শুভমকে ঘিরে সহপাঠীরা ও শিক্ষিকা। নিজস্ব চিত্র।
শিশু দিবসে শুভমের মতো আরও অনেক শিশুর ভাল থাকায় উদ্যোগী হল ঝাড়গ্রাম শহরের একটি সরকারি প্রাথমিক স্কুল। সোমবার অরণ্যশহরের বলরামডিহি এলাকার অশোক বিদ্যাপীঠ নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে স্কুল প্রাঙ্গণে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের রক্তের জোগান সুনিশ্চিত করণ শিবিরের আয়োজন করা হল। থ্যালাসেমিয়া সম্পর্কে সচেতন করার পাশাপাশি, অভিভাবক ও এলাকাবাসীদের রক্তদানেও উৎসাহিত করলেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
বছর তিনেক আগে প্রাক প্রাথমিক শ্রেণির পড়ুয়া শুভম সিংহ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত বলে জানতে পারেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। অরণ্যশহরের এই স্কুলে বেশির ভাগই নিম্ন আয়ের পরিবারের ছেলেমেয়েরা পড়ে। শুভমের বাবা একটি মোটর গ্যারাজে কাজ করেন। মা গৃহবধূ। প্রতি মাসে রক্ত নেওয়ার জন্য টানা কয়েকদিন গরহাজির থাকতে হয় তাকে। সময় মতো রক্ত না পেলে অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। বিষয়টি জানার পরে স্কুল কর্তৃপক্ষ শুভমের পাশাপাশি, আরও অন্যান্য থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের রক্তের অভাব মেটানোর জন্য নিয়মিত সচেতনতা শিবির করার সিদ্ধান্ত নেন। ২০১৪ সাল থেকে প্রতি বছর স্কুলে নিয়ম করে স্কুলে সচেতনতা শিবির ও রক্তবিজ্ঞান শিবিরের আয়োজন করা হচ্ছে। শিবিরে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের জন্য রক্তদানে সবাইকে উদ্বুদ্ধও করা হয়।
শুভম এখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ছে। শুভমের মা বন্দনা সিংহ বলেন, “শুভমের রক্ত পেতে সমস্যা হলে স্কুল কর্তৃপক্ষ পাশে দাঁড়ান।” অভিভাবক মুনমুন বেরা, লক্ষ্মীপ্রিয়া পাত্র-রা বলেন, “অনেক অভিভাবকেরই আগে থ্যালাসেমিয়া ও রক্তদানের গুরুত্ব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা ছিল না। এখন স্কুলের দৌলতে চিত্রটা বদলে গিয়েছে।” স্কুলের টিচার-ইনচার্জ সুস্মিতা ঘোষ মণ্ডল, সহশিক্ষক সুব্রতকুমার শিট, মহাবীর বেরা ও দীপক বেরা-রা জানালেন, থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শুভমকে দেখেই তাঁরা স্বেচ্ছায় নিজেদের উদ্যোগে জনসচেতনতার কাজটা শুরু করেছেন। এদিন শিবিরে ঝাড়গ্রাম ব্লাড ব্যাঙ্কের চিকিৎসক আলো হাঁসদা রক্তদান ও রক্তবিজ্ঞান সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করেন।
এ দিন শিবিরে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন ঝাড়গ্রামের শুকনিবাসা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রেবা মাহাতো, ঝাড়গ্রাম ডাকঘরের কর্মী অরবিন্দ মাহাতো, সিআরপি কর্মী দয়াশঙ্কর তেওয়ারির মতো বিভিন্ন পেশার মানুষজন। রেবাদেবী বলেন, “এমন উদ্যোগে এসে ভীষণই ভাল লাগল। এই প্রথমবার রক্তদান করলাম। নিজের স্কুলেও এ রকম শিবির করব।” এসেছিলেন এসডিপিও (ঝাড়গ্রাম) বিবেক বর্মা, ঝাড়গ্রাম পশ্চিম চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রকাশ সরকার। তাঁদের কথায়, “শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিজেদের উদ্যোগে থ্যালাসেমিয়া সচেতনতা ও রক্তদানে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে নজির গড়েছেন।”
স্কুলের শিশু পড়ুয়া রনি মণ্ডল, প্রতিমা বেরা, উজ্জ্বল পাত্র, জিকো সরেন, সোমবারি হেমব্রমরা বলে, “রক্তদান করলে শুভমের মতো আরও অনেকের কষ্ট দূর হবে। বড় হয়ে আমরাও রক্তদান করব।”