পোষা সাপের ছোবলেই মরলেন ওঝা

এ দিনের ঘটনার তদন্তও শুরু করেছে স্বাস্থ্য দফতর। প্রাথমিক ভাবে স্বাস্থ্যকর্তারা জেনেছেন, চিড়িমারসাইয়ের বাড়িতেই সাপ ছিল। রঞ্জনবাবু একটি সাপ পুষেওছিলেন। সেই সাপই এ দিন তাঁকে ছোবল মারে। স্থানীয় সূত্রের খবর, রঞ্জনবাবু ওঝাগিরি করতেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৭ ০০:৫৫
Share:

সর্পদষ্টকে ঝাড়ফুঁক করে বাঁচানোই তাঁর পেশা। তেমন এক ওঝারই এ বার মৃত্যু হল সাপের ছোবলে। যে ঘটনা প্রমাণ করে দিল, ঠিক সময়ে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা না করা হলে সর্পদষ্টকে বাঁচানো অসম্ভব।

Advertisement

রবিবার ঘটনাটি ঘটেছে মেদিনীপুর শহরে। মৃতের নাম রঞ্জন ঘোষ (৫০)। বাড়ি শহরের চিড়িমারসাইতে। রঞ্জনবাবু নিজে ওঝা ছিলেন। ফলে, পরিজনেরাও প্রথমে অন্য এক ওঝাকেই বাড়িতে ডেকেছিলেন। তিনি বিশেষ সুবিধা করতে না পারায় রঞ্জনবাবুকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তখন অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে। ফলে রঞ্জনবাবুকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, ‘‘ওই সর্পদষ্টকে অনেক দেরিতে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। এটা বড় ভুল।’’ রবীন্দ্রনাথবাবুর আরও সংযোজন, ‘‘শুনেছি এই সর্পদষ্ট নিজে ওঝা ছিলেন। তবে ঝাড়ফুঁক করে সর্পদষ্টকে বাঁচানো যায় না। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াই এ ক্ষেত্রে একমাত্র পথ।’’

এ দিনের ঘটনার তদন্তও শুরু করেছে স্বাস্থ্য দফতর। প্রাথমিক ভাবে স্বাস্থ্যকর্তারা জেনেছেন, চিড়িমারসাইয়ের বাড়িতেই সাপ ছিল। রঞ্জনবাবু একটি সাপ পুষেওছিলেন। সেই সাপই এ দিন তাঁকে ছোবল মারে। স্থানীয় সূত্রের খবর, রঞ্জনবাবু ওঝাগিরি করতেন। তবে তা মানতে নারাজ তাঁর পরিজনেরা। তাঁরা জানান, রঞ্জনবাবু মেদিনীপুরের এক বাজারে সব্জি বিক্রি করতেন।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রের খবর, রবিবার সকাল ৯টা নাগাদ সর্পদষ্ট হন রঞ্জনবাবু। আর পরিজনেরা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন বেলা ১২টায়। অথচ ঘটনাস্থল থেকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দূরত্ব বেশি নয়। হেঁটে এলেও মাত্র দশ মিনিট লাগে। জানা গিয়েছে, এই সময়ের মধ্যে বাড়িতে ওঝা ডেকে রঞ্জনবাবুকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন পরিজনেরা।

শুধু বাড়িতেই নয়, চিকিৎসকেরা মৃত বলে জানানোর পরে রঞ্জনবাবুর পরিজনেরা হাসপাতালেও ওঝা ডেকে নিয়ে এসেছিলেন। তাঁদের ধারণা ছিল, রঞ্জনবাবু বেঁচে উঠবেন। হাসপাতালের এক আধিকারিক বলছিলেন, “মেদিনীপুরের মতো শহরেও যে সকলে সমান সচেতন নন, এই ঘটনা তারই প্রমাণ।’’ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য দেহ মর্গে পাঠানো হয়।

এই প্রথম নয়, আগেও হাসপাতালে এমন ঘটনা ঘটেছে। দেখা গিয়েছে, সর্পদষ্টকে বাঁচাতে পরিজনেরা ওঝা ডেকে এনেছেন। ওঝাকে মর্গে ঢোকানোর জন্য মৃতের পরিজনেরা জোরাজুরি করছেন, এমন ঘটনাও ঘটেছে। জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তার স্বীকারোক্তি, “সর্বত্র সচেতনতা গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। তবে সাপের ছোবল নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির সব রকম চেষ্টা চলছে। এখন ওঝাদেরও সচেতন করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন