতাসের দেখা মেলা ভার। স্কুল শিক্ষক ঋত্বিক ত্রিপাঠী, সঞ্জীব ভট্টাচার্যরা বলেন, “এক সপ্তাহ হল স্কুলে গরমের ছুটি পড়েছে। শেষের ক’দিন স্কুলে যেতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল।’’


গরম থেকে বাঁচতে চোখে-মুখে জলের ঝাপটা।

পরিস্থিতি দেখে চিকিত্‌সকদের পরামর্শ, বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় সঙ্গে ছাতা রাখুন। না হলে টুপি রাখুন। যাতে সরাসরি রোদ মাথায় না- লাগে। সুতির জামাকাপড় পরুন। প্রয়োজনে নুন-চিনির জল খান। জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “এই সময় বেশি করে জল খেতে হবে। সাধারণত, দিনে যেখানে ৩ লিটার জল খেতে হয়, সেখানে এই গরমের সময় ৫-৬ লিটার জল খাওয়াই ভাল।’’ তাঁর কথায়, “আর্দ্রতা বেশি হওয়ায় এই হাঁসফাঁস অবস্থা। এই সময় চড়া রোদ যতটা এড়ানো যায়, ততই ভাল। সম্ভব হলে ভিজে কাপড় মুখে জড়িয়ে রাখা যেতে পারে। আর আঁটোসাঁটো পোশাক একেবারেই নয়।’’

রবিবার ছিল আইপিএল ফাইনাল। সন্ধ্যায় ইডেনে মুখোমুখি হয় চেন্নাই সুপার কিংগস এবং মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। এক দিকে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, অন্যদিকে রোহিত শর্মা। সন্ধ্যা থেকেই অনেকের চোখ ছিল টিভির পর্দায়। খেলা দেখতে ক্লাবঘরগুলোয় ভিড় করেছিল অল্পবয়সী ছেলেদের দল। ভ্যাপসা গরমে খেলা দেখাতেও ছন্দপতন ঘটেছে। মেদিনীপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক বিনয় দাস
মাল বলছিলেন, “এই গরম সহ্য করা সত্যি কঠিন। দুপুরে স্টেডিয়ামে প্র্যাকটিস বন্ধ রাখতে বলেছি। সকাল-বিকেলে প্র্যাকটিস হোক। দুপুরে প্র্যাকটিস চললে খেলোয়াড়রা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে।’’

সৌমেশ্বর মণ্ডল, কিংশুক আইচ, রামপ্রসাদ সাউ, দেবরাজ ঘোষ এবং পার্থপ্রতিম দাসের তোলা ছবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন