ফতোয়া দিয়েই গাছের নেশা ধরান সুব্রত স্যর

গড়বেতা হাইস্কুলের শিক্ষক সুব্রতববাবু স্বভাবগুণেই গাছ-প্রেমী। পরিবেশ বাঁচাতে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে বছরভর গাছ লাগান তিনি। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা মরসুমের বাছবিচার নেই।

Advertisement

রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য

গোয়ালতোড় শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৮ ০১:০৮
Share:

সবুজায়ন: গাছ লাগাতে ব্যস্ত পড়ুয়ারা। মধ্যমণি শিক্ষক সুব্রত নিয়োগী। নিজস্ব চিত্র

একটা গাছ না লাগালে প্র্যাকটিক্যাল খাতা দেখা হবে না— এমনই ফতোয়া দিয়েছিলেন ভূগোলের শিক্ষক। কয়েক বছর আগের সেই ফতোয়াই এখন সবুজ বাঁচাতে ছাত্রছাত্রীদের প্রেরণা। প্রথমে শুধু একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ভূগোল ক্লাসের পড়ুয়ারা, পরে স্কুলের এনএসএস বিভাগের ছাত্রছাত্রীরাও এই সবুজের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়েছে। ওরা প্রত্যেকেই এখন নিয়মিত গাছ লাগায়। আর সব সময় ওদের পাশে থাকেন স্কুলের সেই ভূগোলের শিক্ষক তিনি সুব্রত নিয়োগী।

Advertisement

গড়বেতা হাইস্কুলের শিক্ষক সুব্রতববাবু স্বভাবগুণেই গাছ-প্রেমী। পরিবেশ বাঁচাতে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে বছরভর গাছ লাগান তিনি। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা মরসুমের বাছবিচার নেই। কখনও স্কুল ক্যাম্পাস বা তার আশেপাশ, কখনও বা দূরের গঞ্জ এলাকা বা অফিসকাছাড়ির সামনে মাটি খুঁড়ে বেড়া দিয়ে গাছ লাগান তাঁরা। এইভাবে গত ৫-৬ বছরে গড়বেতা শহর এলাকায় হাজারেরও বেশি গাছ লাগিয়েছেন তাঁরা। সুব্রতবাবু পড়ুয়াদের মনে গেঁথে দিয়েছেন সেই অমোঘ সত্য— দূষণের হাত থেকে পরিবেশ, সভ্যতাকে বাঁচাতে, নিজে বাঁচতে গাছ লাগানো ছাড়া কোনও পথ নেই। সুব্রতবাবুর এই প্রেরণাতেই স্কুলের ভূগোল বিভাগের পড়ুয়ারা ও জাতীয় সেবা প্রকল্পের (এনএসএস বিভাগ) ছাত্রছাত্রীরা বছরভর গাছ লাগান। স্কুলের এনএসএস বিভাগের দায়িত্বও রয়েছে সুব্রতবাবুর ঘাড়ে।

কীভাবে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের গাছ লাগানোর নেশাটা ধরানো গেল?

Advertisement

সুব্রতবাবুর জবাব, ‘‘যেহেতু আমি ভূগোলের শিক্ষক, তাই ভূগোলের ছাত্রছাত্রীদের কাছে আমার কড়া নির্দেশিকা আছে প্রত্যেককে একটি করে গাছ লাগাতে হবে, তবেই আমি প্র্যাকটিক্যাল খাতা দেখব, প্র্যাকটিক্যালে নম্বর দেবো। এটাতেই কাজ হয়। ছাত্রছাত্রীরা গাছ লাগাতে শুরু করে।’’ শুধু গাছ লাগানোই নয়, তার ছবি তুলে প্রথম পাতায় সাঁটিয়ে তবেই প্র্যাকটিক্যাল খাতা জমা দিতে হয় ‘স্যর’-কে। দ্বাদশ শ্রেণির মিলন খান, শীর্ষেন্দু দত্ত, অন্বেষা রায়, অনুরাগ চৌধুরীরা বলছিল, ‘‘সুব্রত স্যর বলেন, গাছই পারে পরিবেশের সব জীবাণু নষ্ট করে দিতে। তাই আমরা নিয়মিত গাছ লাগাই, গাছের পরিচর্যা করি।’’

সবুজ রক্ষায় সুব্রতবাবুর এই লড়াইয়ের শরিক স্কুলের পরিচালন কমিটির সভাপতি অসীম ওঝা, প্রধান শিক্ষক চিন্ময় দে-সহ অন্য সহশিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীরা। অভিভাবকেরাও তাঁর এই উদ্যোগের প্রশংসা করছেন। গাছ লাগানোর জন্য বনদফতর থেকে মাঝেমধ্যেই চারাগাছ দেওয়া হয় স্কুলে। স্কুল থেকেও করা হচ্ছে একটি নার্সারি।

আজ, মঙ্গলবার পরিবেশ দিবসেও গাছ লাগাবে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। প্রেরণায় সেই সুব্রত স্যর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন