ভেঙেছে ঘর, উপড়েছে বিদ্যুতের খুঁটি, ক্ষতি চাষেও

ঝড়-বৃষ্টিতে লন্ডভন্ড জেলা

রবিবার সন্ধ্যায় ঝড়ের দাপটে লন্ডভন্ড হয় তমলুক শহরে বইমেলা থেকে শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের বলরামপুরে গ্রামীণ মেলার অনুষ্ঠান।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৯ ০৭:৫০
Share:

ভেঙে পড়েছে গোটা ঘরটাই। হলদিয়ার সুতাহাটায়।

প্রবল বেগে ঝড়, সেই সঙ্গে বৃষ্টি। রবিবার সন্ধ্যাথেকে রাত পর্যন্ত তারই দাপটে লন্ডভন্ড গোটা জেলা। বহু জায়গায় গাছপালার পাশপাশি কোথাও ভেঙেছে বাড়ি, উপড়ে পড়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। মণ্ডপ ভেঙে পন্ড হয়েছে মেলা, খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন। লাইনে গাছ ভেঙে পড়ায় বেশ কয়েক ঘণ্টার জন্য ব্যাহত হয় দিঘা-হাও়ড়া রুটে ট্রেন চলাচল। বৃষ্টির মধ্যে বাজ পড়ে জখম হয়েছেন দু’জন। কিছুদিন আগে টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে জমিতে জল জমে ক্ষতি হয়েছে আলু ও আনাজ চাষের। সেই ক্ষতি সামলে ওঠার আগেই ফের ঝড়-বৃষ্টিতে আরও বেশি ক্ষতির আশঙ্কায় চাষিরা।

Advertisement

রবিবার সন্ধ্যায় ঝড়ের দাপটে লন্ডভন্ড হয় তমলুক শহরে বইমেলা থেকে শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের বলরামপুরে গ্রামীণ মেলার অনুষ্ঠান। বইমেলায় অধিকাংশ স্টলের ছাউনি ছিঁড়ে গিয়ে বইপত্র ভিজে যায়। ত্রিপুরার একটি প্রকাশন সংস্থার কর্তা সুনন্দন রায় সোমবার বলেন, ‘‘রবিবার বিকেলে মেলায় ভিড় জমেছিল। আমাদের স্টলেও ভিড় ছিল। কিন্তু হঠাৎ ঝড়-বৃষ্টিতে স্টলের পিছনের দিকে আচ্ছাদন ছিঁড়ে গিয়ে জলের ঝাপটায় বইপত্র ভিজে যায়।’’ বইমেলা কমিটির সম্পাদক বিধান সামন্ত বলেন, রবিবার ছুটির দিনে বই কেনা ও বসন্ত উৎসব দেখতে মেলা প্রাঙ্গণে কয়েক হাজার মানুষের ভিড় ছিল। কিন্তু ঝড়বৃষ্টিতে সকলেই অসুবিধায় পড়ে। মেলার স্টলগুলিরও ক্ষতি হয়েছে।’’

বলরামপুর গ্রামীণ মেলা কমিটির সম্পাদক ও তৃণমূল নেতা বামদেব গুছাইত বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার থেকে মেলা শুরু হয়েছিল। মেলা মঙ্গলবার মেলা শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রবিবার ঝড়-বৃষ্টিতে মেলার অনেক ক্ষতি হওয়ায় ওইদিনই মেলা শেষ করে দেওয়া হয়।’’ বিদ্যুতের খুটি ভেঙে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে চণ্ডীপুর ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায়। চণ্ডীপুরের কান্ডপশরা হাইস্কুলের ছাত্রাবাসের ছাদের একাংশ ভেঙে গিয়েছে।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ঝড়-বৃষ্টির ফলে দিঘা-তমলুক ট্রেন চলাচলেও বিঘ্ন ঘটে। রেল সূত্রে খবর, দেশপ্রাণ স্টেশন ও লবণ সত্যাগ্রহ স্টেশনের মাঝে গাছ ভেঙে পড়ে ওভারহেড তার ছিঁড়ে যায়। সন্ধে সাড়ে সাতটা থেকে রাত প্রায় এগারোটা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। পরে গাছ সরিয়ে এবং ওভারহেড তার মেরামত করার পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। দিঘায় ঝড়ের ফলে ক্ষতি হয়েছে ক্ষুদ্র মৎস্যজীবীদের। ঝড়ের সময় উপকূল এলাকার প্রায় চল্লিশটি নৌকা সমুদ্রের কাছাকাছি মাছ ধরছিল। ঝড়ের কবলে পড়ে তড়িঘড়ি মৎস্যজীবীরা ফিরে এলেও নৌকার মাছ ও জাল নষ্ট হয়েছে বলে মৎস্যজীবীদের দাবি। ঝড়ের দাপটে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দু’টি নৌকাও। কাঁথি-৩ ব্লকে বহু গ্রামে বিদ্যুতের তারে গাছ পড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বহু এলাকা। কাঁথি-৩ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ কনিষ্ক পন্ডা বলেন, “ঝড়ে সর্ষে ও সূর্যমুখী চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।’’ সোমবার কাঁথির পদ্মপুকুরিয়া গ্রামে পুজো উপলক্ষে কয়েক হাজার মানুষকে খাওয়ানোর জন্য মণ্ডপ তৈরি হয়েছিল। রবিবারের ঝড়ে তা ভেঙে যায়।

হলদিয়া মহকুমার কয়েক জায়গায় কাঁচা বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। মহিষাদল ব্লকের বিভিন্ন জায়গায় আনাজ খেতে জল জমে যাওয়া ক্ষতির আশঙ্কায় চাষিরা। মহিষাদল থানার কাছে একটি নাট্যসংস্থার তোরণ ভেঙে পড়ায় হলদিয়া– তমলুকে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। বেশ কিছু কাঁচাবাড়িও ভেঙে পড়েছে বলে ব্লক সুত্রে খবর। বিডিও জয়ন্ত দে বলেন, ‘‘বেশ কিছু মানুষ ত্রিপলের জন্য ব্লকে এসেছিলেন। ফসলের ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ সুতাহাটার বিডিও সঞ্জয় শিকদার বলেন, ‘‘বেশ কিছু কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙেছে বলে খবর পেয়েছি। ত্রিপল নেওয়ার জন্য ব্লকে ক্ষতিগ্রস্তদের আবেদন করতে বলা হয়েছে। ’’গুয়াবেড়া পঞ্চায়েতের প্রধান শেক সাবিরুদ্দিন জানান, বেশ কিছু গাছ ভেঙেছে। কাঁচা বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। আনাজ চাষেও ক্ষতি হয়েছে।’’

মহিষাদলের অমৃতবেড়িয়ায় বজ্রাঘাতে বংশীবদন বেরা ও কার্তিক তুঙ্গ নামে দুই মৎস্যজীবী জখম হন। হলদিয়া টাউনশিপে সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ডে প্রবল ঝড়ে একটি হাই মাস্ট বাতিস্তম্ভ ভেঙে পড়ে।

রবিবার সন্ধ্যায় ঝড়-বৃষ্টিতে এগরার কুদি, এড়েন্দা, জগন্নাথকর বাড়-সহ পটাশপুরের পঁচেট, খাড় প্রভৃতি জায়গায় রাস্তার উপর গাছ ভেঙে পড়ে। পটাশপুরের একাধিক জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটি হেলে পড়েছে। বিচ্ছিন্ন হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। সোমবার রাত পর্যন্ত মেরামতির কাজ চলছে বলে বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন