ভিজে যাওয়া পাখিকে ঠান্ডা থেকে বাঁচাতে আগুন জ্বেলে সুস্থ করার চেষ্টা। নিজস্ব চিত্র
কয়েক মাস আগের কথা। জুলাইয়ের এক রাতে দমকলের হোসপাইপ দিয়ে জল ছিটিয়ে পাখির বাসা ভেঙে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরের আবাসন চত্বরের গাছে থাকা কয়েকশো পাখির নীড়হারার ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। ওই আবাসনের ঢিল ছোড়া দূরেই সম্প্রতি দেখা গেল অন্য চিত্র। হলদি নদীর তীরে শিকারিদের হাত থেকে পাখিদের বাঁচানোর জন্য লড়ছেন এক দল টোটো চালক।
স্থানীয় সূত্রের খবর, নদী তীরেই রয়েছে একটি টোটো স্ট্যান্ড। আট-দশ জন টোটো চালক সেখানে থাকেন। শেখ ভলু, রাজু বেরারা মতো চালকেরা সকালে পানের ট্রলার থেকে পান নামানোর কাজ করেন। বাকি দিনে এঁরা টোটো চালান। পাশাপাশি, পাখি বাঁচান। রাজুরা জানাচ্ছেন, নদীতে মাছ ধরার জন্য নানা ধরনের জাল পাতা হয়। সেই জালে আটকা পড়ে জল হাঁস, পানকৌড়ি, মাছরাঙা থেকে বড় জাতের বক। শীতের মরসুমে পরিযায়ী পাখিরাও এখানে আসে। ওই পাখিদের লোভে হাজির হয় পাখি শিকারিরা। বিষয়টি দেখতে পেয়ে পাখিদের বাঁচাতে এগিয়ে আসেন ওই টোটো স্ট্যান্ডের চালকেরা। কাঁপাকাঁপা অক্ষরে নদী পাড়ে বট গাছে ঝুলিয়ে দিয়েছেন নোটিস—‘পাখি মারবেন না। পাখি ধরবেন না’।
রাজু বলেন, ‘‘কয়েক দিন ধরে দেখেছিলাম, কেউ কেউ জলে কাদায় মাখামাখি হয়ে পাখি ধরছে। নিয়ম করেই ফাঁদ পেতে ওঁরা পাখি ধরে। তখনই আমরা ঠিক করলাম এভাবে পাখি ধরতে দেব না। তাই সকাল বেলায় নদীর দু’পাড়ে আমরা লক্ষ্য রাখি যে কোনও জালে পাখি আটকে গিয়েছে কি না। সে রকম পাখি পেলে তাকে উদ্ধার করে সুস্থ করি।’’
বৃহস্পতিবার হলদি নদীর তীরে গিয়ে দেখা গেল, কাদায় মাখামাখি একটি শালিক পাখিকে উদ্ধার করেছেন টোটো চালকেরা। ডানায় কাদা লেগে পাখিটির ওড়ার ক্ষমতা ছিল না। ডানা জলে ধুয়ে আগুনে শুকিয়ে পাখিটিকে রাখা হল ফলের পেটিতে। উদ্ধারকারীরা জানালেন, আর একটু সুস্থ হলেই পাখিটিকে ছেড়ে দেওয়া হবে। শেখ ভলু এ দিন বলেন, ‘‘এই তো সেদিন একটি বড় জলহাঁস জালে আটকে পড়েছিল। আমরা উদ্ধার করে সুস্থ করলাম।’’ শুধু পাখি নয়, বিপদগ্রস্ত অন্য পশুকেও সাহায্য করেন রাজু-ভলুরা। তাঁদের কথায়, ‘‘পাখি বাঁচাতে আমাদের এই উদ্যোগ খুবই ছোট। কিন্তু এ কাজ করে আনন্দ পাই।’’
হলদি নদীর তীরে নিয়মিত প্রাতর্ভ্রমণে যান স্থানীয় বাসিন্দা মোনালিসা মাইতি। তাঁর কথায়, ‘‘টোটো চালকদের ওই উদ্যোগ প্রশংসনীয়।’’ আবার হলদিয়া পুরসভার সাফাই সুপারভাইজার অলখ চন্দ্রের কথায়, ‘‘সকালে নদীর তীরে অনেক সময় আমাদের কাজ করতে হয়। দেখেছি, ওই টোটো চালকরা হামেশাই জালে আটকে থাকা পাখিকে সেবা-শুশ্রূষা করছেন। খুবই ভাল কাজ।’’
নিজেদের ওই ‘ক্ষুদ্র’ প্রচেষ্টা যাতে সফল হয়, সে জন্য শীতের মরসুমে ওই এলাকা-সহ নয়াচরে প্রশাসনের তরফে কড়া নজরদারির আর্জি জানাচ্ছেন রাজু-ভলুরা।