সাঁতার: নামেনি জমা জল। ত্রাণের জন্য সাঁতার কেটেই আসছেন গ্রামের মহিলার। শনিবার দাসপুরের নহলা চাঁইপাট গ্রামে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা
শিলাবতীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছিল ঘাটাল মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা। জল নামতে শুরু করলেও এখনও শতাধিক গ্রাম জলের তলায়। মজুত করা খাবার থেকেই চলছে খাওয়াদাওয়া। সেই ভাঁড়ারেও এখন টান পড়তে শুরু করেছে।
ঘাটাল শহর থেকে জল সরলেও দাসপুর-২ ব্লকের দশটি অঞ্চলের অনেক গ্রাম এখনও জলের তলায়। ঘাটাল ব্লকের মনোহরপুর-১ ও ২ এবং দাসপুরের তিনটি অঞ্চলও জলমগ্ন। গত শুক্রবার থেকে এই সব এলাকা থেকেও জল কমতে শুরু করেছে। যদিও শনিবারেও স্কুল, সরকারি অফিস থেকে বিদ্যুতের সাবস্টেশন— সবই জল থই থই।
ঘাটালের প্রতাপপুরে আচমকা বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জলমগ্ন হওয়ায় সমস্যায় পড়েন লক্ষাধিক মানুষ। এতদিন তাও বাড়ির মজুত করা খাবার দিয়ে কোনও মতে চলে যাচ্ছিল। দিন যত গড়াচ্ছে সেই মজুতও শেষের পথে। গত দশদিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। রয়েছে পানীয় জলেরও সমস্যা।
বিভিন্ন ক্লাব, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও সরকারের পক্ষ থেকে দিন কয়েক ধরে জলমগ্ন এলাকায় জল, শুকনো খাবার বিলি করা হচ্ছে। ত্রাণের কাজে হাত লাগিয়েছে রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রমের মতো প্রতিষ্ঠানও। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘ত্রাণের খাবার কতদিন চলবে বলুন তো? সন্ধ্যা নামলেই ঘুটঘুটে অন্ধকার। বিষধর সাপের উপদ্রব। বাড়ন্ত খাবার থেকে জ্বালানিও। কবে সব স্বাভাবিক হবে কে জানে।’’
শনিবার নৌকায় ত্রাণ নিয়ে ঘাটালের গোপমোহল, খাঞ্জাপুর, কামালপুর, রানিচকে ঢুকতেই বিভিন্ন বাড়ির ছাদ থেকে ‘জল আছে, জল আছে’ বলে চিৎকার করতে থাকেন স্থানীয়রা। ত্রাণ নিয়ে অভিযোগও উঠছে বিস্তর। এক বাসিন্দার অভিযোগ, “চাল-ডালের মতো জমানো খাবার শেষের দিকে। সন্ধ্যা নামলেই এলাকায় কোথাও আলো থাকে না। ফুরিয়ে এসেছে জ্বালানিও। এই ভাবে আর কতদিন?” খাঞ্জাপুর গ্রামের বধূ সোমা কোটাল বলছেন, “বাড়িতে জল ঢুকে গিয়েছে। ছাদেই কোনওরকমে আছি। কেরোসিন তেলও শেষ। একটি মোমবাতি দু’দিন চলছে। এ বার চলবে কী করে।”
সমস্যার কথা মানছেন জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকও। তাঁর কথায়, “সব ত্রাণই তো শুকনো। সরকারি ভাবে জ্বালানির কোনও ব্যবস্থা তো করা হয়নি। রেশনের সাহায্যেও বিলি সম্ভব নয়। সত্যিই খুব সমস্যা।” ঘাটালের মহকুমাশাসক পিনাকিরঞ্জন প্রধান বলেন, “ত্রাণের কোনও সমস্যা নেই। পঞ্চায়েতের মাধ্যমে সরবরাহ করা হবে।”