বই হাতে দোকান সামলায় ছোট্ট নন্দিতা

বাড়িতে থাকে মা আর ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া দিদি নন্দিনীর সঙ্গে থাকে তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া নন্দিতা।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

তমলুক শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৯ ০১:১৪
Share:

নন্দিতা কুইল্যা। —নিজস্ব চিত্র

স্কুলে যাওয়ার আগে বাড়ির কাছেই দোকানে বসে খরিদ্দার সামলাতে হয় একরত্তি মেয়েটাকে। স্কুল থেকে ফেরার পরে যখন অন্য ছেলেমেয়েরা খেলায় মাতে তখনও তাদের সঙ্গে তার সব সময় মেতে ওঠা হয় না। কারণ দোকানে বসতে হবে। তারপর পড়াশোনা রয়েছে। সকাল থেকে রাত এই রোজনামচাতেই অভ্যস্ত হতে হয়েছে বছর নয়েকের নন্দিতাকে। বাবা থাকলেও তাকে কাছে পাওয়ার উপায় নেই। কারণ মাকে ছেড়ে তিনি চলে গিয়েছেন। দরিদ্র পরিবারে মায়ের সঙ্গে দাঁতে দাঁত চেপে ছোট থেকেই লড়াইয়ের অভ্যাস করে নিয়েছে সে। কারণ হার মানতে রাজি নয় তমলুক শহরের উত্তরচড়া শঙ্করআড়া এলাকার নন্দিতা কুইল্যা।

Advertisement

বাড়িতে থাকে মা আর ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া দিদি নন্দিনীর সঙ্গে থাকে তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া নন্দিতা। স্বামী বিচ্ছিন্না আরতি পরিচারিকার কাজের পাশাপাশি বৃদ্ধ বাবার সঙ্গে চা,পানের ছোট্ট দোকান চালান শহরের শঙ্করআড়া খাল ষোলো ফুকার গেট সংলগ্ন গঙ্গামন্দিরের কাছে। সেই দোকানেই বসে নন্দিতা। দোকানে বসেই খরিদ্দার সামলানোর পাশাপাশি পড়াও চলে। মাত্র ৯ বছর বয়সে আর পাঁচটা শিশুর মতো জগৎ তার নয়। তবে সে জন্য কোনও দুঃখ নেই তার। রোজ সকালে উঠে পড়াশোনা আর দোকানের কাজে সাহায্যের পরে নন্দিতা স্কুলে যায়। স্কুল থেকে ফিরে এসে ফের দোকান ও পড়াশোনা। উত্তরচড়া শঙ্করআড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান অমর প্রামাণিকের কথায়, ‘‘’বিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের অধিকাংশই খুব গরিব পরিবারের। কিন্তু নন্দিতার ক্ষেত্রে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার লড়াইটা আরও কঠিন। মাকে সাহায্য করার পাশাপাশি পড়াশোনাও করতে হচ্ছে তাকে। নন্দিতার পড়াশোনার প্রতি প্রবল জেদ দেখে অবাক হয়েছি।’’ এ ভাবে পড়াশোনা চালাতে অসুবিধা হয় না ? এক রত্তি মেয়েটার কথায়, ‘‘সকালে উঠে মা কাজে চলে যায়। দাদু দোকান খোলে । স্কুলে যাওয়ার আগে দোকানে গিয়ে সাহায্য করি। ওখানেই বসে স্কুলের পড়া করে নিই। তাই অসুবিধা হয় না।’’ খেলতে ইচ্ছা করে না? প্রশ্ন শুনে কচি মুখে চটপট জবাব, ‘‘মাঝেমধ্যে খেলি তো! তব সব সময় হয় না।’’

দুই মেয়েকে নিয়ে সংসার সামলানো আরতি বলেন, ‘‘ওই এক চিলতে দোকানে আর ক ’টাকা হয়। তার উপর মেয়েদের পড়াশোনা। কোনওরকমে চলছে। টাকার অভাবে মেয়েদের পড়ার জন্য কোনও টিউশন দিতে পারিনি। ছোটো মেয়েটা আমার কাজে সাহায়্য করতে দোকানে বসে। ওদের পড়াশোনার জন্য সাহায্য পেলে বড় ভাল হয়।’’ প্রতিবেশী বৈদ্যনাথ সিনহা বলেন, ‘‘নন্দিতাদের পরিবারের অবস্থা খুবই খারাপ। তার পরেও যে ভাবে মেয়ে দু’টো পড়াশোনা করছে তা দেখলে কষ্ট হয়। কারও সাহায্য পেলে ওদের পড়াশোনাটা বাঁচে।’’

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন