উপকূল পুলিশের হাতে আটক ট্রলার। নিজস্ব চিত্র
কালো রঙের নৌকা ঘিরে বাড়ছে রহস্য।
গোপালপুর এলাকা থেকে সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার সময় সোমবার একটি ট্রলারের মৎস্যজীবীরা সমুদ্রে কালো রঙের নৌকা ভাসতে দেখেন। সন্দেহ হওয়ায় তাঁরা বিষয়টি উপকূল রক্ষীকে জানান। তার ভিত্তিতে তল্লাশি শুরু হয়েছিল বলে জানিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পরেও ওই কালো রঙের নৌকার সন্ধান পাওয়া যায়নি। বরং তল্লাশি অভিযানে সোমবার রাতে পেটুয়াঘাটে অন্য একটি ট্রলারের সন্ধান পায় জুনপুট উপকূল থানার পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, কমলা রঙের ওই ট্রলারটির নাম ‘বাবা লোকনাথ’। ওই ট্রলারের মৎস্যজীবীদের জুনপুট কোস্টাল থানার পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে। সেই মৎস্যজীবীরা জানিয়েছেন, ওই ট্রলারের মালিক অসিত পাহাড়ি কাকদ্বীপের বাসিন্দা। তাঁরা পেটুয়াঘাট মৎস্য বন্দরের কাছে খেজুরির হিজলিতে ধর্মীয় স্থানে প্রার্থনার জন্য এসেছেন। ওই ট্রলারে জাল ও মাছ ধরার নানা উপকরণ রয়েছে। পুলিশের দাবি, যে কালো নৌকার কথা মৎস্যজীবীরা উপকূল রক্ষী বাহিনীকে জানিয়েছিলেন, এটি হয়তো সেটি নয়।
এদিকে, ওই কমলা রঙের ট্রলারটি নিয়েও ধোঁয়াশা দেখা গিয়েছে। মৎস্য দফতরের সহ-অধিকর্তা রামকৃষ্ণ সর্দার বলেন, “খোঁজ নিয়ে জানলাম, বাবা লোকনাথ নামে অসিত পাহাড়ির কোনও ট্রলার নেই। তাছাড়া ওই ট্রলারটি সোমবার বিকেলে বগুড়ান জলপাইর কাছে সমুদ্রে এক জায়গায় অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল। তার কারণ কী? সে নিয়েও আমরা তদন্ত করছি।’’ এক কথা ‘কাকদ্বীপ ফিশারম্যান অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনে’র সম্পাদক বিজন মাইতির মুখে। তিনি বলেন, “অসিত পাহাড়ির বাবা লোকনাথ নামে কোনও ট্রলার নেই।’’
মৎস্য দফতর সূত্রে প্রকাশ, জুনপুট, শৌলা, বগুড়ানজলপাই, ভোগপুরের সমুদ্র উপকূলে মাঝে মধ্যেই রাতে মৎস্যজীবীদের চোখে অচেনা নৌকা চোখে পড়ে। ওই এলাকায় কোনও অসাধু চক্র রয়েছে বলে মৎস্য দফতরের প্রাথমিক অনুমান। তাই কালো নৌকার রহস্য উন্মোচন এবং কাকদ্বীপের ‘বাবা লোকনাথ’ ট্রলারের মৎস্যজীবীদের ভাল করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশকে জানিয়েছে মৎস্য দফতর।
কালো রঙের নৌকার বিষয়টিও পুলিশ প্রশাসন হালকা ভাবে নিচ্ছে না। কারণ, মৎস্য দফতরের দাবি, ভারতীয় মাছ ধরার ভুটভুটি, টু’সিলিন্ডার নৌকা বা ট্রলারগুলির কমলা রঙের হয়। তা হলে এখানে কালো রঙের নৌকা আসছে কোথা থেকে? আদৌ কি সে রকম কোনও নৌকা দেখা গিয়েছিল? কোস্টাল পুলিশ জানিয়েছে, যে মৎস্যজীবীরা ওই কালো নৌকা দেখার দাবি করেছিলেন, গভীর সমুদ্রে চলে যাওয়ায় তাঁদের সঙ্গে এখন আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। তবে উপকূল এলাকাকে দুষ্কৃতীরা অপরাধের করিডর হিসাবে ব্যবহার করতে পারে, এই আশঙ্কায় চিরুণি তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, “উপকূলরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে পুলিশের অত্যাধুনিক ও দ্রুত গতির এফআইভি স্পিডবোট ঘটনাস্থলের দিকে পাঠানো হয়েছে। চলছে চিরুণি তল্লাশি। উপকূলরক্ষী বাহিনীর দেওয়া অক্ষরেখা ধরে সোমবার রাতেই পুলিশের একটি দল ওই এলাকায় যায়। সেখানে থাকা অন্য ট্রলারের মৎস্যজীবীদের সেই কালো নৌকার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু কেউ তার সন্ধান দিতে পারেনি।’’
কালো নৌকা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি উপকূলরক্ষী বাহিনী। উপকূল রক্ষীবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় হলদিয়া শাখার এক আধিকারিক বলেন, “এই বিষয়ে পরে সাংবাদিক বিবৃতি দেওয়া হতে পারে। তবে এখনই এ নিয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।’’