দেদার বিক্রি নিষিদ্ধ বাজি

জলবোমায় আঙুল উড়ল ছাত্রের

শনিবার রাতে পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুর থানা এলাকার নর গ্রামের এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, বেআইনি বাজি ঠেকাতে অভিযান, ধরপাকড়, প্রচার কোনও কিছুতেই সচেতনতা ফেরেনি। আর তাই ঠেকানো যায়নি এমন বিপদ।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

তমলুক শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৭ ০১:২০
Share:

জখম: হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কিশোর। নিজস্ব চিত্র

বাঁ হাতে জ্বলন্ত মোমবাতি আর ডানহাতে জলবোমা। সলতেয় আগুন ধরিয়ে পুকুরের জলে ছোড়ার তোড়জোড় করছিল বছর চোদ্দোর এক কিশোর। কিন্তু সলতেয় আগুন দেওয়া মাত্র নিষিদ্ধ ওই শব্দবাজি তার হাতেই ফেটে যায়। তীব্র শব্দে কেঁপে ওঠে চারপাশ, চার দিকে ধোঁয়া। একটু ধাতস্থ হতে নবম শ্রেণির ওই ছাত্র দেখে— ডান হাত রক্তাক্ত, বুড়ো আঙুল-সহ তালুর একাংশ ছিন্নভিন্ন।

Advertisement

শনিবার রাতে পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুর থানা এলাকার নর গ্রামের এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, বেআইনি বাজি ঠেকাতে অভিযান, ধরপাকড়, প্রচার কোনও কিছুতেই সচেতনতা ফেরেনি। আর তাই ঠেকানো যায়নি এমন বিপদ।

জখম কিশোর নীলাঞ্জন মাইতিকে পরিজন ও স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্ধার করে প্রথমে চণ্ডীপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে ভর্তি করেছিল। তবে অবস্থার অবনতি হওয়ায় রবিবার সকালে তাঁকে তমলুক জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়েছে। এখন ওই কিশোর মেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। তার অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এ দিন সকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, নীলাঞ্জনের ডান হাতের তালু জুড়ে ব্যান্ডেজ বাঁধা। চোখেমুখে যন্ত্রণার ছাপ। নীলাঞ্জন বলছিল, ‘‘ডান হাতে জলবোমা নিয়ে সলতেতে আগুন ধরাচ্ছিলাম । কিন্তু পুকুরে ছোড়ার আগেই ওই জলবোমা আমার হাতের মধ্যে ফেটে যায়।’’ কিন্তু নিষিদ্ধ এই শব্দবাজি পেলে কোথায়? এরপর আর মুখে রা কাড়ল না ওই কিশোর। কিছু বলতে নারাজ তার শয্যার পাশে থাকা প্রতিবেশী যুবকটিও।

Advertisement

কলকাতা থেকে দিঘাগামী সড়কে হলদি সেতু পার হলেই নরঘাট বাজারের অদূরে নর গ্রাম। গ্রামের মাইতি পাড়ায় কালীপপুজোর আয়োজন ছিল। সেই উপলক্ষেই স্কুলছাত্র নীলাঞ্জন শনিবার রাত ১১টা নাগাদ জলবোমা ফাটানোর জন্য বাড়ির কাছে পুকুরের পাশে যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, নর গ্রামের অদুরে ডিহি পুরুলিয়া, চক পুরুলিয়া, বিরামপুরের মতো গ্রামগুলিতে বেশ কিছু পরিবার বেআইনি বাজি তৈরির কাজে যুক্ত। এই সব গ্রামে চাইলেই মেলে চকোলেট, জলবোমা, গাছবোমার মতো নিষিদ্ধ সব শব্দবাজি। আর আতসবাজির সঙ্গেই তা ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন বাজারে। তাই মনে করা হচ্ছে, স্থানীয় ভাবেই ওই জলবোমা পেয়েছিল নীলাঞ্জন। কিন্তু পুলিশি অভিযান সত্ত্বেও কেন ঠেকানো যাচ্ছে না শব্দবাজি? চণ্ডীপুরের ওই এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশ সব কিছু জেনেও ব্যবস্থা নেয়না। আর তাই সহজে এলাকার শিশু-কিশোরদের হাতে নিষিদ্ধ শব্দবাজি চলে আসে।

পুলিশের অবশ্য দাবি, বেআইনি বাজি রুখতে লাগাতার অভিযান চলে। ধরাপকড়, বাজি বাজেয়াপ্ত নিয়মমাফিক সবই হয়। এ ক্ষেত্রে মানুষের আরও সচেতনতা জরুরি। আর নীলাঞ্জন জখম হওয়ার প্রসঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়ার মন্তব্য, ‘‘পুরো ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

কী এই জলবোমা

• নিষিদ্ধ শব্দবাজি।

• মূলত চকোলেট বোমের মতো, তবে আকারে তার থেকে বড়ও হয়।

• সবুজ সুতলিতে বাঁধা বোমের সলতেতে আগুন দিয়ে জলে ছুড়তে হয়।

• বোম ফাটলে জলে তীব্র আলোড়ন হয়, কানফাটা শব্দ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন