ফাইল চিত্র।
বিরোধী দলের যুবকর্মীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় মিম ছড়ালে, পাল্টা মিম ছড়াতেন শাসক দলের যুবকর্মীরা। বিরোধী দলের ছাত্রকর্মীরা ফেসবুকে নানা ছবি- মন্তব্য পোস্ট করলে, পাল্টা নানা ছবি- মন্তব্য পোস্ট করতেন শাসক দলের ছাত্রকর্মীরা। যে সব মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যেত! ইডি- র হাতে গ্রেফতার হয়েছেন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। গ্রেফতার হয়েছেন মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ অভিনেত্রী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ও। আর্থিক দুর্নীতির দায়ে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন তৃণমূলের ছাত্র- যুবদের অনেকেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় তেমন সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না তাঁদের। ‘খেলা’ যেন হচ্ছে একতরফা!
২৯ অগস্ট কলকাতায় সমাবেশ রয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের। এই সময়ে ব্লকে ব্লকে সমাবেশের প্রস্তুতি সভা শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। হওয়ার কথা মিছিলও। কোথায় কী! সেই জোশটাই যেন নেই! বুধবারই পশ্চিম মেদিনীপুরে এসেছিলেন টিএমসিপি- র রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য। চন্দ্রকোনা রোডে প্রস্তুতি সভা করেছেন তিনি। সভায় ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা, দলের জেলা যুব সভাপতি সন্দীপ সিংহ, টিএমসিপি- র জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী প্রমুখ। অন্য সময়ে এমন সভায় ছাত্রদের ভিড় উপচে পড়ে। ওই সভায় অবশ্য উপচানো ভিড় ছিল না। বরং অনেক ফাঁকা চেয়ার চোখে পড়েছে। পার্থ গ্রেফতার হতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাসছে অজস্র মিম। বেশিরভাগই যে বিরোধী দলের ছাত্র- যুবদের ছড়ানো, তা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না। দলীয় সূত্রে খবর, প্রস্তুতি সভায় টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি সৌরভকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়ায় যদি দলনেত্রীর নামে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে কেউ কুৎসা প্রচার করে, সঙ্গে সঙ্গে তার কাউন্টার করো। সবাইকে অনুরোধ করছি।’’ অনুরোধ কেন? পাল্টা কাউন্টারে নিশ্চয়ই ভাটা পড়েছে? টিএমসিপি- র জেলা সভাপতির জবাব, ‘‘সাংগঠনিক সভায় যা বলার বলেছি। সার্বিকভাবে। তবে ওই ঘটনার (পার্থর গ্রেফতারি) কোনও প্রভাব সংগঠনে পড়েনি।’’
স্কুলে শিক্ষক, কর্মী নিয়োগ ঘিরে নানা অভিযোগ। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক টিএমসিপির এক কর্মীর কথায়, ‘‘শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির বিষয়টি যোগ হয়েই এক লজ্জাজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যাঁরা চাকরির দাবিতে আন্দোলন করছেন, তারা তো আমাদের বয়সিই।’’ সম্প্রতি ঝাড়গ্রামেও এসেছিলেন টিএমসিপি- র রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর। ব্লকে ব্লকে মিছিল ও প্রস্তুতি সভা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সে ভাবে মিছিল, সভা এখনও চোখে পড়ছে না। জেলা জুড়ে তৃণমূলের ছাত্র- যুবরা এখন কার্যত নিশ্চুপ! এক সময়ে এখানকার দলীয় পর্যবেক্ষক ছিলেন পার্থ। তাঁর গ্রেফতারির পর অনেক নেতার ঘুম উড়েছে। অনেকের হাসি ফিকে হয়ে গিয়েছে। টিএমসিপি- র ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি আর্য ঘোষ বলেন, ‘‘এই গ্রেফতারে আমাদের কোনও সমস্যা হয়নি। আমরা নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখেই দল করছি। কে গ্রেফতার হল, তাতে আমাদের কিছু এসে যায় না!’’ যদিও দলের এক জেলা নেতা বলেন, ‘‘কার মাথায় কার হাত ছিল, দলের সবাই জানে। জেলা টিএমসিপি সভাপতি কাউন্সিলর ভোটের টিকিট কার জন্য পেয়েছিলেন, সেটাও সবাই জানে!’’
পাল্টা প্রচার স্তিমিত, প্রকাশ্যে মানছে না যুব তৃণমূলও। যুব তৃণমূলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সন্দীপ সিংহ বলেন, ‘‘আমাদের সংগঠন চাঙ্গাই রয়েছে!’’ তৃণমূলের এক যুবকর্মীর দাবি, ‘‘বিষয়টি স্কুলে নিয়োগ নিয়ে বলে চুপ আছি এখনও। না- হলে ফেসবুকে আঁকা- বাঁকা কথা বলতে আমরাও পারতাম! বিরোধী নেতাদের অন্য রকম অডিয়ো, ভিডিয়ো আমাদের কাছে কম নেই!’’