ডেবরা-কাণ্ডে মেদিনীপুরে

ক্ষমা করুন, দোরে দোরে ‘দাপুটে’ টিএমসিপির ছাত্র নেতারা

রবিবার ক্ষমা চাইতে মেদিনীপুর এসেছিলেন ডেবরা কলেজের ‘দাপুটে’ টিএমসিপির ছাত্র নেতারা। দিনভর শহরেই ছিলেন ওই পাঁচজন। জেলা তৃণমূল, যুব তৃণমূল, জেলা টিএমসিপি নেতাদের কাছ থেকে সময় চেয়ে দফায় দফায় কথা বলেছেন তাঁরা। মূল বক্তব্য এক। ভুল হয়ে গিয়েছে। কলেজে আর কোনওদিন অশান্তি হবে না।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:৪১
Share:

নিজের বাড়িতে চেয়ারে বসে এক তৃণমূল নেতা। সামনে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে দুই ‘দাপুটে’ টিএমসিপি নেতা। মেঝেতে বসে বাকি তিনজন।

Advertisement

দাঁড়িয়ে থাকা দুই টিএমসিপি নেতার উদ্দেশে তৃণমূল নেতা বললেন, ‘‘তোরা কত বড় নেতা হয়েছিস? সেদিন এতবার ফোন করলাম। একবারও ফোন ধরলি না? নিজেদের কী ভেবেছিস? দল তাড়িয়ে দিলে কেউ তোদের দিকে ফিরেও তাকাবে না!”

তৃণমূল সূত্রের খবর, রবিবার ক্ষমা চাইতে মেদিনীপুর এসেছিলেন ডেবরা কলেজের ‘দাপুটে’ টিএমসিপির ছাত্র নেতারা। দিনভর শহরেই ছিলেন ওই পাঁচজন। জেলা তৃণমূল, যুব তৃণমূল, জেলা টিএমসিপি নেতাদের কাছ থেকে সময় চেয়ে দফায় দফায় কথা বলেছেন তাঁরা। মূল বক্তব্য এক। ভুল হয়ে গিয়েছে। কলেজে আর কোনওদিন অশান্তি হবে না। শাসক দল অন্দরের খবর, পাঁচজন ক্ষমা চেয়েছেন ঠিকই। কিন্তু কেউ তাঁদের আশ্বস্ত করেননি। বরং বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে দল পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেছে। ঠিক সময় ঠিক সিদ্ধান্তই নেবে। ঠিক কেমন ব্যবহার পেয়েছেন ওই পাঁচজন তারই টুকরো ঝলক তৃণমূল নেতার বা়ড়িতে ওই কথপোকথন। সূত্রের খবর, কেন ফোন ধরেননি তার জবাবে ‘দাপুটে’ দুই টিএমসিপি নেতা বলেন, ‘‘ফোনটা সাইলেন্ট ছিল। তাই ধরতে পারিনি! আর এ রকম হবে না!” দলের এক সূত্রে খবর, শীঘ্রই কলেজে গিয়ে নতুন অধ্যক্ষ রূপা দাশগুপ্তের সঙ্গে দেখা করতে পারেন সেদিনের ঘটনায় জড়িত কয়েকজন নেতা। অধ্যক্ষের কাছেও তাঁরা ক্ষমাপ্রার্থনা করবেন।

Advertisement

ডেবরা কলেজের ছাত্র নেতারা কি এ দিন মেদিনীপুরে এসে আপনার সঙ্গে দেখা করে ক্ষমা চেয়েছেন? সদুত্তর এড়িয়ে জেলা তৃণমূলের সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, “সব কিছু সহ্য করা যায় না। দল কোনও অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবে না। ঘটনার পরে যে পদক্ষেপ করা হয়েছে তা রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশেই করা হয়েছে।” প্রসঙ্গত, ডেবরা কলেজে অধ্যক্ষকে কাজে যোগ দানে বাধা, শিক্ষকদের হেনস্থা, কলেজের প্রশাসক তথা খড়্গপুরের মহকুমা শাসককে কার্যত তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠার পরই পদক্ষেপ করে শাসক দল। টিএমসিপির ডেবরা ব্লক তৃণমূল সভাপতি সমর পালকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। শাসক দল সূত্রের খবর, এই পদক্ষেপের পর থেকেই টিএমসিপি নেতাদের মিইয়ে গিয়েছে ‘দাপট’। শুধু তাই নয়, পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে ক্ষমা প্রার্থনার কৌশল নিচ্ছেন ‘দাপুটে’রা।

এ দিন কারা এসেছিলেন ক্ষমা চাইতে? এক তৃণমূল নেতা জানিয়েছেন, দলে সমর ছাড়াও ছিলেন টিএমসিপির ইউনিট সভাপতি শুভেন্দু প্রামাণিক এবং আরও তিন ছাত্রনেতা। সমর এবং শুভেন্দুর বিরুদ্ধে গোলমালে মদত দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বাকি তিনজন নাকি সরাসরি জড়িত ছিলেন গোলমালে। ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে সাসপেন্ড হওয়া সমর বলেন, ‘‘আমি কিছু বলব না!” একই বক্তব্য শুভেন্দুরও।

সব দেখেশুনে এক তৃণমূল নেতা অবশ্য বললেন, ‘‘ক্ষমা চেয়েছে। তবে দেখে মনে হল সকলে সমান অনুতপ্ত নন। এক-দু’জনের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ একই রকম রয়েছে!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন