বহিরাগতদের হঠিয়ে জিত ভোটারদেরই

কোথাও বুথের কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে শাসক দলের কর্মীরা শেষ মুহূর্তের নির্দেশ দিচ্ছেন। আবার কোথাও বুথের কাছে শাসক দলের হয়ে পুরসভা এলাকার বাইরে থেকে এসে ভিড় জমিয়েছেন পঞ্চায়েত এলাকার নেতারা। কিন্তু দিনের শেষে তমলুক পুরসভার অধিকাংশ ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সামনে ভোটারদের লম্বা ভিড় ও জেদের কাছে হার মানল বহিরাগতরা। তাই বহিরাগতদের সরানোর জন্য বিরোধীদের চাপের মুখে পড়ে পুলিশ ব্যবস্থা নিল।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

তমলুক শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৫ ০১:১৭
Share:

জেলা প্রশাসনিক ভবনে কড়া নিরাপত্তায় তমলুকে পুর নির্বাচনের ইভিএম। পার্থপ্রতিম দাসের তোলা ছবি।

কোথাও বুথের কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে শাসক দলের কর্মীরা শেষ মুহূর্তের নির্দেশ দিচ্ছেন। আবার কোথাও বুথের কাছে শাসক দলের হয়ে পুরসভা এলাকার বাইরে থেকে এসে ভিড় জমিয়েছেন পঞ্চায়েত এলাকার নেতারা। কিন্তু দিনের শেষে তমলুক পুরসভার অধিকাংশ ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সামনে ভোটারদের লম্বা ভিড় ও জেদের কাছে হার মানল বহিরাগতরা। তাই বহিরাগতদের সরানোর জন্য বিরোধীদের চাপের মুখে পড়ে পুলিশ ব্যবস্থা নিল। আবার কোথাও নিজেদের দলের বহিরাগতদের সরাসরি চ্যালেঞ্জ করে বসলেন খোদ শহরের তৃণমূল কর্মীরাই। শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক পুরসভার বিভিন্ন ভোট গ্রহণ কেন্দ্রের চিত্র ছিল এমনটাই।

Advertisement

চলতি বছরের পুরভোটে তৃণমূলের দিকে বিরোধী বামফ্রন্ট, বিজেপি, কংগ্রেসের থেকেও বড় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে নির্দল প্রার্থীরাই। পুরসভার ২০ টি আসনের মধ্যে অন্তত ১৪ টি আসনে তৃণমূলের জয়ে কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় নির্দল প্রার্থীরা। প্রচার পর্ব থেকেই বিরোধী দলের প্রার্থীরা অশনি সঙ্কেত পেয়েছিলেন এ বার ভোট হবে অন্যরকম। পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে পঞ্চায়েত এলাকা থেকে আসা বহিরাগতদের আনাগোনা নিয়ে শহরে গুঞ্জন চলছিলই। পুরভোটের ঠিক আগের দিন শুক্রবার সকালে পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে দুটি গাড়িতে আসা শহরের বাইরের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লক এলাকার একদল তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ঘিরে স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভ শাসক দলের অস্বস্তি বাড়িয়ে দিয়েছিল।

শনিবার সেই অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে একটি ভোট কেন্দ্রের সামনে হলদিয়া থেকে আসা আইএনটিটিইউসি নেতা শ্যামল আদক ও তাঁর সঙ্গীদের ঘিরে তৃণমূলের স্থানীয় কর্মীদের বিক্ষোভ। তমলুক শহরে ভোটের দিনে শাসক দলের বহিরাগতদের আসা নিয়ে আশঙ্কার মধ্যে শনিবার সকাল থেকেই প্রতিটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সামনেই লম্বা ভিড় চোখে পড়ে। ইতিমধ্যে পুরসভার ২, ৩, ৭, ৬, ৮ , ১৭, ১৮, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের বহিরাগতদের আনাগোনা শুরু হয়। বিরোধী প্রার্থীরাও পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে ছুটে যান। ভোট শুরুর মুখে প্রথম ছন্দপতন ঘটে পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ডহরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় বুথে ব্যালট বাক্স বিকল হওয়ায়। প্রায় ৫০ মিনিট অপেক্ষার পর শুরু হয় ফের ভোটগ্রহণ।

Advertisement

পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে আবাসবাড়ি প্রমথ প্রাথমিক বিদ্যালয় বুথের কাছে গিয়ে দেখা যায় বুথের কয়েক হাত দুরেই রাস্তার চেয়ার পেতে তৃণমূলের একদল কর্মী বসে রয়েছেন। কিছু পরে পুলিশ বাহিনী এসে তাড়া করলে ওই কর্মীরা পালিয়ে যান। পুরসভার ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডে বহিরাগতদের ভিড় নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। স্থানীয় এক বিজেপি কর্মী অনুকুল মিশ্র সেখানে এসে বিক্ষোভ শুরু করতেই তৃণমূল কর্মী–সমর্থকরা তাঁর দিকে তেড়ে যান। পরিস্থিতি সামাল দিতে আরও পুলিশ বাহিনী এসে বুথের সামনে থেকে ভিড় হঠিয়ে দেয়।

ভোট চলাকালীন দুপুর আড়াইটা নাগাদ কয়েকজন বহিরাগত পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে চককামিনা প্রাথমিক বিদ্যালয় বুথে এসে গোলামাল পাকানোর চেষ্টা করলে উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাঁদের হটিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বহিরাগতদের রুখে শহরের বাসিন্দারা ভোট দিতে পারায় বিরোধী দলগুলিও তেমন কোন অভিযোগ তোলেনি। অর্থাৎ ভোটের দিনে শেষ পর্যন্ত জিত হল সেই জনতারই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন