গোলকুঁয়াচকে মণ্ডপ সাজাতে কুলোর উপর ছবি আঁকার কাজ চলছে।
বাজেট কম তো কী? থিমের লড়াইয়ে বড় বাজেটের পুজোকে টেক্কা দিতে প্রস্তুত হচ্ছে ছোট পুজোগুলো। শহরের বড় বাজেটের পুজোগুলোর মধ্যে ফি বছরই দর্শকদের নজরকাড়ার প্রতিযোগিতা চলে। বছর কয়েক হল এই প্রতিযোগিতার বৃত্তে ঢুকে পড়েছে ছোট বাজেটের পুজোগুলোও। থিমের লড়াই শুরু হওয়ার পর থেকে তো পুজো যেন শিল্পের পর্যায়ে চলে গিয়েছে। উদ্যোক্তারাও পুজোর মাধ্যমে নানা বার্তা তুলে ধরার চেষ্টা করেন। এ বারও পুজোর শহরে ছবিটা একই। বরং ভিড় টানায় টেক্কা দিতে আরও বেশি তৎপর হচ্ছে ছোট বাজেটের পুজোগুলো। উদ্যোক্তারাও চেষ্টার কোনও খামতি রাখতে চাইছেন না!
কোতোয়ালিবাজার সর্বজনীন দুর্গোৎসবের এ বার ৪০ তম বর্ষ। পুজোর থিম ‘শান্তি রূপেণ: সংস্থিতা’। বাজেট প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। হানাহানির পৃথিবীতে শান্তির বার্তা দিতেই এই থিমের ভাবনা বলে জানা গিয়েছে। মণ্ডপের ভিতরে থাকবে হস্তশিল্পের নানা কারুকার্য। পুজো কমিটির পক্ষে কৌশিল পাল বলেন, “আমাদের পুজো এ বার শান্তিরই বার্তা দেবে।” ভিড় টানার নিরিখে ছোট বাজেটের পুজোগুলোর মধ্যে অন্যতম গোলকুঁয়াচক সর্বজনীন। থিম ‘দেবী মহালক্ষ্মীর দালান জোড়া বৈকৃতিক রহস্যে মোড়া’। বাজেট প্রায় এক লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা। দালান তৈরি হবে হোগলা পাতা দিয়ে। মণ্ডপের মধ্যে থাকবে পটচিত্রও। প্রতিমাতেও থাকছে চমক। থাকছে ১০ হাতের মহাকালী। ১৮ হাতের মহালক্ষ্মী। ৮ হাতের মহাসরস্বতী। পুজো কমিটির পক্ষে গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, “আশা করি, এ বারও সবার ভাল লাগবে।”
মল্লিকচকে মণ্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরি।
পুজো মানেই সারা বছরের ব্যস্ততার মাঝে এক টুকরো ফুরসত। তাই পুজোর ক’টা কোনওভাবেই নষ্ট করতে চাননা কেউই। মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে নানা সাজের প্রতিমা, আলোকসজ্জা দেখায় মেতে ওঠেন সকলে। মেদিনীপুর শহরে শতাধিক সর্বজনীন পুজো হয়। এরমধ্যে বেশ কয়েকটি বড় বাজেটের পুজো। কারও বাজেট দশ-বারো লক্ষ টাকা। কারও বা আরও বেশি। ভিড়ের নিরিখে ছোট পুজোগুলোর পক্ষে বড় বাজেটের পুজোগুলোকে টেক্কা দেওয়া কঠিন।
তবে বছর কয়েক হল ছবিটা বদলেছে। থিম পুজো করে দর্শকদের ভিড় টানছে ছোট বাজেটের পুজোগুলোও। লোকনাথপল্লি সর্বজনীনে উঠে আসবে গ্রামীণ পরিবেশ। থাকবে পটশিল্পের কারুকার্য। এক সময় পটশিল্পের রমরমা ছিল। দিন বদলের সঙ্গে অবশ্য সেই ঐতিহ্য ফিকে হয়েছে। শহরের বাড়মানিকপুর সর্বজনীনের মণ্ডপ হবে জমিদারবাড়ির দালানের আদলে। নতুন প্রজন্মের কাছে পুরো দিনের ধারনা দিতেই এই ভাবনা। এখানে দুর্গার নানা রূপের ছবি থাকবে। এক সময় পুজোর ভিড় ছুঁয়ে যেত শহরের রাজাবাজার, বল্লভপুর প্রভৃতি এলাকাকে। পরে ভিড় পৌঁছতে শুরু করে রাঙামাটি, বার্জটাউন, রবীন্দ্রনগর, অরবিন্দনগর, কেরানিতলা প্রভৃতি এলাকায়। তবে এখন অভিনবত্বে টেক্কা দিচ্ছে ছোট বাজেটের পুজোগুলোও। ফলে ভিড়ের নিরিখে পিছিয়ে নেই তারাও।
এ বারও থিম যুদ্ধে কম বাজেটের পুজোগুলো কী ভাবে টেক্কা দেয়, সেটাই দেখার।
ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।