Corona

অ্যাম্বুল্যান্স নেই! টোটোয় মুশকিল আসান তিন যুবক

পেশায় এই তিন টোটোচালকই এখন কোলাঘাট ব্লকে দিনরাত করোনা আক্রান্তদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া আসার ভরসা হয়ে উঠেছেন।

Advertisement

দিগন্ত মান্না

পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২১ ০৬:৫৬
Share:

টোটোচালকদের দেওয়া হচ্ছে সংবর্ধনা। নিজস্ব চিত্র।

করোনা সংক্রমণের নিরিখে জেলায় শীর্ষে রয়েছে কোলাঘাট ব্লক। করোনা আক্রান্ত কিংবা করোনা উপসর্গ যুক্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুল্যান্স পাওয়া মুশকিল কোলাঘাটে। সরকারি উদ্যোগে একটি অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা থাকলেও প্রয়োজনের সময় তা মেলে না বলেই অভিযোগ। অ্যাম্বু্ল্যান্সের এমন আকালের সময়ে কোলাঘাট ব্লকের করোনা আক্রান্তদের সামনে মুশকিল আসান হয়ে উঠেছেন শাহ আলম, গোলাম আলি ও সঞ্জীব প্রামাণিক।

Advertisement

পেশায় এই তিন টোটোচালকই এখন কোলাঘাট ব্লকে দিনরাত করোনা আক্রান্তদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া আসার ভরসা হয়ে উঠেছেন। দিন কয়েক আগে বাড়বড়িশা গ্রামে এক বৃদ্ধার শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। চেয়েও মেলেনি অ্যাম্বুল্যান্স। গ্রামেরই টোটো চালক যুবক সঞ্জীব ওই বৃদ্ধাকে টোটোয় চাপিয়ে রাতেই পৌঁছে যান হাসপাতালে। কোলাঘাট শহর থেকে কিছু দূরে রাইন গ্রাম। গ্রামের এক মহিলা জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন।করোনা উপসর্গ থাকায় পড়শিরা মুখ ফিরিয়ে নেয়। কোনও গাড়ি তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চায়নি। পাশের কেশাই গ্রামের যুবক টোটোচালক শাহ আলম পাশে দাঁড়ান। মহিলাকে নিয়ে আট কিলোমিটার দূরে পাইকপাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে পৌঁছে দেন তিনি। ছাতিন্দা গ্রামের বাসিন্দা টোটোচালক গোলাম আলিও দিনে বা রাতে অসুস্থ কাউকে হাসপাতালে পৌঁছে দিতে রোগীর বাড়িতে টোটো নিয়ে হাজির হয়ে যান।

মাস খানেক আগে যখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ে তখন কোলাঘাট ব্লকে অ্যাম্বুল্যান্সের অভাবে একের পর এক রোগী মৃত্যুর ঘটনা নাড়া দেয় তিন টোটো চালককে। টোটো চালানোর সূত্রে তিনজনের পরিচয় ছিল। সঙ্কট কালে মানুষকে বাঁচাতে তিনজনেই ঠিক করেন ব্লকের যে কোনও প্রান্তে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁরা ছুটে যাবেন।গত এক মাসে কয়েকশো রোগীকে সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে জীবন রক্ষা করেছেন এই ত্রয়ী। সংসারে অভাব থাকলেও রোগী নিয়ে যাওয়ার জন্য অতিরিক্ত ভাড়া নেন না এই তিন টোটো চালক। মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পরে রোগী পরিবহণের কাজ করছেন এঁরা।টাকার অভাবে পিপিই কিনতে পারেননি। শাহ আলমের কথায়, ‘‘সময় মতো অ্যাম্বুল্যান্স না পেয়ে কোলাঘাটে অনেকে মারা গিয়েছেন। এই ঘটনা যাতে আর না ঘটে তাই আমরা তিনজন এগিয়ে এসেছি। আমি মনে করি মানব ধর্মই আসল ধর্ম।’’ সঞ্জীব বলেন, ‘‘খুব ভাল লাগে যখন দেখি সময় মতো হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ায় কেউ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন।’’ গোলাম আলি বলেন, ‘‘করোনা রোগী নেওয়ার জন্য সাধারণ যাত্রীরা আর আমার টোটোয় ওঠে না। তাই আয় কমেছে। কিন্তু মানুষকে বাঁচাতে এখন এটা করতেই হবে।’’

Advertisement

করোনা যোদ্ধা এই তিন টোটোচালককে কুর্নিশ জানাতে কোলাঘাটের একটি স্বেছাসেবী সংস্থা সোমবার সংবর্ধনার আয়োজন করেছিল। কোলাঘাট বিট হাউস থানার সেই সংবর্ধনায় থানার আইসি সমর মিশ্র বলেন, ‘‘বিপদের দিনে মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের কর্তব্য। কোলাঘাটের এই তিনজন টোটো চালক যে ভাবে করোনা আক্রান্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তা সত্যিকারের প্রশংসার যোগ্য।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন