পরিকাঠামোর অভাবে ধুঁকছে দক্ষিণবঙ্গের একমাত্র যক্ষ্মা হাসপাতাল।
যক্ষ্মায় আক্রান্তদের নির্দিষ্ট চিকিৎসার জন্যই পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা রোড সংলগ্ন ডিগ্রিতে ৫২ একর জমির উপর তৈরি হয়েছিল এমআরবাঙুর টিবি হাসপাতাল। অথচ স্বাস্থ্যভবনের উদাসীনতায় এখন সেখানেই রোগীদের ঠিকমতো চিকিৎসা হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
হাসপাতালটি সরাসরি স্বাস্থ্যভবন দেখভাল করলেও এমন অবস্থা কেন?
হাসপাতালের সুপার বিশ্বনাথ দাস বলেন, “হাসপাতালে কিছু সমস্যা রয়েছে। সে বিষয়ে স্বাস্থ্যভবনে জানানো হয়েছে। তবে রোগীদের চিকিৎসায় গাফিলতি হচ্ছে না।”
১৯৫০ সালে ৩১৭ শয্যার এই হাসপাতাল চালু হয়েছিল। সূত্রের খবর, বছর দশেক আগেও সবকটি শয্যাতেই রোগী ভর্তি থাকতেন। এমনকী শয্যার অভাবে বহু রোগীকে অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়ার নজিরও রয়েছে। অভিযোগ, এখন সরকারি নজরদারির অভাবে চিকিৎসা থেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন যক্ষ্মায় আক্রান্তরা।
চিকিৎসক-কর্মীর তথ্য:
মোট পদ আছে
•
চিকিৎসক ১৪ ৩
•
নার্স ৬৬ ১৪
•
কর্মী ২১৩ ৪৪
•
ওয়ার্ড মাস্টার নেই
হাসপাতাল সূত্রে খবর, ১১টি ওয়ার্ডের মধ্যে এখন মাত্র পাঁচটি ওয়ার্ড চালু রয়েছে। ১০০ থেকে ১২০ জন রোগী সব সময় ভর্তিও থাকেন। কিন্তু চিকিৎসক, নার্স থেকে কর্মীর অভাবে রোগীদের প্রয়োজনীয় পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তি রণজিৎ মিদ্যা, বিজয় সরেন, ভুবন নায়েকের অভিযোগ, “ওয়ার্ডে চিকিৎসকের দেখা মেলে না। দিনে একবার নার্স এসে ওষুধ দিয়েই চলে যান। ওয়ার্ডের নোংরা সাফাই হয় না।” শুধু চিকিৎসা নয়, অভিযোগ রয়েছে খাবার নিয়েও। যক্ষ্মায় আক্রান্ত বুদ্ধেশ্বর মান্ডি বলেন, “সকালে দুটো রুটি আর আলুর তরকারি। দুপুরে ভাত-মাছ দিলেও পেট ভরে না। তারপর সেই রাতের খাবার। ফলে খিদে পেলে বাড়ির খাবারই খেতে হয়।”
অব্যবস্থা: কেমন খাবার পান, দেখাচ্ছেন এক রোগী। নিজস্ব চিত্র।
রোগীদের অভিযোগ যে অমূলক নয়, হাসপাতালে গিয়ে তার প্রমাণও মিলেছে। সরকারি ভাবে রোগীদের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। পোশাকও রয়েছে। কিন্তু রোগীদের কেউ গামছা, কেউ লুঙ্গি পরে রয়েছেন। হাসপাতালের পোশাক পরেননি কেন জানতে চাওয়ায় তাঁদের উত্তর, ‘‘ওগুলো নোংরা। কাচা হয় না। তাই ও সব পরি না।’’ হাসপাতালে এখনও বিকল্প আলোর ব্যবস্থা নেই। ফলে লোডশেডিং হলে অন্ধকারেই থাকতে হয় রোগীদের। পানীয় জল নিয়েও অভিযোগ রয়েছে রোগীদের। হাসপাতালের এক কর্মীর আক্ষেপ, ‘‘হাসপাতালের পরিবেশ যে রকম বেহাল তাতে রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে। অথচ কোনও নজরই দেওয়া হয় না। রোগীদের নিয়মমতো শারীরিক পরীক্ষাও হয় না।”
জেলার একমাত্র যক্ষ্মা হাসপাতালের এমন দশা নিয়ে স্থানীয় বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাত বলেন, “বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আর্কষণ করা হবে।”