প্রতীকী ছবি।
সর্পদষ্ট বাবাকে নিয়ে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসেছিলেন গোয়ালতোড়ের সনাতন হাঁসদা। সনাতন বলেন, “নার্সরা বলেছেন, স্যালাইন কিনে আনতে হবে। ১০ বোতল কিনে আনতে বলা হয়েছিল। আপাতত ৪টে এনে দিয়েছি।” তাঁর কথায়, “সরকারি হাসপাতালে নিখরচায় সব পরিষেবা পাওয়া যায় বলে শুনেছিলাম। এখানে এসে দেখছি স্যালাইনও কিনে আনতে হচ্ছে।”
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এখন ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত। আক্রান্তের সংখ্যা চারশো ছুঁই ছুঁই। গায়ে জ্বর নিয়ে রোজই মেদিনীপুর মেডিক্যালে আসছেন জেলার বিভিন্ন প্রান্তের রোগীরা। অথচ সেই মেডিক্যালেই কি না স্যালাইনের সঙ্কট! নিয়মমতো হাসপাতালে সব পরিষেবা নিখরচায় পাওয়ার কথা, ওষুধপত্রও। কিন্তু এখানে রোগীর পরিজনেদের স্যালাইন কিনে আনতে হচ্ছে বাইরে থেকে। সমস্যা মানছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। মেদিনীপুর মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পঞ্চানন কুণ্ডুও মানছেন, "স্যালাইন নিয়ে সাময়িক একটা সমস্যা হয়েছিল। অর্ডার করা থাকলেও স্যালাইন আসছিল না। তাই একটু সমস্যা হয়।’’
হাসপাতাল সূত্রের খবর, মেদিনীপুর মেডিক্যালে মাসে প্রায় ১০ হাজার স্যালাইন লাগে। সেই মতো কলকাতা থেকে স্যালাইন আনানো হয়। কিন্তু গত দু’মাসে অতিরিক্ত স্যালাইন লেগেছে। ফলে, স্টক ফুরিয়ে আসে। মাসে যেখানে গড়ে ১০ হাজার স্যালাইন লাগে, সেখানে গত দু’মাসে ২৮ হাজার স্যালাইন ব্যবহৃত হয়েছে। হাসপাতালের এক কর্তার কথায়, “কত স্যালাইন প্রয়োজন তা আগে থেকে কলকাতায় জানাতে হয়। তা জানানোও হয়েছিল। কিন্তু দু’মাসে অতিরিক্ত স্যালাইন ব্যবহৃত হওয়ায় মাঝে একটু সমস্যা হয়।”
মেদিনীপুর মেডিক্যালে ন্যায্যমূল্যের ওষুধ দোকান রয়েছে। সেখান থেকে স্যালাইন এনে রোগীদের দেওয়া হচ্ছে না কেন? কেন তা বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে? হাসপাতালের এক কর্তার জবাব, “এ ক্ষেত্রে একটা সমস্যা রয়েছে। নিয়মানুযায়ী, চাহিদার কথা জানানোর ৪৫ দিন পরেও যদি কলকাতা থেকে না আসে তবেই ন্যায্যমূল্যের দোকান থেকে স্যালাইন নেওয়া যায়। তার আগে নয়।”
জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৩৯৯। রোজই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন জ্বরে আক্রান্তরা। আর এ ক্ষেত্রে স্যালাইন অপরিহার্য। ফলে, এই পরিস্থিতিতে স্যালাইনের চাহিদা বেড়েছে। জেলার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল মেদিনীপুর মেডিক্যাল। বিভিন্ন এলাকার রোগীরা ভাল চিকিত্সা পরিষেবা পেতে এখানে আসেন। এখন হাসপাতালে ৫৬০টি শয্যা রয়েছে। আর গড়ে রোগী ভর্তি থাকেন ৭০০-৭৫০ জন। অজয় দাস নামে এক রোগীর পরিজনের ক্ষোভ, “জেলার সবথেকে বড় হাসপাতালের যদি এই হাল হয়, তাহলে বাকি হাসপাতালগুলোর কী দশা বোঝাই যাচ্ছে!”