ফুড ইন্সপেক্টর নেই পুরসভায়, প্রশ্নে নজরদারি

নর্দমার পাশেই রান্না হচ্ছে পরোটা, মাংস

ব্যস্ত সড়কের ধারে আবর্জনায় ভরা পুরসভার নিকাশিনালার পাশেই বেলা হচ্ছে ময়দার পরোটা তৈরিতে ব্যস্ত খাবার দোকানের কর্মী। পাশেই টেবিলে বসে খাচ্ছেন ছেলে-মহিলা থেকে বয়স্করাও

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:১৩
Share:

খোলা জায়গায় চলে রান্না। নজরদারি কোথায়? নিজস্ব চিত্র

ব্যস্ত সড়কের ধারে আবর্জনায় ভরা পুরসভার নিকাশিনালার পাশেই বেলা হচ্ছে ময়দার পরোটা তৈরিতে ব্যস্ত খাবার দোকানের কর্মী। পাশেই টেবিলে বসে খাচ্ছেন ছেলে-মহিলা থেকে বয়স্করাও। তমলুক শহরের হাসপাতাল মোড়ের কাছে প্রকাশ্যেই চলছে ওই খাবারের দোকান।

Advertisement

শহরের মানিকতলা মোড়ের কাছেও প্রায় একই ছবি। পুরসভার নিকাশিনালার পাশে মাংসের দোকান। আবর্জনায় ভরা নিকাশি নালার পাশেই কোনও রাখা ঢাক ছাড়াই চলছে মাংস কাটা।

প্রায় এক বছর আগে রাজ্যে ভাগাড় কাণ্ডের পর নড়ে চড়ে বসেছিল সরকার। শুরু হয়েছিল বিভিন্ন খাবারের দোকান, রেস্তরাঁয় অভিযান। সেখান থেকে পুরসভা ও দুর্নীতি দমন শাখার অফিসাররা খাবারের নমুনা সংগ্রহ করছিলেন তার গুণমান পরীক্ষার জন্য। তমলুক পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর ও জেলা দুর্নীতি দমন শাখার আধিকারিকদল যৌথভাবে অভিযানের সময় দুটি রেস্তরাঁয় বেশকিছু দিনের পুরনো মাংস, মাছ ও বিভিন্ন খাবার উদ্ধার করেছিলেন বলে অভিযোগ। দু’টি রেস্তরাঁর মালিকের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করেছিলেন পুর কর্তৃপক্ষ। ওই অভিযানের জেরে শহরের অন্য রেস্তরাঁ, হোটেল এবং মাংসের দোকানের মালিকেরা নড়েচড়ে বসেন। কিন্তু পুর কর্তৃপক্ষের নিয়মিত অভিযান ও নজরদারির অভাবে ফের আগের ছবিই ফিরে এসেছে বলে অভিযোগ শহরবাসীর। এমনকি সপ্তাহখানেক আগে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের একটি দল পরিদর্শনে গিয়ে কয়েকটি রেস্তরাঁয় বাসি মাছভাজা ও মাংসের হদিস পেয়েছে বলে জানা গিয়েছে। আর এতেই প্রশ্ন উঠেছে পুরসভার নিয়মিত নজরদারির অভাব নিয়েও।

Advertisement

পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ সেনের অবশ্য দাবি, ‘‘পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের তরফে শহরের রেস্তরাঁ, খাবার হোটেল, মাংসের দোকানে মাঝেমাঝে অভিযান হচ্ছে। সপ্তাহখানেক আগে শহরের কয়েকটি রেস্তরাঁয় বাসি মাছ ও মাংস পাওয়ার বিষয়ে রিপোর্ট পেয়ে সমস্ত রেস্তোরাঁকে সতর্ক করা হয়েছে।’’

পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রে খবর, শহরে খাবার হোটেল, রেস্তরাঁ, মাছ-মাংসের দোকানগুলি স্বাস্থ্য সম্মতভাবে খাবার সামগ্রী বিক্রি করছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা-সহ নিয়মিত নজরদারির কথা পুর কর্তৃপক্ষের। এর জন্য তমলুক পুরসভায় স্যানিটারি কাম ফুড ইন্সপেক্টর পদ রয়েছে। তমলুক পুরসভায় ওই পদে নিযুক্ত আধিকারিক বছর আটেক আগে মারা যান। তারপর স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদে একজনকে নিযুক্ত করা হয়। তিনি জীববিজ্ঞানে স্নাতক। কিন্তু ফুড ইন্সপেক্টর পদে নিযুক্ত হতে হলে রসায়ন নিয়ে স্নাতক হওয়া আবশ্যিক। তাই ওই স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ফুড ইন্সপেক্টরের দায়িত্ব পাননি।

স্বাস্থ্য দফতরের একজন ফুড ইন্সপেক্টর গোটা জেলার দায়িত্বে রয়েছেন। ফলে শহরের খাবার হোটেল, রেস্তরাঁ, মাছ-মাংসের দোকানে নিয়মিত পরিদর্শন হচ্ছে না বলে অভিযোগ। যদিও পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের তরফে এক পুরপ্রধান-সহ ৮ সদস্যের একটি পরিদর্শক দল রয়েছে। পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মী জানান, পুরসভার ফুড ইন্সপেক্টর (খাদ্য পরিদর্শক) পদ শূন্য থাকায় শহরের খাবার হোটেল, রেস্তরাঁ ও মাছ–মাংসের দোকানে পরিদর্শনের সময় ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে।

সমস্যা মেনে নিলেও পুরপ্রধান বলেন, ‘‘পুরসভার স্বাস্থ্যবিভাগের পরিদর্শক দলকে নিয়মিত হোটেল, রেস্তরাঁ ও মাছ-মাংস দোকান পরিদর্শনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে সব দোকানে অনিয়ম ধরা পড়বে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন