‘আমি মৃত’, মাইক ফুকে ঘোষণা বৃদ্ধার! অস্বস্তিতে প্রশাসন

জেলাশাসক পি মোহনগাঁধীর নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের এক প্রতিনিধি দল গ্রামবাসীদের সমস্যার কথা শুনতে এসেছিল। সম্প্রতি প্রশাসনকে মানুষের আরও কাছে পৌঁছনোর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কেশপুর শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:২৪
Share:

কেশপুরে ‘দুয়ারে প্রশাসন।’ নিজস্ব চিত্র

মাইক হাতে বৃদ্ধা জানালেন, তিনি মারা গিয়েছেন। তাই সরকারি ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ভরা সভায় বৃদ্ধার অভিযোগ শুনে অস্বস্তিতে জেলাশাসক। বুধবার কেশপুরের ঘটনা।

Advertisement

জেলাশাসক পি মোহনগাঁধীর নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের এক প্রতিনিধি দল গ্রামবাসীদের সমস্যার কথা শুনতে এসেছিল। সম্প্রতি প্রশাসনকে মানুষের আরও কাছে পৌঁছনোর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই জেলায় শুরু কর্মসূচি, ‘আপনার দুয়ারে প্রশাসন’। বুধবার বিকেলে কেশপুরের তেঘরিতে ছিল সেই কর্মসূচি।

সভায় প্রশাসনিক প্রতিনিধি দলের সামনে খাদ্য সুরক্ষার কার্ড না পাওয়া, রাস্তার হাল খারাপ ইত্যাদি নানা বিষয়ে অভিযোগ জানাচ্ছিলেন গ্রামবাসীরা। কিন্তু সব অভিযোগ ছাপিয়ে যায় বিজয়া সিংহ মাইক ধরলে। তিনি বলেন, ‘‘আমি বেঁচে আছি। তা-ও আমাকে সরকারি ভাবে মৃত ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে। ভাতাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’’ অভিযোগ শুনে মঞ্চে উপস্থিত জেলাশাসক, জেলা সভাধিপতি উত্তরা সিংহ, মহকুমাশাসক (সদর) দীননারায়ণ ঘোষেদের পরস্পরের দিকে তাকাতে দেখা যায়। জেলাশাসক অবশ্য আশ্বাস দেন, ‘‘দেখছি ঠিক কী হয়েছে।’’ পরে বিডিও দীপক ঘোষকে তিনি নির্দেশ দেন, ‘‘কী হয়েছে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।’’ বিজয়ার পরে অভিযোগ জানাতে ওঠেন আরেক ‘মৃত’ মেথরি সাঁত। মেথরি বলেন, ‘‘আমাকেও মৃত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ভাতাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’’

Advertisement

ভাতা নিয়ে অন্য অভিযোগও ছিল। মিনতি শী নামে এক মহিলা অভিযোগ করেন, ‘‘৩০ বছর আগে স্বামী মারা গিয়েছে। এখনও বিধবা ভাতা পেলাম না।’’ তাঁর কাতর আর্জি, ‘‘একটু দেখুন যেন ভাতাটা পাই।’’ বিজয়া বার্ধক্য ভাতা এবং মেথরি বিধবা ভাতা পাননি। এদিন এলাকায় চোলাইয়ের রমরমা নিয়েও নালিশ জানান মহিলারা। অনিমা কোটাল বলেন, ‘‘মদের ভাটিগুলো ভেঙে দিন। মদ সব শেষ করে দিচ্ছে। ছেলেরা বাড়িতে মেয়েদের মারধর করছে। ১০-১২ বছরের ছেলেরাও মদ খাচ্ছে। আমরা ভাটি ভাঙতে গেলে বলা হচ্ছে তাদের লাইসেন্স আছে।’’ জেলাশাসকের আশ্বাস, ‘‘দেখছি। ভাটি থাকলে ভাঙা হবে।’’

সম্প্রতি নারায়ণগড়ে বাসিন্দাদের মুখোমুখি হয়েছিলেন জেলাশাসক। সেখানে বাড়ি তৈরির প্রকল্পের টাকা পেতে ঘুষ চাওয়া, শৌচালয় না থাকার অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু তৃণমূলের কাউকে মঞ্চের ধারেকাছে দেখা যায়নি। কেশপুরে মঞ্চে ছিলেন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সঞ্জয় পান। স্থানীয়দের বিভিন্ন নির্দেশও দিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। মঞ্চে উপস্থিতি নিয়ে সঞ্জয় পানের সাফাই, ‘‘এটা আমারই অঞ্চল। আমি এই অঞ্চলেরই বাসিন্দা।’’ মঞ্চে সক্রিয় ছিলেন উপপ্রধান বিকাশ পানও। অর্ধেকেরও বেশি প্রশ্নের উত্তর তিনি নিজেই দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এমনও হয়েছে যে, মাইক হাতে জেলাশাসক প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগেই উপপ্রধান উত্তর দিয়ে দিয়েছেন। জেলাশাসক আর উত্তর দেওয়ার সুযোগ পাননি! জেলাশাসককে এক সময়ে বলতেও শোনা যায়, ‘‘এখানকার উপপ্রধান খুব অ্যাক্টিভ দেখছি।’’ শুনে মুচকি হাসি বিকাশের। চওড়া হাসি তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সঞ্জয়েরও! বিকাশ সম্পর্কে সঞ্জয় পানের কাকা।

কর্মসূচি তখন শেষের দিকে। হাতে মাইক না পেয়ে এক বৃদ্ধা মঞ্চের কাছে চলে গিয়েছিলেন। উপপ্রধান জেলাশাসককে বলেন, ‘‘স্যর, এর কথা শোনার দরকার নেই। মহিলার মাথাটা একটু খারাপ আছে। এমনিতেই উল্টোপাল্টা বকে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন