শালবনি

আদিবাসী কিশোরীকে গণধর্ষণের নালিশ, ধৃত

এক আদিবাসী কিশোরীকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠল শালবনি থানার শালডহরায়। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় খুড়তুতো বোনকে নিয়ে বাড়ির পাশেই জঙ্গলে শৌচকর্ম করতে যায় বছর ষোলোর ওই কিশোরী। সেই সময় কয়েকজন যুবক জোর করে দুই কিশোরীকে গভীর জঙ্গলে টেনে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ। ওই কিশোরীদের মারধরও করা হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদাদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৫ ০২:২৪
Share:

আদালতে শালবনির ঘটনায় ধৃতেরা

এক আদিবাসী কিশোরীকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠল শালবনি থানার শালডহরায়। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় খুড়তুতো বোনকে নিয়ে বাড়ির পাশেই জঙ্গলে শৌচকর্ম করতে যায় বছর ষোলোর ওই কিশোরী। সেই সময় কয়েকজন যুবক জোর করে দুই কিশোরীকে গভীর জঙ্গলে টেনে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ। ওই কিশোরীদের মারধরও করা হয়। মারে এক কিশোরী জ্ঞান হারায়। ছ’জন যুবক মিলে অপর কিশোরীকে ধর্ষণ করে। ঘটনার পরেই গ্রামবাসীরা দু’জন যুবককে ধরে ফেলে। শনিবার খবর পেয়ে পুলিশ ওই দুই যুবককে আটক করে। পরে এ দিন রাতে ঘটনার অভিযোগ দায়ের হলে রাজীব মুর্মু ও বাদল মুর্মু নামে ওই দুই যুবককে গ্রেফতার করা হয়। পরে ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আরও চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃত ছ’জনের মধ্যে চার জনকে রবিবার মেদিনীপুর আদালতে তোলা হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “অভিযোগ পেয়েই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয়েছে। ছ’জনের নামে অভিযোগ ছিল। ছ’জনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে।”

Advertisement

ঘটনাটি ঠিক কী?

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে খবর, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় শৌচকর্ম করতে গেলে জনা ছয়েক যুবক জোর করে ওই দুই কিশোরীকে গভীর জঙ্গলে নিয়ে যায়। চিৎকার শুরু করলে তাদের মুখে কাপড় চাপাও দেওয়া হয়। গভীর জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে দু’জনকে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। মারধরে খুড়তুতো বোন জ্ঞান হারায়। এরপরই ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়। রাত গড়ালেও মেয়েরা ফিরছে না- দেখে গ্রামে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়ে যায়।

Advertisement

রাতে জ্ঞান ফেরে খুড়তুতো বোনের। তার কাছে মোবাইল ফোন ছিল। জ্ঞান ফেরার পর মোবাইল ফোনে সে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরিবারের লোকেরা বিষয়টি গ্রামবাসীদের জানান। গ্রামের বেশ কয়েক জন দল বেঁধে ওই জঙ্গলে যায়। তখনও ছ’জন যুবক জঙ্গলেই ছিল। রাতে গ্রামবাসীদের দল বেঁধে আসতে দেখে তারা পালানোর চেষ্টা করে। অভিযুক্তদের মধ্যে চার জন পালিয়েও যায়। রাজীব মুর্মু ও বাদল মুর্মু নামে দু’জন গ্রামবাসীদের হাতে ধরা পড়ে। তাঁদের শালডহরায় নিয়ে আসা হয়। শনিবার সকালে ঘটনাটি জানাজানি হলে নতুনডিহি থেকে বেশ কয়েক জন গ্রামবাসী শালডহরায় যায়।

শনিবার সন্ধ্যায় ঘটনার খবর পৌঁছয় পুলিশের কাছে। এলাকায় গিয়ে পুলিশ দুই যুবককে আটক করে। রাতে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়। দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ দিন গভীর রাতে গ্রেফতার করা হয় শালকু মুর্মু এবং মঙ্গল মুর্মু নামে আরও দুই যুবককে। রবিবার সকালে গ্রেফতার করা হয় যোগেন্দ্র মুর্মু এবং মঙ্গল মুর্মু নামে বাকি দুই অভিযুক্তকে। ধৃত চার জনকে রবিবার মেদিনীপুর সিজেএম আদালতে হাজির করা হয়। ধৃতদের জেল হেফাজতের নির্দেশ হয়েছে। আজ, সোমবার ফের তাদের আদালতে হাজির করা হবে। অন্য দিকে, বাকি দুই ধৃতকেও আজ, সোমবার মেদিনীপুর আদালতে তোলা হবে।

মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রবিবার ওই কিশোরীর শারীরিক পরীক্ষাও হয়। অভিযোগকারিনীর বাবার কথায়, “সন্ধ্যায় মেয়ে বাড়ি থেকে বেরোয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসার কথা। রাতেও মেয়ে বাড়ি ফেরেনি দেখে খোঁজাখুঁজি শুরু করি। কোথাও খোঁজ পাইনি। পরে ওই ফোন আসার পর জানতে পারি, ওরা জঙ্গলেই আছে।” তাঁর কথায়, “যারা আমার মেয়ের উপর অত্যাচার করেছে, তাদের কঠোর শাস্তি চাই।”

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, কিশোরীর সঙ্গে ধৃত এক যুবকের আগে থেকেই পরিচয় ছিল। খুড়তুতো বোনকে নিয়ে সন্ধ্যায় সে জঙ্গলে আসবে, তা আগে থেকে ওই যুবক জেনে থাকতে পারে। কিশোরীর সঙ্গে এই যুবকের এ ব্যাপারে কথাও হয়ে থাকতে পারে। পরে ওই যুবকই খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে বাকি পাঁচ জনকে সঙ্গে নেয়। জেলা পুলিশের এক কর্তা অবশ্য বলেন, “শালডহরায় ঘটনায় অভিযোগ গুরুতর। তদন্তে সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

আজ, সোমবার ধৃতদের ফের আদালতে হাজির করা হলে শালকু সরেন-সহ ধৃতদের মধ্যে একাধিক যুবককে হেফাজতে চাইতে পারে পুলিশ। পুলিশের এক সূত্রের দাবি, শালকুকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ঘটনা সম্পর্কে নতুন তথ্য মিলতে পারে। যুবকরা কখন থেকে জঙ্গলে ওত পেতেছিল, তাদের উদ্দেশ্যই বা কি ছিল, কে অন্যদের জঙ্গলে জড়ো করেছিল, তা জানা যেতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন