মিনু প্রধান
বৃষ্টি পড়েছিল রাতে। সকাল সাড়ে ৫টার দিকে ঘুম থেকে উঠে বড় রাস্তার দিকে গিয়েছিলাম। ১১৬ বি জাতীয় সড়কের পাশের পুকুরে মাছ চাষ হয়েছে। ওই পুকুরের পাশেই দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ একটা বিকট শব্দ। রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখি একটি বাস আর ছোট গাড়ির মুখোমুখি ধাক্কা লেগেছে। ছোট গাড়িটি রাস্তার দিকে কাত হয়ে ঘুরে পড়ে রয়েছে। চিৎকার করে সবাইকে ডাকতে ডাকতে ছুটে গিয়েছিলাম গাড়ির কাছে। কিন্তু গিয়ে দেখি প্রায় সব শেষ। গাড়ির মধ্যে থেকে একজনের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম ‘জল জল’।
গাড়ির ধাক্কার আওয়াজ শুনে আশেপাশের আরও কয়েকজন ছুটে আসেন। ছোট গাড়ির সামনের অংশটি দুমড়ে মুচড়ে ভিতরের দিকে ঢুকে গিয়েছিল। চালক-সহ ছ’জন ছিলেন গাড়িতে। সকলেরই শরীর দলাপাকানো অবস্থায় গাড়ির ভাঙা অংশে আটকে ছিল। কারও মুখে কষ্ট পাওয়ার চিহ্ন দেখতে পাইনি। একজনের মুখে ‘জল, জল’ শব্দ শুনতে পেয়ে কয়েকজন তাঁর চোখে মুখে জল দিচ্ছিলেন। তবে ওই ব্যক্তির দিকে তাকানো যাচ্ছিল না। কোনওদিন এমন দৃশ্য দেখিনি। গা-হাত-পা থরথর করে কাঁপছিল আমার। চোখ ফেটে জল আসছিল।
দুর্ঘটনাস্থলের পাশেই একটি পানের দোকান রয়েছে। সেই দোকানের মালিকও ছুটে এসেছিলেন। দুর্ঘটনার পর বাসের চালক এবং খালাসিকে পালাতে দেখে তিনি তাদের তাড়া করেন। কিন্তু শেষ অবধি তাদের ধরা যায়নি। অনেকেই পাগলের মতো চিৎকার করে আরও লোকজনকে ডাকছিলেন। এরই মধ্যে কয়েকজন শাবল নিয়ে এসে গাড়ির দরজা ভেঙে আরোহীদের বার করার চেষ্টা করছিলেন। কারণ, গাড়ির ভাঙা অংশ এমন ভাবে দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছিল যে, আরোহীদের খালি হাতে টেনে বের করা সম্ভব হচ্ছিল না।
দুর্ঘটনাস্থলের পিছনে অনেক গাড়ি দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিত সামাল দেয়। বাকিরা ঘটনাস্থলে মারা গেলেও এক আরোহীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় লোকজন ও পুলিশ কাঁথি হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে শুনলাম হাসপাতালে তিনিও মারা গিয়েছেন। সকলেই নাকি মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা এবং তৃণমূলের নেতা-কর্মী ছিলেন। ওঁদের পরিবারের কী হবে তাই ভাবছি। মনে হয় গাড়ির চালক ঘুমিয়ে পড়েছিল। তবে এরকম ঘটনা যেন আর না ঘটে।