শিক্ষায় আগুয়ান জেলায় আসন ফাঁকা উচ্চশিক্ষায় 

উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী কোনও শিক্ষার্থী যাতে বঞ্চিত না হন, অনেক আগেই সেই নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৯ ০০:১০
Share:

মহিষাদল রাজ কলেজ। ফাইল চিত্র।

প্রাণিবিদ্যার স্নাতকোত্তরে আসন সংখ্যা পূর্ণ না হওয়ায় ফেসবুকে ভর্তির কথা জানিয়েছেন মহিষাদল রাজ কলেজের বিভাগীয় প্রধান। তা নিয়ে বিতর্ক বেধেছে। তিনি এমনটা করতে পারেন কিনা সেই প্রশ্ন উঠেছে। তবে সেই সমালোচনার থেকেও যা বড় হয়ে দেখা দিয়েছে তা হল, স্নাতক ও স্নাতকোত্তরস্তরে পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন কলেজে বিস্তর আসন ফাঁকা পড়ে থাকার তথ্য।

Advertisement

উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী কোনও শিক্ষার্থী যাতে বঞ্চিত না হন, অনেক আগেই সেই নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভর্তিতে দলবাজি, টাকার লেনদেন ঠেকাতে রাজ্যের সব কলেজে অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়াও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে সে সবের পরেও শিক্ষায় আগুয়ান জেলা পূর্ব মেদিনীপুরের প্রথম সারির কলেজেও স্নাতকে বহু আসন ফাঁকা পড়ে রয়েছে।

পরিসংখ্যান বলছে, পাঁশকুড়া বনমালী কলেজে অনার্সের বিষয়গুলিতে প্রায় ৪০ শতাংশ আসনই ফাঁকা। পাসকোর্সেও ছাত্র ভর্তি হয়েছে প্রায় ৮০০জন। অথচ অতীতে এ?ই সংখ্যাটা ছিল সর্বাধিক ১৯০০। এগরার সারদা শশীভূষণ কলেজেও এ বার বিএ এবং বিএসসি-র বেশ কয়েকটি বিষয়ে আসন খালি পড়ে রয়েছে। বাংলা অনার্সে ২, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ৩৩, দর্শনে ১০, সংস্কৃতে ২টি আসন এখনও ভর্তি হয়নি। বিজ্ঞান বিভাগের ৪টি বিষয়েও বেশ কিছু আসন ফাঁকা পড়ে রয়েছে।

Advertisement

তাম্রলিপ্ত মহাবিদ্যালয়ের ছবিটাও আলাদা নয়। এই কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল মতিন জানিয়েছেন, স্নাতকস্তরে অর্থনীতি, ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং বাণিজ্য শাখার বিভিন্ন বিষয়ে বহু আসনই ফাঁকা পড়ে রয়েছে। কিছু বিষয়ে ছাত্র ভর্তি হলেও পরে তারা আর রেজিস্ট্রেশন করেনি। ফলে, সেই আসনগুলোও কার্যত ফাঁকাই।

কিন্তু উচ্চশিক্ষায় কেন এই পরিস্থিতি?

পাঁশকুড়া বনমালী কলেজের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের গাফিলতিকেই দায়ী করছেন ছাত্রদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, রাজ্য উচ্চ শিক্ষা দফতর স্নাতকে ভর্তির সময়সীমা বাড়ালেও পাঁশকুড়া বনমালী কলেজ কর্তৃপক্ষ নতুন করে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দেননি। ওপেন কাউন্সিলিংয়েরও ব্যবস্থা করা হয়নি বলে অভিযোগ। ডিএসও-র কলেজ সম্পাদক ঋভু মাজি বলেন, ‘‘আমরা অধ্যক্ষকে ভর্তির নতুন বিজ্ঞপ্তি প্ৰকাশের আবেদন করেছিলাম। কিন্তু অধ্যক্ষ কোনও ব্যবস্থাই নেননি।’’ অধ্যক্ষ নন্দন ভট্টাচার্য অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

গেরুয়া ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-র পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সহ-সংযোজক দিব্যেন্দু সামন্তের আবার অভিযোগ, ‘‘তৃণমূল অধিকাংশ কলেজে কিছু আসন টাকার বিনিময়ে সংরক্ষণ করে রেখেছিল। অনার্সে ভর্তির জন্য ৩০ থেকে ৮০ হাজার করে টাকা নেওয়া হয়েছে। সকলের পক্ষে এই টাকা দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই বেশ কিছু আসন খালি থেকে গিয়েছে।’’ অভিযোগ অবশ্য মানতে চায়নি তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন।

শিক্ষাবিদদের একাংশ আবার মনে করছেন, স্নাতক ও স্নাতকোতরে পড়ার আগ্রহ কমার প্রধান কারণ উপযুক্ত কাজের অভাব। রাজ্য জুড়েই নতুন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সে ভাবে তৈরি হয়নি। শিক্ষা মহল মনে করিয়ে দিচ্ছে, বাম আমলে ১৯৯৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত প্রায় নিয়মিত শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা হত। কিন্তু স্কুল সার্ভিস কমিশনের সেই পরীক্ষা এখন অনিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রাথমিক ও হাইস্কুলে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াও মামলার জটে আটকে। অন্য সরকারি চাকরির সুযোগও ক্রমশ কমেছে। বেসরকারি সংস্থাতেই জেনারেল লাইনে পড়াশোনা করে কাজের তেমন সুযোগ নেই।

পাঁশকুড়ার বর্ষীয়ান জাতীয় শিক্ষক নির্মলচন্দ্র মাইতির মতে, ‘‘রাজ্যে চাকরির হাহাকার চলছে। জেনারেল লাইনে পড়ে চাকরির সুযোগ কম। তাই পড়ুয়ারা কারিগরি শিক্ষায় ঝুঁকছে। আর কলেজগুলিতে স্নাতক, স্নাতকোত্তরে ছাত্র ভর্তি কমছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন