টিম পিকে-র নজরবন্দি ‘বিদ্রোহী’রা!

দলের খড়্গপুরের নেতারা তাহলে টিম-পিকে’র নজরবন্দি?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৯ ০০:০৩
Share:

—ফাইল চিত্র।

অনেকে রসিকতা করে বলেন, খড়্গপুর তৃণমূলের পাঁচ মাথার ‘মোড়’! উপ-নির্বাচনের মুখে দলের সেই পাঁচ মাথাই না কি এখন টিম-পিকে’র নজরবন্দি। দু’জনের উপর বাড়তি নজর রাখা হয়েছে। সকলকে ঠাসা কর্মসূচি ধরানো হয়েছে। সেই সূচি মেনেই সকাল থেকে শুরু করতে হচ্ছে প্রচার। শেষ হচ্ছে সেই রাতে। কখনও হেঁটে, কখনও বাইকে চেপে প্রচার সারছেন রেলশহরের তৃণমূল নেতারা। প্রচারেও না কি তাঁদের সঙ্গী হচ্ছেন টিম-পিকে-র লোকজন।

Advertisement

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের সংস্থার এক কর্মী মানছেন, ‘‘তৃণমূলের প্রচারে আমাদের সহকর্মীরা থাকছেন। নেতাদের গতিবিধির উপর নজর রাখছেন তাঁরা।’’ দলের খড়্গপুরের নেতারা তাহলে টিম-পিকে’র নজরবন্দি? সদুত্তর এড়িয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘নেতারা দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে প্রচার করছেন। ওই টিম তাদের কাজ করছে। আর কারও কাজ যদি প্রচারের ছবি তোলা হয়, তাহলে তো তাঁকে প্রচারে থাকতেই হবে।’’ তৃণমূলের খড়্গপুর শহর সভাপতি তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডে মানছেন, ‘‘ওই টিমের লোকেরা আমাদের সঙ্গে থাকছেন।’’ রেলশহরের তৃণমূলের পাঁচ নেতার আরেক নেতা বলছিলেন, ‘‘ঠাসা

সূচি ধরানো হয়েছে। প্রচারের জন্য নাওয়া-খাওয়ার সময়ও কুলিয়ে ওঠা ভার হচ্ছে।’’

Advertisement

বস্তুত, খড়্গপুরে তৃণমূলের লড়াইটা যতটা বাইরের, ততটা ভিতরেরও। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, রেলশহরে তৃণমূলের পাঁচ ‘মাথা’। গত পুরভোট, বিধানসভা নির্বাচন, এ বারের লোকসভা নির্বাচনেও সেই পাঁচ মাথার দলাদলির প্রভাব পড়েছে। হালকা হয়েছে তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক। উপ-নির্বাচনে যাতে দলীয় কোন্দলের প্রভাব না পড়ে সে জন্য কালীঘাটে প্রদীপ সরকার, রবিশঙ্কর পাণ্ডে, জহরলাল পাল, দেবাশিস চৌধুরী, শেখ হানিফ— এই পাঁচ নেতাকে ডেকে ঐক্যের নির্দেশ দিয়েছিলেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার প্রার্থী হওয়ার পরে প্রদীপ বিরোধী-শিবিরে ক্ষোভের সুরও শোনা যায়।

তৃণমূলের পাঁচ নেতার মধ্যে শহর তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি জহরলাল পাল, উপপ্রধান শেখ হানিফ প্রদীপের পাশে থেকেছেন। প্রাক্তন শহর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী পাশে পেয়েছেন দলের বর্তমান শহর সভাপতি তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডেকে। গোড়ায় প্রদীপের প্রার্থী হওয়া নিয়ে দেবাশিসের প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘‘দল প্রার্থী করেছে। দল বুঝবে।’’ পরে জানা গিয়েছেস খোদ দলনেত্রী মমতা ফোন করেন দেবাশিসকে। দলের ‘স্বাস্থ্যের’ স্বার্থে এক হয়ে কাজ করার নির্দেশ দেন। পরে সুর বদলেছেন দেবাশিসও। দলের প্রচারে প্রদীপকে পাশে

বসিয়ে বলছেন, ‘‘দিদি (যাঁকে প্রার্থী করেছেন, সেই প্রদীপ সরকারকে বড় ব্যবধানে জিতিয়ে আমাদের হাসার সুযোগ দিন।’’

আশঙ্কা অবশ্য পুরোপুরি দূর হচ্ছে না। দলের এক সূত্রে খবর, সার্বিক পরিস্থিতির পর্যালোচনায় বুধবার রাতে খড়্গপুরের পাঁচ নেতাকে নিয়ে ফের বৈঠক করেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি। ভোটে দলীয় কোন্দলের ছাপ পড়বে না তো? অজিতের দাবি, ‘‘দলের সকলে একসঙ্গেই কাজ করছেন।’’ জেলা তৃণমূলের আরেক নেতার মন্তব্য, ‘‘অন্তর্ঘাতের সুযোগ কম। খড়্গপুরের নেতারা তো টিম- পিকে'র নজরবন্দি হয়ে রয়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন