শিলদা-বেলপাহাড়ি সড়ক

কাজে দেরি, বেহাল রাস্তা নিয়ে দুর্ভোগ

এবড়ো খেবড়ো রাস্তায় উপর অজস্র বড় বড় গুটি পাথর। একটু অসতর্ক হলেই বাইক বা সাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখম হচ্ছেন আরোহীরা। বেলপাহাড়ি ব্লকের শিলদা থেকে শুকজোড়া হয়ে ব্লক সদর যাওয়ার রাস্তাটি তৈরির কাজ দু’বছরেও শেষ হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৬ ০৬:৩৮
Share:

শিলদার সেই বিপজ্জনক পথ। ছবি: কিংশুক গুপ্ত।

এবড়ো খেবড়ো রাস্তায় উপর অজস্র বড় বড় গুটি পাথর। একটু অসতর্ক হলেই বাইক বা সাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখম হচ্ছেন আরোহীরা। বেলপাহাড়ি ব্লকের শিলদা থেকে শুকজোড়া হয়ে ব্লক সদর যাওয়ার রাস্তাটি তৈরির কাজ দু’বছরেও শেষ হয়নি। অভিযোগ, ঠিকাদারের গড়িমসির কারণে রাস্তাটির কাজ হচ্ছে শামুকের গতিতে। মাঝে মধ্যে কাজ বন্ধও থাকছে। টেন্ডারের শর্ত অনুযায়ী, গত বছর জুলাইয়ে রাস্তাটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। অথচ এখনও শিলদা ও বেলপাহাড়ির দিকে রাস্তাটির কাজ হয়নি। ফলে, ওই রাস্তায় মোটর বাইক ও সাইকেল নিয়ে যাতায়াতে ভীষণই সমস্যা হচ্ছে।

Advertisement

রাস্তার কাজ শেষ করার দাবিতে বিডিও-র কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন বাসিন্দারা। কিন্তু তারপরও পরিস্থিতি বদলায়নি। এ দিকে, পুরনো প্রকল্পের কাজটি নির্ধারিত সময়ে শেষ না-হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর জঙ্গলমহল সফরের আগে অস্বস্তিতে পড়েছে প্রশাসন।

প্রশাসন সূত্রের খবর, বছর দু’য়েক আগে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় বেলপাহাড়ি ব্লকের শিলদা থেকে শুকজোড়া হয়ে ভেদাকুই পর্যন্ত আট কিলোমিটার মোরামপথটি পিচের রাস্তা করার জন্য ৪ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়। পরে অবশ্য প্রশাসনিকস্তরে সিদ্ধান্ত হয়, ভেদাকুইয়ের পরিবর্তে রাস্তাটি বেলপাহাড়ি পর্যন্ত তৈরি হবে। কাজের বরাত দেওয়া হয় অসমের একটি ঠিকাদারি সংস্থাকে। ওই সংস্থাটি গড়বেতার একটি ঠিকাদারি সংস্থাকে কাজটির সাব কন্ট্রাক্ট দেয়। সাব কন্ট্রাক্ট পাওয়া সংস্থাটির কর্ণধার হলেন এসএন দে। ২০১৪ সালের অক্টোবরে কাজটি শুরু হয়। টেন্ডারের শর্ত অনুযায়ী গত বছরের ২২ জুলাইয়ের মধ্যে কাজটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, খুবই ঢিমে তালে কাজ চলছে। দীর্ঘদিন রাস্তাটির কাজ বন্ধ ছিল। গত ফেব্রুয়ারিতে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বেলপাহাড়িতে একটি সরকারি অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। ওই দিন মন্ত্রীর কাছে রাস্তাটি নিয়ে নালিশ জানিয়েছিলেন শিলদার বাসিন্দারা। এরপর কালবৈশাখীর কয়েক দফার বৃষ্টিতে রাস্তাটি খন্দপথে বেহাল হয়ে পড়ে। একের পর এক দুর্ঘটনায় ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা গত ১৭ মে শুকজোড়ায় পথ অবরোধ করেন। ওই দিন বাইক উল্টে গুরুতর জখম হন এক আরোহী মহিলা। বিডিও-র হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে। রাস্তার কাজ ফের শুরু হয়। এরপর শিলদার দিকে রাস্তার কিছু অংশে গুটি পাথর বিছিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ডাস্ট দিয়ে রোলার চালানো হয়নি। ফলে শিলদার দিকে রাস্তাটি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। কয়েকদিন আগে ফের বাইক উল্টে গুরুতর আহত হন আরও এক মহিলা।

Advertisement

এই রাস্তাটি দিয়ে শিলদা থেকে বেলপাহাড়ির দূরত্ব কিছুটা কম হয়। ব্লকসদর বেলপাহাড়িতে ব্লক অফিস ও ব্লক গ্রামীণ হাসপাতাল রয়েছে। অন্য দিকে, শিলদায় রয়েছে জমজমাট বাজার ও কয়েকটি সরকারি দফতর। বিভিন্ন প্রয়োজনে শিলদা ও বেলপাহাড়ির মধ্যবর্তী শুকজোড়া, খড়পাল, সিমলা, পলাশবনি, কেচন্দা, বৈষ্ণবপুর, পড়াশিডাঙা, বামুনডিহা গ্রামের হাজার দশেক মানুষ এই রাস্তাটি নিয়মিত ব্যবহার করেন। বহু স্কুল ও কলেজ পড়ুয়াও যাতায়াত করে এই রাস্তা দিয়েই। গত এক মাসে ওই রাস্তায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাইক ও সাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে জখম হয়েছেন দুই মহিলা-সহ ১২ জন। রাতের অন্ধকারে বিপদের আশঙ্কা আরও বেশি। তবু প্রাণ হাতে নিয়েই যাতায়াত করতে হয় ৮-১০টি গ্রামের বাসিন্দাদের। এলাকাবাসীর একাংশ বলছেন, সাব কন্ট্রাক্ট পাওয়া সংস্থাটি একসঙ্গে জেলার আরও অনেক গুলি রাস্তার কাজ করছে। সেই জন্যই সংস্থাটি শিলদার রাস্তাটির কাজে গড়িমসি করছে।

বেলপাহাড়ির বিডিও সন্তু তরফদার বলেন, “বাসিন্দাদের অভিযোগ পেয়ে আমি নিজে ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু তারপরও কাজের কোনও অগ্রগতি হয়নি। বিষয়টি জেলা পরিষদের নজরে আনা হয়েছে।” সাব কন্ট্রাক্ট পাওয়া ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধার এস এন দে ফোন ধরেননি। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শৈবাল গিরি বলেন, “বিষয়টা আমি জানি। ওই ঠিকাদারকে একাধিক বার সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু উনি তা সত্ত্বেও গড়িমসি করছেন। এ রকম চলতে থাকলে বিষয়টি রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরকে জানাব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন