রসুলপুর নদীর পাড়ে বসানো হচ্ছে ভেটিভার ঘাস। — সোহম গুহ।
বর্ষা আসতেই ভাঙনের ভয় নিয়ে রাত জাগেন তারা। এই বুঝি, ঝুপ করে খসে পড়ল নদীপারের মাটি। ফি বছর বর্ষায় জলবন্দি কাটানোটাই যেন দস্তুর। বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও এই সমস্যা থেকে রেহাই পাননি খেজুরি-২ ব্লকের নিজ কসবা ও জনকা গ্রাম পঞ্চায়েতের কয়েক হাজার মানুষ। ছবিটা বদলাতে খেজুরির রসুলপুর নদীর তীরে বসানো হবে ‘ভেটিভার’ ঘাস। নদী বাঙন ঠেকাতে এই ঘাস কার্যকরী হবে বলে দাবি বিডিও পুলককান্তি মজুমদার ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অসীম মণ্ডলের।
কী এই ভেটিভার?
পশ্চিম ও উত্তর ভারতে এই ভেটিভার ঘাসের চাষ হয়। স্থানীয়ভাবে এর নাম খুশ। দৈর্ঘ্যে এই ঘাস প্রায় ১০৫ সেন্টিমিটার লম্বা। রোপণের বছর খানেকের মধ্যে ভেটিভার ঘাসের শিকড় মাটির গভীরে চলে যায়। এই ঘাসের শিকড় দৃঢ়ভাবে মাটিকে আবদ্ধ রাখে। ফলে জলস্রোতের আঘাতে মাটির ক্ষয়ের হার কমে। বিডিও পুলককান্তি মজুমদারের দাবি, জেলায় ভেটিভার ঘাস রোপণ করে নদী ভাঙন প্রতিরোধ করার উদ্যোগ খেজুরিতেই প্রথম। ইতিমধ্যে নদিয়া ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় এই ঘাস লাগিয়ে নদীভাঙন প্রতিরোধ করা গিয়েছে।”
পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অসীমবাবু জানান, নিজ কসবা পঞ্চায়েতের বোগা ও জনকা পঞ্চায়েতের গোড়াহার জালপাইতে ভাঙন বিধ্বস্ত রসুলপুর নদীর ধারে একশো দিনের কাজ প্রকল্পে ভেটিভার ঘাস লাগানো হয়েছে। বিডিও পুলককান্তিবাবুর কথায়, ‘‘নদীর ধারে দু’কিলোমিটার ব্যাপী বাঁধ তৈরি করতে কমপক্ষে দু’কোটি টাকার প্রয়োজন। সেখানে নদীপাড়ে ভেটিভার ঘাস রোপণে ব্যয় হয়েছে মাত্র ১৩ লক্ষ টাকা। স্থানীয় বাসিন্দাদের এই কাজে লাগানোয় অনেকের কর্মসংস্থানও হয়েছে।’’
প্রশাসন সূত্রে খবর, ভেটিভার ঘাস আমদানি না করলে খরচ আরও কমত। ভবিষ্যতে রসুলপুর নদীর ধারে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের কাজে লাগিয়ে ভেটিভার ঘাসের নার্সারি গড়ে তোলার প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়েছে। ভেটিভার ঘাস লাগানো হলে ভাঙন সমস্যা থেকে রেহাই মিলবে বলে আশাবাদী স্থানীয় সন্ধ্যারানি মাইতি, অমিয় দাস, আলপনা দাস, বর্ণালী দাস, মোহন গিরিরা। তাঁদের কথায়, “একশো দিনের কাজে ভেটিভার ঘাস লাগানোয় কাজের সুযোগ মিলেছে। আমাদের আশা, এ বার ভাঙন সমস্যা মিটবে।’’