উৎসবেও বিষণ্ণ বরগোদা, শ্রীকণ্ঠা

গত কয়েক বছরে পরিচিত বাড়ায় বায়নাও আসছিল ভাল। দলকে আরও আকর্ষণীয় করতে নাচ-গান-যন্ত্রশিল্পী হিসাবে আরও কয়েকজনকে দলে নেন। এক সময়ের ৪-৫ জনের দল এখন ২৫ জনের একটা অর্কেস্ট্রা পার্টি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৮ ০২:৫২
Share:

দুর্ঘটনায় মৃত ছাত্রের নাম সুরজিৎ দাস (১৬)।

জমি জমা বলতে কিছু ছিল না। আয় বলতে যাত্রার দলে যন্ত্রশিল্পী হিসাবে কাজ। কিন্তু তাতে সংসার চালানো ক্রমেই অসম্ভব হয়ে উঠছিল। অনেক ভেবে ঠিক করেন নিজেই একটি অর্কেস্ট্রার দল তৈরি করবেন। ইতিমধ্যে ছেলেকেও ড্রাম সেট বাজানো শিখিয়েছেন। মেয়েও গান শেখায় নেমে পড়েন কাজে। ক্রমে দলে টেনে নেন জামাই অনিন্দ্য দাসকেও। তিনি দলে গিটার বাজাতেন। আস্তে আস্তে এ দিক ওদিক ছোটখাটো অনুষ্ঠান করতে শুরু করেন।

Advertisement

গত কয়েক বছরে পরিচিত বাড়ায় বায়নাও আসছিল ভাল। দলকে আরও আকর্ষণীয় করতে নাচ-গান-যন্ত্রশিল্পী হিসাবে আরও কয়েকজনকে দলে নেন। এক সময়ের ৪-৫ জনের দল এখন ২৫ জনের একটা অর্কেস্ট্রা পার্টি। সারা বছর নানা অনুষ্ঠানে কম বেশি বায়না থাকলেও দুর্গাপুজো থেকে কালীপুজো পর্যন্ত মরসুমেই বায়না থাকত বেশি। তাই এই সময় দম ফেলার সময় থাকত না দেবাশিসবাবু ও তাঁর দলের। বুধবার বিকেলেও তাঁদের অনুষ্ঠান ছিল কোলাঘাটে। সেখান থেকে তাঁরা গিয়েছিলেন হাওড়ার শ্যামপুরে। ঠিক ছিল রাতের এই অনুষ্ঠান সেরে বাড়ি ফিরে সকলে একটু বিশ্রাম নেবেন। কারণ বৃহস্পতিবারই তমলুকের শ্রীরামপুর ও চণ্ডীপুরে অনুষ্ঠানের বায়না রয়েছে।

কিন্তু বুধবার ভোররাতের দুর্ঘটনা শুধু যে অনুষ্ঠানের দিনলিপিটাই ওলটপালট করে দিয়েছে তা নয়, একমাত্র ছেলে-সহ দলের আর এক সদস্যকে হারানোর পর অর্কেস্ট্রা দলের ভবিষ্যৎ কী হবে তা জানেন না দেবাশিসবাবু। দল না থাকলে শুধু তাঁরই নয়, দলের অন্যদের কী হবে তা ভেবে পাচ্ছেন না তিনি। নিজে কিছু না বাজালেও স্বামী ও ছেলে-মেয়ের অর্কেস্ট্রা দলের নিয়মিত সদস্য ছিলেন যমুনা দাস। দুর্ঘটনায় আঘাত পেয়েছেন তিনিও। কিন্তু ছেলের মৃত্যুর পর আর কখনও অর্কেস্ট্রা দলের সঙ্গে থাকবেন কি না তাও জানেন না তিনি। হাসপাতালে ভর্তি মেয়ে শর্মিলাও।

Advertisement

বরগোদা গ্রামে এক চিলতে বাড়িতে দীপাবলি আলো নয়, এনে দিয়েছে অন্ধকার। অনুষ্ঠান থেকে ফেরার সময় অন্য গাড়িতে থাকায় বেঁচে গিয়েছেন দেবাশিসবাবু। এ দিন কান্নাভেজা গলায় বলেন, ‘‘নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য অর্কেস্ট্রা দল গড়েছিলাম। পড়াশোনার ফাঁকে ছেলে সুরজিৎ আমাদের সঙ্গে যেত। যন্ত্রশিল্পী হিসেবে ভালই তৈরি হচ্ছিল। দুর্গাপুজো থেকে সব ভালই চলছিল। কিন্তু বুধবার ভোরে সব শেষ হয়ে গেল। জানি না এর পর কী করব?’’

দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া সুরজিৎদের গাড়ির চালক সজল সুকাইয়ের বাড়িতেও শোকে সকলে বাকশক্তি হারিয়েছেন। ময়নার শ্রীকণ্ঠা গ্রামের বাড়িতে রয়েছেন সজলের বৃদ্ধ বাবা-মা, দাদা-বৌদি। সজলের কাকিমা সবিতা সুকাই জানান, এলাকায় যন্ত্রশিল্পী হিসেবে খুব পরিচিতি ছিল সজলের। কদিন আগেই ওর মা সিঁড়ি থেকে জখম হয়ে বিছানায় শুয়ে। এখনও ছেলের মৃত্যুর খবর তাঁকে জানানো হয়নি।

দুই তরুণ শিল্পীর মৃত্যুতে বিষাদের সুর বরগোদা ও শ্রীকণ্ঠায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন