TMC

Soumen Khan: পিকে-র পরশে উত্থান সৌমেনের

মেদিনীপুরের পুরপ্রধান হয়েছেন সৌমেন আর উপপুরপ্রধান হয়েছেন অনিমা সাহা।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২২ ০৮:৪৯
Share:

ফাইল চিত্র।

গত বছর বিধানসভা ভোটের আগে কলকাতায় গিয়ে ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে সাক্ষাৎ। এরপরই হুগলির সাহাগঞ্জের জনসভায় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূলে যোগদান। বিধানসভা ভোটের পরে সরকার মনোনীত মেদিনীপুর পুর-প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান। আর এ বার পুরভোটের পরে পুরসভার নির্বাচিত পুরপ্রধান। তৃণমূলে তড়িৎ গতিতে চমকপ্রদ উত্থান মেদিনীপুরের সৌমেন খানের। পরবর্তী লক্ষ্য? বুধবার পুরপ্রধানের দায়িত্ব নিয়ে সৌমেন বলছেন, ‘‘আগামী দিনে মেদিনীপুরকে অন্য রূপে সাজানো।’’

Advertisement

মেদিনীপুরের পুরপ্রধান হয়েছেন সৌমেন আর উপপুরপ্রধান হয়েছেন অনিমা সাহা। তৃণমূলের অন্দরে গুঞ্জন, বিধায়ক জুন মালিয়া না কি এমনটাই চেয়েছিলেন। জুনের অনুগামীদের দাবি, এই মিলে যাওয়াটা কাকতালীয়! নির্বাচিত পুরপ্রধান হওয়া সৌমেনের কাছে খুব সহজ ছিল না। কারণ, শহরে তাঁর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীও সক্রিয়। তিনি জুনের অনুগামী। অন্যদিকে রয়েছেন দলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা, দলের শহর সভাপতি বিশ্বনাথ পাণ্ডবের অনুগামীরা। পুরভোটে প্রার্থী হয়েছিলেন প্রাক্তন বিধায়ক, প্রাক্তন উপপুরপ্রধান, দলের রাজ্য সম্পাদক আশিস চক্রবর্তীও। আশিস পরাজিত হয়েছেন। দলের অন্দরে গুঞ্জন, সৌমেনের সঙ্গে পুরপ্রধানের দৌড়ে ছিলেন বিশ্বনাথ। পুরভোটে জিতে গেলে নিশ্চিতভাবে এই দৌড়ে থাকতেন আশিসও। এবং অনেকটা এগিয়েই থাকতেন তিনি। দলের একটি অংশের মনে হয়েছিল, পুরপ্রধান না হন, উপপুরপ্রধান হতে পারেন বিশ্বনাথ। অবশ্য তা হয়নি। দলের ২০ জন জয়ীর মধ্যে ১০ জনই মহিলা। এই সূত্রেই না কি বিধায়ক চেয়েছিলেন উপপুরপ্রধান পদে থাকুন কোনও মহিলা কাউন্সিলরই। আর এ ক্ষেত্রে তাঁর পছন্দ ছিল অনিমাই। দলের তরফে আসা মুখবন্ধ খাম খোলা হয়েছে মঙ্গলবার রাতে। এরপরই যাবতীয় জল্পনায় জল পড়ে।

ছাত্রাবস্থা থেকেই সক্রিয় রাজনীতিতে সৌমেন। সক্রিয় ছাত্র রাজনীতিতে তাঁর আসা আটের দশকে। সৌমেন মেদিনীপুর শহরের তিনবারের কাউন্সিলর। মাঝে একবার তাঁর ওয়ার্ড মহিলা সংরক্ষিত হয়েছিল। সেই বার তিনি জিতিয়ে এনেছিলেন তাঁর স্ত্রী সুনন্দাকে। কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ সমীকরণে সৌমেন বরাবর সোমেন মিত্র, প্রদীপ ভট্টাচার্যদের অনুগামী বলে পরিচিত ছিলেন। তাঁর সঙ্গে অধীর চৌধুরীদের তেমন সুসম্পর্ক ছিল না কোনও সময়েই। সৌমেনকে তৃণমূলে টানতে সক্রিয় হয়েছিল ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের টিমই। গত বিধানসভা ভোটের মাস খানেক আগে ওই টিমের লোকেরা একাধিকবার তাঁর বাড়িতে এসেছেন। দেখা করে কথা বলেছেন। এক সময়ে কংগ্রেস ছাড়া নিয়ে দ্বিধাগ্রস্থ ছিলেন। ওই টিমের অনুরোধে সাড়া দিয়ে কলকাতায় গিয়ে সাক্ষাৎ করেছিলেন প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে। পিকে- র সঙ্গে সাক্ষাতের পরই তৃণমূলে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। অনেকের দাবি, এ জেলার মধ্যে সৌমেনই প্রথম নেতা (বিরোধী দলে থাকাকালীন), যাঁর সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন প্রশান্ত কিশোর। সৌমেন এক সময়ে জেলা কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। এআইসিসি- র সদস্যও ছিলেন।

Advertisement

‘‘আমরা সবাই মিলে কাজ করব’’- বলছেন নতুন পুরপ্রধান। দলের তরফে তাঁর নাম পুরপ্রধান হিসেবে ঘোষিত হওয়ার পরে গিয়েছেন সুজয়, বিশ্বনাথদের বাড়ি। চিত্রনাট্য যেন তৈরিই ছিল! বুধবার পুর বৈঠকে মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক কৌশিক চট্টোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, এ বার সভার সভাপতি নির্বাচন হবে। বৈঠকে বিশ্বনাথের নাম সভাপতি হিসেবে প্রস্তাব করেন সৌমেনই। সমর্থন করেন অনিমা। এরপর সভা পরিচালনা করেন বিশ্বনাথ। তৃণমূলের গোলক মাঝি পুরপ্রধান হিসেবে সৌমেনের নাম প্রস্তাব করেন। সমর্থন করেন সৌরভ বসু। প্রস্তাব আকারে দ্বিতীয় কোনও নাম আসেনি। নতুন পুরপ্রধান সকল কাউন্সিলরকে পুষ্পস্তবক দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এই পর্বে প্রবীণ সিপিএম কাউন্সিলর গোপাল ভট্টাচার্যের পা ছুঁয়ে প্রণাম করতে দেখা যায় সৌমেনকে। নবীন কংগ্রেস কাউন্সিলর মহম্মদ সইফুলকে জড়িয়ে ধরে আশীর্বাদ করেন তিনি। পুর বৈঠক চলাকালীন একাধিকবার বিশ্বনাথের হাত ধরতে দেখা গিয়েছে সৌমেনকে। কখনও হাত ধরে তাঁকে তাঁর পাশের চেয়ারে এনে বসিয়েছেন। কখনও হাত ধরে নিয়ে গিয়েছেন সভার সভাপতির চেয়ারে বসানোর জন্য। পুরপ্রধানের চেয়ারে যে চোরা কাঁটা আছে তা জানেন সৌমেন। তবে আপাতত ‘অল ইজ ওয়েল’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন